আলোচনায় অভিযোগ খাটো হয়ে যাচ্ছে: ইনু

প্রধানমন্ত্রীপুত্রকে অপহরণ চক্রান্তের মামলায় শফিক রেহমানের গ্রেপ্তারের ঘটনা নিয়ে নানামুখী আলোচনার মধ্যে ‘মূল অভিযোগ খাটো’ করে দেখা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 April 2016, 12:10 PM
Updated : 19 April 2016, 02:13 PM

তিনি বলেছেন, “গত দুদিন আগে শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এটা নিয়ে আলোচনার ঝড় বইছে। কিন্তু যে অভিযোগে শফিক রেহমান সাহেবের মতো নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেটি খাটো করা হচ্ছে।”

মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় নিয়ে এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন মন্ত্রী।

যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী জয়ের ব্যক্তিগত তথ্য পেতে ওই দেশে থাকা এক বিএনপি নেতার ছেলে রিজভী আহমেদ সিজার এফবিআইর এক কর্মকর্তাকে ঘুষ দিয়েছিলেন বলে দেশটির আদালতে প্রমাণিত হয়।

গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের দেওয়া ওই রায়ে বলা হয়, ঘুষ দিয়ে তথ্য পাওয়ার পর সিজার তা বাংলাদেশি ‘একজন সাংবাদিককে’ তা সরবরাহ করেছিলেন, বিনিময়ে ‘প্রায় ৩০ হাজার ডলার’ পেয়েছিলেন।

ওই রায়ের পর জয়কে অপহরণের চক্রান্তের অভিযোগ তুলে ঢাকার পল্টন থানায় পুলিশ মামলা করে, যাতে সিজারের বাবা প্রবাসী বিএনপি নেতা মেহম্মদ উল্লাহ মামুনসহ দলটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে আসামি করা হয়। সেই মামলাতেই শনিবার গ্রেপ্তার হন সাংবাদিক শফিক রেহমান।

দৈনিক আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কারাবন্দি মাহমুদুর রহমানকেও ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেছে পুলিশ। ‘চক্রান্তকারীদের সঙ্গে’ শফিক রেহমানসহ দুই-তিনজনের ‘যোগাযোগ ছিল’ বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের আলোচনা সভায় তথ্যমন্ত্রী ইনু বলেন, “একটা ষড়যন্ত্র হয়েছে। সেটার তদন্ত হয়েছে। তখন বলা হচ্ছে এমন নেতারা অপরাধী হতে পারেন না। গণতন্ত্রকে ঘায়েল করা হচ্ছে। হয়রানি করা হচ্ছে। ভিন্নমত দমন করা হচ্ছে। গণতন্ত্র সঙ্কোচন করা হচ্ছে।

“প্রশ্ন হচ্ছে, গণতন্ত্রে এ ধরনের মানুষের জায়গা দেবেন কি দেবেন না। শেখ হাসিনার সরকার পরিষ্কার বলেছে, গণতন্ত্রে থাকলে কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যই আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধীদের বিচার করছি।”

গণতন্ত্রের স্বার্থেই ‘ক্যান্টনমেন্টকে কসাইখানা বানানোর নির্দেশদাতা’ সাবেক সামরিক শাসক জিয়উর রহমান এবং ‘আগুন সন্ত্রাসের নির্দেশদাতা’ খালেদা জিয়ার বিচার করতে হবে মন্তব্য করে ইনু বলেন, “এটা গণতন্ত্র সঙ্কোচন নয়, ভিন্নমত দমন করা নয়।” 

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত অনুষ্ঠানে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর চালানো তাণ্ডবের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করার জন্য কমিশন গঠনের দাবি জানান। প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম এ ব্যাপারে সংসদীয় কমিশন গঠনেরও দাবি জানান।

চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকেটে ‘জামায়াত নেতারাও’ নির্বাচিত হচ্ছেন বলে দাবি করেন রানা দাশগুপ্ত।

“জামায়াত সরকারি দলের লেবাসে ঢুকে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর কোট পরে ইউনিয়নে নির্বাচিত হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামায়াতের বিচার নিয়ে সরকারের নীরাবতায় বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে।... এটাকে গুরুত্বের সাথে ভাবা দরকার।”

নেদারল্যান্ডসের হেগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে সাবেক সার্ব নেতা রাদোভান কারাদজিচের বিচার ও বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ নিয়ে ওই আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান।

অন্যদের মধ্যে সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।