
সংরক্ষিত শুধু লেখায়, বসতে গেলেই বিপত্তি
ফয়সাল আতিক, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 13 Mar 2016 09:44 AM BdST Updated: 13 Mar 2016 10:32 AM BdST
বাস সংকটের এই ঢাকায় ভিড় ঠেলে গাড়িতে উঠতে পারলেও অনেক সময়ই নিজেদের জন্য সংরক্ষিত আসনগুলো থেকে বঞ্চিত হন নারীরা; অধিকার চাইলে জড়াতে হয় বিতণ্ডায়। কখনও কখনও কটূ কথার পাশাপাশি বাঁকা দৃষ্টিতে বিদ্ধ হয়ে নিরস্ত হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।
আইন ও নীতিমালায় স্পষ্টতা না থাকায় যুগের পর যুগ গণপরিবহনে সংরক্ষিত আসনের সুবিধা পেতে নারীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ নারী ও যাত্রী অধিকারকর্মীদের।
ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে চলাচলকারী পরিবহনগুলোতে নির্দিষ্ট কিছু আসন নারী/শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ থাকে। ৩২ সিটের বাসে চারটি আর বড় বাসগুলোতে ৯টি থেকে ১২টি পর্যন্ত আসন তাদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়।
তবে অনেক সময়ই নারীদের আসন ফাঁকা পেয়ে বসে পড়েন পুরুষ যাত্রী। পরে নারী যাত্রী আসার পর সেই আসন ছাড়তে চান না। কারণ হিসাবে সাধারণ (সবার জন্য) আসনে নারী যাত্রীদের বসে থাকার বিষয়টি। এ নিয়ে কথা বলতে গেলে কখনও কখনও জোটবদ্ধ পুরুষের সম্মিলিত তীর্যক বাক্যবাণের মুখোমুখি হতে হয় নারীকে।

“আবার সাধারণ আসনে বসলে অনেকে বলেন, এখানে বসেছেন কেন? মহিলা আসনে গিয়ে বসেন।”
বাসে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন আরও কয়েকটি বাড়িয়ে তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিতে পদক্ষেপের দাবি জানান তিনি।
সংরক্ষিত আসনে নারীর বসা নিয়ে ঝগড়া-বিবাদের বিপরীত চিত্রও চোখে পড়ে- অনেক পুরুষ যাত্রী নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনে বসলেও মহিলাদের উপস্থিতি দেখে আসন ছেড়ে দেন।
একদিন বাসে
১২ মার্চ রাত সোয়া ৯টা।
আজিমপুর থেকে ছেড়ে আসা এফডিসি-মহাখালী-গুলশান-বাড্ডা হয়ে কুড়িলগামী উইনার পরিবহন
নারীদের আসন দখল করে বসে থাকা পুরুষদের উঠে যাওয়ার অনুরোধ করা হলে শুরু হয় বিতণ্ডা। তবে চালক ও তার সহকারীরা পুরো বিষয়ে টু শব্দটি করলেন না।
>> সিটগুলো মহিলাদের জন্য নয়, প্রতিবন্ধীদের জন্য, তার মানে আপনার মহিলারা প্রতিবন্ধী? — প্রশ্ন এক পুরুষযাত্রীর।
>> ওই সিট মহিলাদের জন্য, কিন্তু ইয়াং মহিলাদের জন্য নয়- নারীদের জন্য নির্ধারিত আসনে এক পুরুষ যাত্রীর দাবি
>> অগ্রাধিকার, সমান অধিকার, নাকি সৌজন্য? কোনটা চায় মেয়েরা? - প্রশ্ন করেন এক পুরুষ যাত্রী।
>> বিতর্কের এক পর্যায়ে এক নারী সমস্যার ব্যাপকতা বোঝানোর চেষ্টা করেন- “আমরা পুরুষের মতো দাঁড়িয়ে থেকে হাত উচিয়ে বাসের রড ধরবো কীভাবে?”
>> কয়েকজন পুরুষকে দেখা গেল পুরো বিষয়টি নিয়ে হাসাহাসি করছেন।
>> এক পর্যায়ে নারী যাত্রীদের একজন সৌজন্য বজায় রেখে কথা বলতে অনুরোধ করেন।
>> নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন নিয়ে এক পুরুষ যাত্রীর আক্ষেপ, “প্রতিদিন দুইবার করে এই বাসে আপডাউন করি, ব্যাপারগুলো আমাদের খুব লাগে, আমরা সাফার করি।”
>> “শেষ তো, সবাই চুপ করেন। কথা বললে কথা বাড়বে,” সমাধান দেন আরেকজন।
গণপরিবহনের সংরক্ষিত আসন পেতে নারীর বিড়ম্বনার জন্য সরকারের ‘উদাসীনতাকে’ দায়ী করেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক।
কারণ হিসেবে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বিষয়টি এখনও কেবল মৌখিক ঘোষণার মধ্যে রয়ে গেছে। প্রজ্ঞাপন জারি করলে এই সমস্যা অনেকাংশে সমাধান হয়ে যেত।
“কাগজপত্রে কিছু নেই, সব কিছু মুখে মুখে।”

এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, সম্প্রতি এক হিসাবে দেখা গেছে- মোট কর্মজীবীদের ১৮ শতাংশই নারী। শহরে এই সংখ্যাটি ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ হতে পারে।
“তাদের যাতায়াতের ব্যবস্থা নির্বিঘ্ন করতে হবে। অন্যথায় যাত্রাপথে হেনস্থার শিকার হয়ে অনেকেই কর্মক্ষেত্রের প্রতি আগ্রহ হারাবেন।”
নারী অধিকার কর্মী খুশি কবির বলেন, বাসে পুরুষদের সঙ্গে ঠাসাঠাসি করে বসা নারীদের জন্য অস্বস্তিকর।
“আমাদের দেশে এখনও নারী-পুরুষ একসাথে বসার সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। সে কারণেই নারীদের জন্য আলাদা কিছু সিট বরাদ্দ করা হয়েছে। বিদেশেও গর্ভবতী নারী, প্রতিবন্ধী ও অন্যান্য সমস্যায় থাকা নাগরিকদের জন্য পৃথক আসনের নিয়ম দেখেছি। কিন্তু বাংলাদেশের নারীর আসনের নিয়মটি খুব কমই পালন করা হয়। ফলে নারীরা এর সুবিধা ভোগ করতে পারেন না।”
গণপরিবহনে বিষয়টি মেনে চলা নিশ্চিত করতে আইনি বাধ্যবাধকতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, “নিয়ম যদি থাকে যে তা না মানলে তিরস্কার কিংবা অন্য কোনো শাস্তি থাকবে তাহলে সমস্যা থেকে উত্তরণ হতে পারে। অন্যথায় নিজ থেকে এই উদ্যোগটি বাস্তবায়িত হয়ে যাবে এমনটি ভাবার কারণ নেই্।”

তবে বাসে সংরক্ষিত এসব আসন নিয়ে পুরুষদের সঙ্গে মাঝে মধ্যে নারী যাত্রীদের বাগবিতণ্ডা হওয়ার কথা স্বীকার করেন তিনি।
“এটা আসলে আমাদের মানসিক অবস্থার বিষয়। নারীদের সম্মান দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা কতটুকু অগ্রসর হতে পারলাম বিষয়টি তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট,” বলেন তিনি।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএর অন্যতম পরিচালক নুরুল ইসলাম বলেন, নগর পরিবহনে নারীদের জন্য আসন বরাদ্দের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। বাসগুলোতে নারীদের জন্য আসন নির্ধারিত আছে কি না বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত তা তদারকি করে।
“এরপরে কেউ নারী আসন নিয়ে ঝামেলা করলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে।”
আরও পড়ুন
WARNING:
Any unauthorised use or reproduction of bdnews24.com content for commercial purposes is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action.
- কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির সঙ্গে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির প্রতিনিধিদের
- মিয়ানমারের বিচারে সব সহায়তার ঘোষণা নেদারল্যান্ডস-কানাডার
- পুলিশে ২২ ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজিকে বদলি
- শিশুদের জন্য তিন টিভিতে ‘এক মিনিট’
- ঢাবির সমাবর্তনে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কাজ করার আহ্বান
- ইসলামাবাদে বাংলাদেশ চ্যান্সারি কমপ্লেক্সের ব্যয় বাড়ছে
- এস এ গেমসে সোনাজয়ী ক্রিকেটারদের প্রধানমন্ত্রীর ফোন
সর্বাধিক পঠিত
- এসএ গেমস: দাপুটে জয়ে সোনা জিতল ছেলেরা
- ইলিয়াস কাঞ্চনের ‘মুখোশ’ খুলবেন শাজাহান খান
- ক্যারিবিয়ান ঝড়ে উড়ে গেল ভারত
- হাকিমপুরী জর্দা বাজার থেকে তুলে নেওয়ার নির্দেশ
- পর্দা উঠল বঙ্গবন্ধু বিপিএলের
- বৈশ্বিক ক্রীড়া আসরে ৪ বছর নিষিদ্ধ রাশিয়া
- ‘ধর্ষণের শিকার মেয়েকে চুপ থাকতে বলেছিলেন’ অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী
- ১৯ সোনায় নতুন চূড়ায় বাংলাদেশ
- ইন্টারনেট থেকে মিথিলা-ফাহমির ছবি সরানোর নির্দেশ
- চলে গেলেন অভিজিতের বাবা অজয় রায়