হাই কোর্ট বিভাগের এক বিচারকের অপসারণের সিদ্ধান্ত বহাল রেখে আপিল বিভাগের দেওয়া রায়ে বিচারপতিদের জন্য ৪০ দফা আচরণবিধি ঠিক করে দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।
Published : 04 Apr 2016, 12:36 AM
পেশাগত অসদাচরণের কারণে হাই কোর্টের অতিরিক্ত বিচারক সৈয়দ শাহিদুর রহমানকে অপসারণের সিদ্ধান্ত বহাল রেখে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিচারকদের আচরণবিধি বিষয়ে ৪০ দফা উল্লেখ করা হয়েছে।
হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে এক আইনজীবীর করা আপিল মঞ্জুর করে গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগ রায় ঘোষণা করছিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
সম্প্রতি ১০৩ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েব সাইটে প্রকাশিত হয়েছে।
যে বিচারককে নিয়ে ৪০ দফা আচরণবিধি আপিল বিভাগের কাছ থেকে এসেছে, সেই সৈয়দ শাহিদুর রহমান ২০০৩ সালের এপ্রিলে হাই কোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন।
৪০ দফার কয়েকটি আচরণবিধি
রায়ের সমাপনীতে আপিল বিভাগ বলেছে, একজন বিচারক উচ্চ মানের আচার প্রতিষ্ঠা, প্রয়োগ ও রক্ষণে অংশ নেবেন এবং ব্যক্তিগতভাবে এই মান মেনে চলবেন, যাতে বিচার বিভাগের ন্যায়পরায়ণতা এবং স্বাধীনতা বজায় থাকে
একজন বিচারককে সংবিধান ও আইন মানতে হবে। সর্বদা এমন কাজ করবেন যাতে বিচার বিভাগের উপর মানুষের আস্থা বাড়ে। পরিবার, সামাজিক গণ্ডি বা অন্য কোনো সম্পর্কের কাউকে রায় বা বিচারিক আচরণ প্রভাবিত করতে দেবেন না।
একজন বিচারককে আইনের প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে হবে এবং পেশাগত পারদর্শিতা দেখাতে হবে। তিনি দলীয় স্বার্থ, জন বিক্ষোভ, সমালোচনার ভয়ে প্রভাবিত হবেন না।
রায়ে বলা হয়, বিচারপ্রার্থী মানুষ ও আইনজীবীসহ পেশাগত কাজে যাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়, তাদের প্রতি একজন বিচারককে ধৈর্যশীল, মহৎ, শ্রদ্ধাশীল এবং শিষ্ট থাকতে হবে। কোনো মামলার সারবত্তা নিয়ে বিচারক জনসম্মুখে কোনো মন্তব্য করবেন না।
যৌক্তিকভাবে বিচারকের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে, এমন শুনানিতে অংশ নেওয়ায় বিচারক অনুপযুক্ত হবেন। কোনো বিষয়ে আইনজীবী হিসাবে কাজ করে থাকলে সেটির শুনানি গ্রহণে বিচারক অনুপযুক্ত হবেন, অথবা এমন আইনজীবীর মামলা যার সঙ্গে ওই বিষয়ে বিচারক কাজ করেছিলেন বা এমন মামলা যেটাতে ওই বিচারক বা (সহকর্মী) আইনজীবী সাক্ষী হয়েছিলেন।
একজন বিচারক প্রকাশ্য বিতর্কে অংশ নেবেন না। রাজনৈতিক বা বিচারাধীন বিষয়ে জনসম্মুখে মত প্রকাশ করবেন না। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে একজন বিচারক ব্যবসা-বাণিজ্যে যুক্ত হবেন না। দেশে বা দেশের বাইরে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়া চলবে না।
প্রধান বিচারপতি চাইলে একজন বিচারক তার সম্পদ ও দায় প্রকাশ করবেন। ন্যায়বিচার করলেই হবে না, সেটা ন্যায়বিচার হিসাবে দৃশ্যমান হতে হবে। সর্বোচ্চ আদালতের সদস্যদের আচার-ব্যবহারে বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতায় জনআস্থা শক্ত করতে হবে। বিচারক ব্যক্তিগত বা পেশাগতভাবে এই বিশ্বাসযোগ্যতা হানিকর কোনো কাজ এড়িয়ে যাবেন।
আইনজীবী সমিতির সদস্যদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক পরিহার করবেন। পরিবারের সদস্য বা অন্য নিকটাত্মীয়দের কেউ আইনজীবী হলে বা তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয় হলে সে বিষয়ে তাদেরকে নিজ আদালতে আসতে অনুমোদন দেবেন না।
যে বাড়িতে বিচারক বাস করেন, সেটাকে পরিবারের কোনো আইনজীবী সদস্য পেশাগত কাজে ব্যবহার করতে পারবেন না। পরিবারের সদস্যদের সংশ্লিষ্ট কোনো মামলার শুনানি করতে পারবেন না। একজন বিচারক রায় নিয়েও গণমাধ্যমে বক্তব্য দেবেন না।
বিচারিক দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কোনো কাজ করেছেন, করবেন বা বাদ দিয়েছেন-এমন কারও থেকে একজন বিচারক বা তার পরিবারের কোনো সদস্য বা তার কর্তৃত্বে থাকা কেউ কোনো উপহার, ঋণ, সুবিধা চাইতে বা গ্রহণ করবেন না।
সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এর আগে ২০০০ সালের ৭ মে তখনকার প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমান ১৪ দফা আচরণবিধি ঠিক করে দিয়েছিলেন।