শনিবার প্রায় একই সময় গাজীপুরের দুটি স্থানে জঙ্গি আস্তানায় র্যাব-পুলিশের অভিযান চলে। একই সময়ে টাঙ্গাইলে র্যাবের আরেক অভিযানে সন্দেহভাজন দুই জঙ্গি নিহত হন।
ভোরে গাজীপুর সিটি করপোরশন এলাকার হারিনালে র্যাবের অভিযানের পর বেলা পৌনে ১১টার দিকে নোয়াগাঁওয়ের আফারখোলা পাতারটেক এলাকার একটি দোতলা বাড়িতে অভিযান শুরু করে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, সঙ্গে ছিল সোয়াট।
বিকালে অভিযান শেষে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ছানোয়ার হোসেন সেখানে সাতজনের মৃত্যুর খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেন।
নিহতদের মধ্যে ‘নব্য জেএমবির’ বর্তমানের শীর্ষ নেতা ‘আকাশ’ রয়েছেন বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানিয়েছেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা নিশ্চিত তামিম চৌধুরীর পরে যে জঙ্গিদের নেতৃত্ব দিত, তার ছদ্মনাম হোক আর টাইটেল নাম হোক, তার নাম আকাশ। সে এখানে নিহত হয়েছে। নিহত এই সাতজনের মধ্যে সে একজন।”
নিহত বাকিদের পরিচয় জানা যায়নি। তাদের বয়স ১৭ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে বলে জানান ছানোয়ার।
ঘটনাস্থল থেকে বেশ কয়েকটি অস্ত্র উদ্ধারের কথাও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযান তদারক করেন।
র্যাব ও পুলিশের দুই অভিযানের খবরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও গাজীপুরে যান। পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোখলেসুর রহমান ও জাবেদ পাটোয়ারীও ছিলেন সেখানে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “এখানে যারা ছিল, সবাই জঙ্গি গ্রুপের সঙ্গে জড়িত। কিছু একটা করার জন্য তারা এখানে ছিল। এদের পরিচয় আমরা পরে জানাব।”
আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান বরখাস্ত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হকের কোনো সন্ধান পাওয়া গেছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “মেজর জিয়া বা লেফটেন্যৗন্ট জিয়া আমাদের কাছে ফ্যাক্টর না। কেউ পার পাবে না। আমরা সব ধরনের প্রচেষ্টা নিচ্ছি।”
যে বাড়িতে পুলিশের অভিযান চলে, তার মালিক সৌদি প্রবাসী সোলেমান সরকারের। তার ভাই কালীগঞ্জ উপজেলার আজমতপুর স্কুল ও কলেজের ইসলাম শিক্ষার শিক্ষক ওসমান গণি বাড়িটি দেখাশোনা করেন।
তিন মাস আগে তার কাছ থেকে তিনজন বাড়িটির দোতলা ভাড়া নেয়। ওই তিনজন জঙ্গি বলে ধারণা পুলিশের।
অভিযান শুরুর আগে ছানোয়ার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “নিউ জেএমবির ঢাকা বিভাগীয় কমান্ডার আকাশ অবস্থান করছেন এমন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হচ্ছে।”
অভিযান শুরুর পর জঙ্গিরা ভেতর থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালাতে শুরু করে বলে জানান কাউন্টার টেররিজমের প্রধান মনিরুল।
তিনি দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, নিচতলায় থাকা বাড়ির সদস্যদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার পর দোতলায় থাকা জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছিল।
“আত্মসমর্পণ করতে বললে জঙ্গিরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দিকে জানালা দিয়ে গুলি করছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও তখন পাল্টা গুলি করছে।”
ঘটনাস্থলে গাজীপুরের পুলিশ সুপার মো. হারুন-অর রশিদও ছিলেন।
জয়দেবপুর থানার ওসি রেজাউল হাসান রেজা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আফারখোলা পাতারটেক এলাকার দোতলা বাড়িটিতে অভিযান শুরুর আগে এর আধা কিলোমিটার পশ্চিমে হারিনাল এলাকার একটি বাড়িতে র্যাব অভিযান চালায়।
ভোরে হারিনাল পশ্চিমপাড়া লেবুবাজার এলাকার আতাউর রহমানের একতলা বাড়িতে পুলিশের সহায়তায় অভিযান শুরু হয় বলে র্যাব-১-এর উপ-অধিনায়ক কাজী মো. সোয়াইব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।
সেখানে দুজন নিহত হওয়ার খবর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেন র্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান।
তিনি বলেন, নিহতদের একজন রাশেদুল (২০) এবং অন্যজন তৌহিদুল ইসলাম (২২) বলে বাড়ির মালিক আতাউর জানিয়েছেন। তৌহিদ ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েটে) শিক্ষার্থী, রাশেদ এবার এইচএসসি পাস করেছে।
ওই বাড়ি থেকে একটি একে-২২ রাইফেল, একটি পিস্তল, রাইফেলের ৭০ রাউন্ড গুলি, কিছু বিস্ফোরক ও একটি ল্যাপটপ উদ্ধারের কথা জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।
র্যাব-১ এর উপ-পরিচালক মহিউল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ভোরে এই জঙ্গি আস্তানায় অভিযান শুরু করা হয়।
গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার পর ঢাকা, নারায়ণগঞ্জে কয়েকটি জঙ্গি আস্তানায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে বেশ কয়েকজন জঙ্গি নিহত হন। এরপর গাজীপুরে এক দিনে দুটি আস্তানায় অভিযান হল, যাতে নিহত হলেন নয়জন।