রাজনৈতিক দলের আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রকাশে ‘বাধা নেই’

যে কোনো ব্যক্তি কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন দলের সম্মতি ছাড়াই তা প্রকাশ করতে পারবে বলে রায় দিয়েছে হাই কোর্ট।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Feb 2016, 07:54 AM
Updated : 18 Feb 2016, 08:12 AM

ছয় নাগরিকের করা এক রিট আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ রায় দেয়।

রিট আবেদনকারীদের অন্যতম আইনজীবী ড. শরীফ ভুইয়া বলেন, এই রায়ের ফলে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব পাওয়ার পথ প্রশস্ত হলো।

আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ড. শরীফ ভুইয়া ও ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমাতুল করীম ও নির্বাচন কমিশনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম।

মামলার বিবরণে জানা যায়, নিবন্ধন বিধিমালা অনুসারে রাজনৈতিক দলগুলো বার্ষিক আয়-ব্যায়ের হিসাব নির্বাচন কমিশনের কাছে দাখিল করে থাকে। এই হিসাবের প্রতিবেদন চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ২০১৩ সালে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেন।

কমিশন রাজনৈতিক দলের সম্মতি ছাড়া আয়-ব্যয়ের হিসাবের অনুলিপি দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলে তিনি তথ্য কমিশনে অভিযোগ দাখিল করেন। এ নিয়ে একাধিবার নির্বাচন কমিশন ও তথ্য কমিশনে আবেদন করলেও তা নাকচ করা হয়।

তৃতীয় বারের মতো বিফল হয়ে ২০১৪ সালে ১ জুন তথ্য কমিশনে অভিযোগ করেন বদিউল আলম মজুমদার।

তবে আগের সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে জানিয়ে ওই বছরের ১৬ জুলাই তথ্য কমিশন জানায়, তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ এর ৯ (৮) অনুসারে তৃতীয় পক্ষের (রাজনৈতিক দল) কোনো গোপনীয় তথ্য তার মতামত ও সম্মতি ছাড়া অনুরোধকারীকে (আবেদনকারী) প্রদান না করার বিধান রয়েছে।

এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বদিউল আলম মজুমদার, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান, এ এস এম শাহজাহান, কলামনিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন।

প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ২৮ জানুয়ারি হাই কোর্ট রুল দেয়।

রুলে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর দাখিল করা বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব সংক্রান্ত প্রতিবেদন তাদের সম্মতি ছাড়া প্রদান না করার সিদ্ধান্ত কেন আইনগত কর্তৃত্ব-বহির্ভূত বলে ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়।

চার সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচন কমিশন ও তথ্য কমিশনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।এ রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার আদালত রুল মঞ্জুর (অ্যাবসিলিউট) করে রায় ঘোষণা করে।

এই রায়কে ‘যুগান্তকারী’ অভিহিত করে বদিউল আলম মজুমদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এর ফলে নাগরিকদের তথ্য পাওয়ার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলো। সংবাদকর্মী ও নাগরিকদের জন্য তথ্যপ্রবাহ উন্মুক্ত হল।”