শোকের ছায়া ফেইসবুকে

সৈয়দ শামসুল হকের মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও শোকের প্রকাশ ঘটিয়েছেন পাঠক-ভক্তরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Sept 2016, 04:44 PM
Updated : 28 Sept 2016, 01:41 PM

মঙ্গলবার বিকালে লেখকের মৃত্যুর খবর প্রকাশের পর থেকেই তাকে নিয়ে স্ট্যাটাস দেন অনেকে; কেউ আপলোড করেছেন কবির ছবি, কেউ শেয়ার করেছেন তার কবিতা।

সব্যসাচী লেখকের দৈহিক মৃত্যু ঘটলেও সৃষ্টিকর্মে তিনি অমর হয়ে থাকবেন বলে মন্তব্য করেছেন অধিকাংশ স্ট্যাটাসদাতা। লেখার মধ্য দিয়ে সৈয়দ হককে খোঁজার কথা বলেছেন তারা।

ফয়সাল মাহাদী নামে একজন লিখেছেন, “ভাল থাকবেন সব্যসাচী সৈয়দ শামসুল হক, নতুন ঠিকানায়। আমরা না হয় খুঁজে নিব তোমায়, তোমারই রেখে যাওয়া রচিত মায়ায়!”

সৈয়দ শামসুল হক ও তার সহধর্মিণী আনোয়ারা সৈয়দ হকের সঙ্গে নিজের দুটি ছবি ফেইসবুকে দিয়ে ইসমাত শিল্পী নামে একজন লিখেছেন, “আশেপাশে কত কথা, কত আলাপন। তার ছিল হাসির ছন্দ। সদা-হাসিময় আনোয়ারা সৈয়দ হক বললেন, ‘ওরা ছবি তুলছে- এমন মুখ ভারি করে আছো কেন? একটু হাসতে হাসতে তোলো, ভাল লাগবে।’ তিনি একটু হাসলেন, কয়েকটা কথা বললেন; ছন্দময়। একটুও তার কাটেনি কথা, হাসিতে, ছন্দে। এখনো নয়।

“তিনি কোথাও হারিয়ে যাননি। তিনি হয়ত মৃত্যুর ছন্দ খুঁজতে গিয়েছেন। কোথাও না কোথাও আছেন, ঠিকই…”

ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন সৈয়দ শামসুল হক। মঙ্গলবার বিকালে সেখানে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। সাহিত্যের সব ক্ষেত্রে সদর্প বিচরণকারী সৈয়দ হকের বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।

তার বিদায়ে লেখক মইনুল আহসান সাবেরের ফেইসবুক স্ট্যাটাসে অভিমানের সুর; “হক ভাই, আমি মৃত মানুষ নিতে পারি না। কাজটা আপনার উচিত হলো!”

নিজের ছবির সামনে দাঁড়ানো সৈয়দ হকের একটি ছবি শেয়ার করে টোকন ঠাকুর লেখেন, “সব্যসাচীর প্রস্তান হল আজ। মন বিষণ্ন, কষ্ট পাচ্ছি।”

হানিফ মজুমদার নামে একজন লেখেন, “রফিক আজাদ, শহীদ কাদরী, সৈয়দ হক… বাংলাদেশ কি কবিশূন্য হতে চললো?”

‘নাগরিক কবিয়াল’র আল মামুন জুয়েল লিখেছেন, “আমার কাছে ওনার মৃত্যু ঘটবে না। আমার কাছে ওনার প্রস্থান নেই। আমার কাছে উনি জীবিত হয়েই থাকবেন.. সমাপ্তি সময়তক।”

সৈয়দ হকের একটি ছবি দিয়ে জমিরুল ইসলাম শরীফ লেখেন, “সাহিত্যে সৃজনীশক্তির শব্দকুশলতার গুণে আপনি শ্রদ্ধেয়, কৃতজ্ঞতাভাজন এবং আত্মসমাহিত। শিল্পজগতে মৃত্যুর পরেও আপনার পদার্পণ অব্যাহত থাকবে হক ভাই। আমরা গর্বিত, কৃতজ্ঞ। ভাল থাকবেন।”

সৈয়দ হক ও তার ‘আনন্দের মৃত্যু’ বইয়ের ছবি আপলোড করে শবরাজ আয়ুব লিখেছেন, “এ স্রেফ চলে যাওয়া, মৃত্যু নয়। আনন্দের মৃত্যু নেই। তিনি আজীবন জেগে থাকবেন আমাদের পরানের গহীন ভেতর।”

শিপ্রা বিশ্বাস লেখেন, “আমার কিশোরীবেলায়, বাসায় রাখা হত দৈনিক সংবাদ। সেখানে আমার প্রধান প্রেম ছিল-হৃৎকলমের টানে। সপ্তাহের একদিন প্রকাশিত হত। সেই একদিনের প্রতীক্ষায় কাটত বাকী দিনগুলো। পড়ার পর কখনও মনে হত- আমিও অমন করে ভাবতে চেয়েছিলাম, কখনও মনে হত এমন শব্দের মালা তিনি কেমন করে গাঁথলেন? অনির্বচনীয় ভাল লাগা। তাঁর উপন্যাস-গল্প-নাটক- কবিতা। শব্দের পর সাজানো শব্দে মুগ্ধতা।”

সৈয়দ হকের ‘সে বড় দারুন বাজি, তারে কই বড় বাজিকর/যে তার রুমাল নাডে পরানের গহীন ভিতর’ কবিতাংশ উল্লেখ করে তিনি লেখেন, “বিদায় বাজিকর, আমাদের পরানের গহীন ভেতর আপনি বেঁচে থাকবেন অনাদিকাল।”

বৃত্ত রায় দীপা লেখেন, “বাংলা সাহিত্যের ‘নূরলদীন’ আর নেই! বিদায় সৈয়দ শামসুল হক। বড়ো অসময়ে চলে গেলেন আপনি!”

আহসান হাবিব নামে একজন প্রয়াত কবির একটি কবিতার কয়েকটি পঙক্তি তুলে দিয়ে লিখেছেন, “কবিতা কখনও শেষ হয় না, তাকে সমাপ্ত করেন কবি। বাংলা সাহিত্যে সৈয়দ হকেরও শেষ হয় না, তাঁকে সমাপ্ত করেন কবির কবি।”

সৈয়দ হকের ছবি আপলোড করে গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক মারুফ রসূল লেখেন, “যতোটা শ্রদ্ধায় অবনত মস্তকে দাঁড়াই আপনার সৃষ্টিকর্মের সামনে, ততোটাই অশ্রদ্ধায় মুখোমুখি হই ব্যক্তি সৈয়দ হকের। এ দুয়ের পার্থক্য বিন্দুতে দাঁড়িয়ে আপনাকে বিদায় সৈয়দ হক। এ স্বীকারোক্তি মৃত্যুর মতোই সহজ, শাশ্বত এবং সুন্দর।”

প্রয়াত কবিকে উৎসর্গ করে একটি কবিতা লিখে শেয়ার করেছেন তরুণ কবি আলীম হায়দার।

“হৃদয়ের দুয়ার খোলো, নয়নের ঢাকনা সরিয়ে ফেলো,

তারপর পরাণের গহীনে ঢুকে একটা রুমাল খোঁজো-

এখনো উড়ছে বলেই সেটা দেখতে পারো

এক মহাজনের ট্রেডমার্ক পতাকা এটা

এই বুকের ভেতর যত্ন করে রাখা আছে বলেই এর মালিক আমি না;”