জঙ্গিদের পাঠানো ভিডিও কাদের কাছে, খোঁজে পুলিশ

কল্যাণপুরে পুলিশ অভিযানের মধ্যে জঙ্গিরা কিছু ছবি ও অডিও-ভিডিও তৈরি করে দেশের কয়েকটি জায়গায় পাঠিয়েছে জানিয়ে পুলিশ বলছে, সেগুলো কাদের কাছে গেছে তা অনুসন্ধানে নেমেছেন তারা।

গোলাম মুজতবা ধ্রুব নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 July 2016, 02:40 PM
Updated : 31 July 2016, 02:48 PM

এ ঘটনা তদন্তের দায়িত্বে থাকা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কল্যাণপুরের আস্তানায় তৈরি করা বেশ কয়েকটি অডিও ও ভিডিও ফুটেজের সন্ধান পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।”

ওই আস্তানা থেকে উদ্ধার মোবাইল, ল্যাপটপসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস পরীক্ষা করে এসব অডিও ও ভিডিও উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

নতুন সদস্য সংগ্রহে জঙ্গিরা এই অডিও-ভিডিও ব্যবহার করতে পারে বলে মনে করছে পুলিশ।

“হয়তবা যাদের মগজ ধোলাই করে নতুন করে জঙ্গি দলে ভেড়ানো হবে মাস্টারমাইন্ডরা এই ভিডিও ও অডিওগুলোকে অনুপ্রেরণা হিসেবে ব্যবহার করতে চেষ্টা করবে,” বলেন মনিরুল ইসলাম।

গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলায় প্রাণহানির প্রেক্ষাপটে সারাদেশে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের মধ্যে গত ২৫ জুলাই মধ্যরাতে কল্যাণপুরে একটি বহুতল ভবনে তল্লাশিতে গিয়ে হামলার মুখে পড়ে পুলিশ। পরে ভোরে সোয়াটের নেতৃত্বে অভিযানে নয় জঙ্গি নিহত এবং আহত অবস্থায় একজন গ্রেপ্তার হয়।

রাত সাড়ে ১২টার দিকে অভিযান শুরুর পর ভোর পর্যন্ত সময়ে জঙ্গিরা সেখানে আইএসের পোশাক (কালো পাঞ্জাবি) পরে জঙ্গি সংগঠনটির পতাকা রেখে ছবি তোলার পাশাপাশি ভিডিও ও অডিও রেকর্ড করে বলে পুলিশের ভাষ্য।

“এরপর তারা কিছু ছবি, অডিও-ভিডিও মোবাইলের মাধ্যমে দেশের কয়েকটি জায়গায় পাঠিয়েছে।”

জঙ্গি তৎপরতায় আশপাশের ‘কোনো দেশের’ গোয়েন্দা সংস্থার কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা আছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান জানিয়েছেন।

পুলিশের এই ইউনিটের এক কর্মকর্তার কাছে থাকা ওই আস্তানার একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন যুবক গোল হয়ে দাঁড়িয়ে কয়েকটি শিক্ষা সনদে আগুন দিচ্ছে। এ সময় একজনকে বলতে শোনা যায়, “এই সব সার্টিফিকেটের কোনো দাম নেই। এই সার্টিফিকেট দিয়ে কেবল চাকর হওয়া যায়।”

এ সময় ‘দাওয়াতুল ইসলাম আল্লাহু আকবর’ স্লোগানও ভেসে আসে। ভিডিওতে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিদের চেহারা দেখা যায়নি। তাদের অধিকাংশের পরনে ছিল প্যান্ট, কারও পায়ে কালো কেডস, কারও স্যান্ডেল। কারও প্যান্ট গোড়ালি থেকে বেশ খানিকটা উপরে। ভিডিওতে এক যুবকের হাতে চাপাতির মতো একটি ধারাল অস্ত্র দেখা যায়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আবদুল মান্নান বলেন, “ওই বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া অডিও ও ভিডিওগুলো উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে অধিকতর পরীক্ষা করে দেখা হবে। সেগুলো সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হবে।”

পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম জানান, নিহত জঙ্গিদের সঙ্গে তাদের স্বজনদের  ডিএনএ মিলিয়ে দেখা হবে। এছাড়া নিহতরা কোনো ধরনের ‘ড্রাগ’ ব্যবহার করেছিল কি না তাও পরীক্ষা করে দেখা হবে।

তিনি বলেন, “নিহতদের লাশগুলো পরিবার বুঝে নিতে চাইছে না। সেগুলো ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে রয়েছে।”

নিহত নয়জনের মধ্যে আটজনের পরিচয় জানতে পেরেছে পুলিশ।

তারা হলেন- ঢাকার গুলশানের আকিফুজ্জামান খান (২৪), বসুন্ধরার সেজাদ রউফ অর্ক (২৪), ধানমণ্ডির তাজ-উল-হক রাশিক (২৫), রংপুরের পীরগাছার রায়হান কবির ওরফে তারেক, সাতক্ষীরার মতিউর রহমান (২৪), দিনাজপুরের আব্দুল্লাহ (২৩), পটুয়াখালীর আবু হাকিম নাইম (২৪) এবং নোয়াখালীর জোবায়ের হোসেন (২২)।

এদের মধ্যে আকিফুজ্জামান বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী মোনায়েম খানের নাতি। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন তিনি। তার সঙ্গে নিহত ঢাকার অন্য দুজন সেজাদ রউফ এবং তাজ-উল-হক রাশিকও বেসরকারি এই বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্র ছিলেন।

প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধান আবদুর রউফের নাতি সেজাদ যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টধারী। গত ফেব্রুয়ারি থেকে নিখোঁজ এই যুবক গুলশানে ক্যাফেতে হামলাকারী নিবরাজ ইসলামের বন্ধু ছিলেন।

আর রায়হান, আব্দুল্লাহ ও নাঈম পড়াশোনা করেছেন মাদ্রাসায়। জোবায়ের ছাত্র শিবিরের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে তার বাবা জানিয়েছেন।

পুলিশ বলছে, রায়হান নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির ঢাকা অঞ্চলের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছিলেন। গুলশান হামলায় অংশ নেওয়া জঙ্গিদের গাইবান্ধার চরে প্রশিক্ষণ দেন তিনি।

গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। পরে সামরিক বাহিনীর অভিযানে নিহত হন নিবরাজসহ পাঁচ হামলাকারী। তাদের লাশও এখনও মর্গে পড়ে আছে।