মুদ্রা পাচার মামলায় নিম্ন আদালতের খালাসের রায় বাতিল করে বিএনপি নেতা তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদণ্ড ও ২০ কোটি টাকার অর্থদণ্ড দিয়েছে হাই কোর্ট।
Published : 21 Jul 2016, 10:59 AM
মুদ্রা পাচার: হাই কোর্টে তারেক-মামুনের রায় বৃহস্পতিবার
বিএনপির শীর্ষ দুই পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পুনর্নির্বাচিত খালেদা-তারেক
সেই সঙ্গে তারেকের বন্ধু ও ব্যবসায়িক অংশীদার গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের সাত বছরের কারাদণ্ডও বহাল রাখা হয়েছে। তবে তাকে বিচারিক আদালতের দেওয়া ৪০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড পরিবর্তন করে ২০ কোটি টাকা করা হয়েছে।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আমির হোসেনের হাই কোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করে।
ঘুষ হিসেবে আদায়ের পর ২০ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে করা এ মামলার রায়ে ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ মো. মোতাহার হোসেন ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর তারেককে বেকসুর খালাস দিয়েছিলেন। আর গিয়াসউদ্দিন আল মামুনকে দেওয়া হয়েছিল সাত বছর কারাদণ্ড এবং ৪০ কোটি টাকা জরিমানা।
খালেদা জিয়ার ছেলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক ২০০৮ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। শেখ হাসিনা হত্যাচেষ্টাসহ দুর্নীতি, রাষ্ট্রদ্রোহ ও মানহানীর অভিযোগে কয়েক ডজন মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
আর গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের বড় ভাই সাবেক এমপি হাফিজ ইব্রাহিম বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য। জরুরি অবস্থার মধ্যে ২০০৭ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে মামুন কারাগারেই আছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোও মুদ্রা পাচারের আরেকটি মামলায় দণ্ডিত হয়েছিলেন। কারাদণ্ডাদেশ মাথায় নিয়ে বিদেশে অবস্থানরত অবস্থায় গতবছর তার মৃত্যু হয়।
হাই কোর্টের রায়কে ‘সরকারের ইচ্ছা পূরণের রায়’ আখ্যায়িত করে তারেকের দল বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, “নিম্ন আদালতে তার (তারেক রহমান) খালাস পাওয়াটা সরকারের সহ্য হয়নি। তাই তারা দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে আপিল করে তাদের ইচ্ছা পূরণের জন্য, তাদের প্রতিহিংসা বাস্তবায়নের জন্য এই কর্মকাণ্ড করেছেন।”
অন্যদিকে রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন,বিচারককে ‘প্রভাবিত করে’ বিএনপি নেতা তারেক নিম্ন আদালতে খালাস পেয়েছিলেন।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এজলাসে আসেন বিচারকরা। তারা আসনগ্রহণের পর ক্রম অনুসারে ১০টা ৩৫ মিনিটে তারেক-মামুনের মামলাটি ওঠে। দশ মিনিটে রায়ের কার্যকরী অংশ (অপারেটিং পার্ট) ও কিছু পর্যবেক্ষণ ঘোষণা করেন বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম।
>> মামুনের আপিল খারিজ করে রায়ে আদালত বলে, ২০০২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ১৩(২) ধারায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে দোষী সাব্যস্ত করে সাত বছরের যে কারাদণ্ড দিয়েছে তা বহাল রাখা হল। তবে জরিমানার আদেশ সংশোধন করে ৪০ কোটির পরিবর্তে ২০ টাকা পরিশোধ করতে হবে।
>> তারেকের খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে দুদকের করা আপিল মঞ্জুর করে রায়ে বলা হয়, বিচারিক আদালত তারেক রহমানকে খালাস দিয়ে যে রায় দিয়েছে তা বাতিল করা হল। ২০০২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ১৩(২) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে সাত বছরের কারাদণ্ড ও ২০ কোটি অর্থদণ্ড দেওয়া হল।
>> ২০০২ সালের এই আইনে সাত বছর কারাদণ্ডই মুদ্রা পাচারের সর্বোচ্চ সাজা। পলতক তারেক রহমান আত্মসমর্পণ করলে বা তাকে গ্রেপ্তার করা গেলে সেই সময় থেকে তার দণ্ড কার্যকর হবে বলে হাই কোর্ট জানিয়েছে।
>> আর রায় কার্যকর করতে হাই কোর্ট তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা জারির নির্দেশ দিয়েছে বিচারিক আদালতকে।
রায় ঘোষণার সময় আদালত কক্ষে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ এ কে এম মনিরুজ্জামান কবীর, সহকারী অ্যটর্নি জেনারেল শহীদুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।
দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।
এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন, সাবেক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিমসহ সরকার সমর্থক আইনজীবীরা আদালত কক্ষে উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ বিএনপি সমর্থক অনেক আইনজীবীকেও দেখা গেছে।
মা খালেদা জিয়ার সঙ্গে তারেক রহমান (ফাইল ছবি)
২০০৫ সালে নোয়াখালীতে বিএনপির এক সমাবেশে তারেক রহমান।
২০০৩ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন পন্থায় ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৮৪৩ টাকা সিঙ্গাপুরের সিটি ব্যাংকে মামুনের হিসাবে পাচার করা হয়। ওই অ্যাকাউন্ট থেকে ৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা তারেক খরচ করেন বলে মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়।
অর্থ পাচারের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় জজ আদালতের রায়ে মামুনকে কারাদণ্ড দেয়া হলেও তারেককে খালাস দিয়ে বলা হয়, ওই টাকা খরচ করার কথা তারেক রহমান অস্বীকার করেননি। ২০০৭ সালে দুদকে দাখিল করা তারেকের হিসাব বিবরণীতে তার উল্লেখ রয়ছে। তিনি যে মানি লন্ডারিং আইনে অপরাধ করেছেন তা প্রমাণ হয়নি।
খালাসের রায় বাতিল করে পর্যবেক্ষণে হাই কোর্ট বলেছে, “দুঃখের সাথে লক্ষ্য করা গেছে, তারেক রহমান সচেতনভাবে ফাইনানশিয়াল ক্রাইমে জড়িয়ে পড়েছেন। তিনি তার রাজনৈতিক উচ্চ শ্রেণির অবস্থান ব্যবহার করে ‘কনসালটেশেন ফি’র (পরামর্শক ফি) নামে তার সহযোগীর (মামুন) মাধ্যমে ডার্টি মানি অর্জন করেছেন। রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে সংঘঠিত এ ধরনের দুর্নীতি সুশাসন, টেকসই উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য হুমকিস্বরূপ।”
আরও ৪ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ
সিঙ্গাপুরের যে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ পাচার ও সেখান থেকে খরচ করার অপরাধে তারেক ও মামুনকে দণ্ড দেওয়া হয়েছে, সেই অ্যাকাউন্টে অর্থ জমাকারী আরও চারজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনকে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে বলেছে হাই কোর্ট।
এই চারজন হলেন- হোসাফ গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন, নির্মাণ কনস্ট্রাকশনের চেয়ারম্যান খাদিজা ইসলাম এবং মায়ার সাইরি ও মেরিনা জামান।
রায়ে হাই কোর্ট বলেছে, “ওই অর্থ পাচার প্রক্রিয়ায় এই চারজন বর্তমানে দণ্ডিতদের (তারেক-মামুন) মানি লন্ডারিং প্রক্রিয়ায় সহায়তা করেছে।এজন্য তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুসারে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে নির্দেশ দেওয়া হল।”
অভিযোগপত্রে বলা হয়, টঙ্গীতে প্রস্তাবিত ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ পাইয়ে দিতে চীনের মেসার্স হারবিন পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির কাছ থেকে ঘুষ নেন গিয়াসউদ্দিন আল মামুন। প্রতিষ্ঠানটির স্থানীয় এজেন্ট নির্মাণ কনস্ট্রাকশন কোম্পানি এর মধ্যে একটি বড় অংশ দেয়।
২০০৩ সালের ১ অগাস্ট নির্মাণ কনস্ট্রাকশন কোম্পানির চেয়ারম্যান বেগম খাদিজা ইসলাম সাড়ে ৭ লাখ মার্কিন ডলার,হোসাফ গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন ২০০৩ সালের ১৬ জানুয়ারি ১১ লাখ ৬৭ হাজার মার্কিন ডলার, ২০০৩ সালের ৫ জুন মায়ার সাইরি ৪ লাখ ২০ হাজার ৫৬৬ মার্কিন ডলার, ২০০৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর মেরিনা জামান ৩০ হাজার মার্কিন ডলার সিঙ্গাপুরের সিটি ব্যাংকে মামুনের অ্যাকাউন্টে (১৫৮০৫২ নম্বর) জমা দেন।
‘অবৈধ সুবিধা’র বিনিময়ে বিভিন্ন ব্যাক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কাছে ওই অর্থ সিঙ্গাপুরে মামুনের অ্যাকাউন্টে ওই অর্থ জমা করা হয় বলে বলা হয় অভিযোগপত্রে।
“অপকৌশলের আশ্রয় নিয়ে তারেক রহমান ওই অর্থ নিজ নামে কোনো ব্যাংক একাউন্ট না খুলে তারই সকল কর্মকাণ্ডের সহযোগী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের একাউন্টে জমা করেন। পরে সাপ্লিমেন্টারি ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে তারেক তা তুলতেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।”
জজ আদালতে রায়ের দিন গিয়াসউদ্দিন আল মামুন।
যে সময় ওই অর্থ সিঙ্গাপুরে পাচার করা হয়, তখন তারেক রহমানের মা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী।
ওই সময় তারেক নিয়ন্ত্রিত হাওয়া ভবন সরকার পরিচালনার ‘দ্বিতীয় কেন্দ্র’ হয়ে উঠেছিল এবং তখন হাওয়া ভবনের ইশারা ছাড়া কোনো কাজ হত না বলে আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ।
রায়ের পর্যাবেক্ষণে আদালত বলে, “রাজনৈতিক ঢাল ব্যবহার করে অবৈধভাবে এভাবে সম্পদ অর্জনের প্রবণতা বাড়ছে। দেশের কল্যাণ ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এখন সময় এসেছে এ ধরনের রাজনৈতিক সহানুভূতি ও পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে হওয়া দুর্নীতি রুখে দেওয়ার।”
রায়ে বলা হয়, “মানি লন্ডারিংয়ের মত অর্থনৈতিক অপরাধে দেশের সব মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারেক রহমান, যিনি অবৈধ উৎস থেকে উপার্জিত বিপুল পরিমাণ টাকা পাচারের জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, সচেতনভাবে তিনি এ অপরাধের সাথে জড়িত ছিলেন। এটি নমনীয় দৃষ্টিতে দেখার দাবি রাখে না।
“যে শক্তি অর্থের উৎস ও অর্জনের উপায় গোপন করে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ দেশের বাইরে পাচারে সম্পৃক্ত থাকে, দেশের চলমান অর্থনৈতিক উন্নতির স্বার্থে তাদের রুখতে যথাযথ শাস্তি প্রদান করা দরকার।”
‘স্তম্ভিত, হতবাক’
রায়ের পর সুপ্রিম কোর্ট চত্ত্বরে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, “আমরা স্তম্ভিত, হতবাক। সমগ্র জাতি হতবাক।”
বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব বলেন, “আজ তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র ও দুদকের কৌঁসুলিরা একাকার হয়ে গেছে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, আপিল বিভাগে ন্যায় বিচার পাব।”
তারেক রহমানের ব্যক্তিগত আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামালের দাবি, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য’ থেকে এ মামলা করা হয়। মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করতে যে উপাদান থাকা দরকার, তা এতে নেই। তারেক রহমানকে ‘রাজনীতি থেকে সরানোর অপকৌশল’ হিসেবে এ মামলা।
গিয়াস উদ্দিন মামুনের পক্ষে আদালতে মামলা পরিচালনাকারী এ আইনজীবী বলেন, “রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি হাতে পাওয়ার পর পর্যালোচনা করে আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
‘কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়’
রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় খুরশীদ আলম খান বলেন, “এ রায়ে প্রমাণিত হল- এ দেশে কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আইন যদি কেউ অমান্য করে, তার বিরুদ্ধে আইন অনুসারে বিচার হবে।”
ঘোষিত রায় থেকে উদ্ধৃত করে এই আইনজীবী বলেন, “হাই কোর্ট বলেছে এখন সময় এসেছে নতুন করে চিন্তা ভাবনা করার। কারণ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা এবং অর্থ পাচার পাশাপাশি। এটা অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। এ জন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে।”
খুরশীদ আলম খান বলেন, অর্থ পাচার আইনে ২০০২ সাল থেকে এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক মামলা পরিচালনা করেছে দুদক। এর মধ্যে এই প্রথম হাই কোর্ট বিভাগে কোনো রায়ে সাজা বহাল থাকল।
২০০৮ সালে লন্ডন যাওয়ার আগে হাসপাতালে তারেকের পাশে খালেদা জিয়া
২০১৫ সালে খালেদা জিয়াকে হিথরো বিমানবন্দর থেকে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যান তারেক রহমান
রায়ের পর আদালত প্রাঙ্গণে আসামিপক্ষের আইনজীবী হিসেবে জয়নুল আবেদীন বলেন, “আমরা মনে করি, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যে রায় হয়েছে সেটা যথাযথ হয়নি এবং তিনি ন্যায় বিচার পাননি। কারণ তিনি জড়িত ছিলেন না। মক্কেলের সাথে আলোচনা করে পূর্ণাঙ্গ রায় পেয়ে বিচার বিশ্লেষণ করব।”
তবে নিয়ম অনুযায়ী আপিল করতে হলে তারেককে আত্মসমর্পণ করতে হবে বলে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
তিনি বলেন, “উনি আপিল করতে পারবেন, যদি সারেন্ডার (আত্মসমর্পণ) করে জেলে যান। সেটা ৩০ দিনের মধ্যে করতে হবে।”
আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও বলেছেন, “লন্ডনে বসে আপিল হবে না। আমরা যদি উনাকে ধরে আনতে পারি, অথবা তিনি যদি এসে আত্মসমর্পণ করেন, তাহলে আপিল করতে পারবেন।”
যুক্তরাজ্য থেকে তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনার সুযোগ কতটা জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, “তারেক রহমানের এতোদিনে কোনো মামলায় সাজা ছিল না। এ কারণে এতোদিন সেভাবে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়নি। এখন করা হবে।”
তবে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দিবিনিময় চুক্তি নেই জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “ইন্টারপোলের মাধ্যমে গেলে ফিরিয়ে আনতে পারার সম্ভাবনা আছে। চুক্তি করেও যদি আনতে হয়, তাহলে আমরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে চুক্তি করার চেষ্টা করব।”
২০০৪ সালে ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় হুলিয়া জারির পর তারেকের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা হয়েছিল। তবে পরে ইন্টারপোল তা সরিয়ে নেয়।
মামলা বৃত্তান্ত
# ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থানায় ২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর দায়ের করা এ মামলায় তারেক-মামুনের বিচার শুরু হয় ২০১১ সালের ৬ জুলাই।
# ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ মো. মোতাহার হোসেন ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
# তারেকের খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে দুদক ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর আপিলের আবেদন করে। শুনানি শেষে ২০১৪ সালের ১৯ জানুয়ারি হাই কোর্ট দুদকের আপিল গ্রহণ করে আসামি তারেককে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেয়।
# লন্ডনপ্রবাসী তারেক না ফেরায় তার বিরুদ্ধে সমন জারি করে তা তার লন্ডনের ঠিকানায় পাঠানো হয়। কিন্তু তাতেও খালেদা জিয়ার বড় ছেলের সাড়া মেলেনি।
# দুদকের করা ওই আপিলের সঙ্গে সাজার রায়ের বিরুদ্ধে মামুনের করা আপিলও শুনানির জন্য তালিকায় আসে। এরপর হাই কোর্টে ৪ মে আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়ে শেষ হয় ১৬ জুন।
# মামলাটি দায়ের থেকে শুরু করে পুরো বিচার প্রক্রিয়ার সময় তারেক রহমান ‘পলাতক’ থাকায় তার পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না বলে খুরশীদ আলম খান জানান।