হলি আর্টিজান ক্যাফেতে শুক্রবার যে ১৭ জন বিদেশি নিহত হয়েছেন তাদের নয়জন ইতালির এবং সাতজন জাপানের নাগরিক।
নিহত ইতালীয়রা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। আর জাপানিদের ছয়জনই ঢাকার মেট্রোরেল প্রকল্পে কাজ করছিলেন।
এভাবে তাদের প্রাণহানি বাংলাদেশের উন্নয়ন ও ব্যবসা-বাণিজ্যে বিদেশি সহযোগীদের ওপর প্রভাব ফেলবে কি না তা নিয়ে জনমনে শঙ্কার মধ্যে মঙ্গলবার সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে দুই দেশের প্রতিমন্ত্রীর আশ্বাসের কথা জানান শাহরিয়ার।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমি শুধু বিদেশি বন্ধুরা যারা ঘটনার পরে যোগাযোগ করেছেন এবং সফর করেছেন তাদের বিষয়ে ওয়াকিবহাল করছি।”
সোমবার আর্মি স্টেডিয়ামে নিহতদের শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সেইজি কিহারা। আর মঙ্গলবার সকালে ঢাকা এসে নিহত নাগরিকদের মৃতদেহ নিয়ে দেশে ফিরেছেন ইতালির পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মারিও জাইরো। মাঝে ঘটনাস্থল গুলশানের হলি আর্টিজানও পরিদর্শন করেছেন তিনি।
তিনি বলেন, “শোক ও শ্রদ্ধা জানানোর সময় জাপানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সার্বক্ষণিক উপস্থিত ছিলাম। আমি তাকে বলেছি, জাপান বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতীম ও নির্ভরশীল রাষ্ট্র। বাংলাদেশের জনগণ জাপানের জনগণকে সব সময় উপকারী বন্ধু হিসেবে পেয়েছে। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় জাপানের অবদানকে বাংলাদেশ কখনোই ভোলেনি।”
প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের আমন্ত্রণে গত ২৬-২৯ মে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরের কথাও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।
বাংলাদেশের ভৌত অবকাঠামো, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, শিল্প প্রভৃতি ক্ষেত্রে তার দেশের সহযোগিতার নতুন নতুন ক্ষেত্র উন্মোচনের কথাও জাপানি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে মনে করিয়ে দেন তিনি।
“আমি আরও বলেছি, যখন বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্কে একটি নবযুগের সূচনা ঘটতে চলেছে, ঠিক সেই সময়ে সন্ত্রাসের কাছে আমরা আত্মসমর্পণ করতে পারি না। সন্ত্রাসী ঘটনা মোকাবেলায় আইন শৃঙ্খলাবাহিনীসহ দেশের নিরীহ জনগণ নিহত-আহত হয়েছেন। আমাদের সংহতি মানবতার প্রতি, সুশাসনের প্রতি, উন্নয়নের প্রতি।”
প্রতিক্রিয়ায় জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সন্ত্রাস মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘সাহসী’ নেতৃত্বের প্রশংসা করেন বলে জানান শাহরিয়ার।
“জাপানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, হলি আর্টিজানের সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় বাংলাদেশ-জাপানের নাগরিকদের রক্ত এক হয়ে মিশে আছে। নিরাপরাধ নাগরিকের আত্মত্যাগ দুই দেশের সম্পর্ক আরও গভীর বন্ধনে আবদ্ধ করবে। তিনি আমাকে আরও নিশ্চিত করেন, জাপানের বাংলাদেশি উন্নয়ন কার্যক্রম অতীতের মতো অব্যাহত থাকবে।”
এসময় জাইকার জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্টও উপস্থিত ছিলেন বলে জানান প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার।
মঙ্গলবার সকালে টোকিওতে মরদেহবাহী বিমান পৌঁছালে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অন্যদের শ্রদ্ধা নিবেদনের কাতারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতও উপস্থিত ছিলেন।
ইতালির পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সফরের বিষয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, “মঙ্গলবার সকালে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি এবং তার সঙ্গে বৈঠক করি। এ বৈঠকে ইতালির মন্ত্রী পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর সময়োচিত বিচক্ষণ দিকনির্দেশনা ও নিহতদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদনের বিষয়ে প্রশংসা করেন।
“তিনি বলেছেন, এ ঘটনা দুই দেশের সম্পর্ককে জোরদার করবে। কেননা সন্ত্রাসবাদ দুই দেশের সম্পর্কে কখনো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। এ ঘটনা দুই দেশকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে অনুপ্রেরণা জোগাবে।
শান্তিপ্রিয় ও বিদেশিদের প্রতি অতিথিপরায়ন বাংলাদেশে এ ঘটনা পুরো দেশবাসীকে স্তম্ভিত ও শোকাভিভূত করেছে বলে ইতালীর প্রতিমন্ত্রীকে জানান শাহরিয়ার।
ইতালির সরকার ও জনগণের জন্য এটা একটি ‘কঠিন সময়’ মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সব স্তরের মানুষের এ ধরনের বর্বরোচিত ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি থেকে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে বাংলাদেশ ‘সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিচ্ছে’ বলেও উল্লেখ করে শাহরিয়ার আলম।
ইতালির পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এ ধরনের সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা ও মৌলবাদ ঠেকাতে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অভিন্ন কৌশল প্রণয়নের তাগিদ দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
বর্তমানে ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া ও স্যাটেলাইটের কারণে সন্ত্রাসবাদ ও মৌলবাদ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলেও সতর্ক করেছেন তিনি।
“আমি তাকে জানাই, সন্ত্রাসবাদ বিশ্বব্যাপী অন্যতম সমস্যা। বাংলাদেশে এই প্রথম এ ধরনের ঘটনা হল। এর আকস্মিকতা কাটিয়ে উঠে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তা কার্যকরভাবে মোকাবেলার চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে যে কোনো আন্তর্জাতিক সহযোগিতাকে বাংলাদেশ স্বাগত জানাতে প্রস্তুত রয়েছে,” বলেন শাহরিয়ার।