“আমরা এটা তালিকা রিভিউ করব; তারপর টাকা ছাড় দেওয়া হবে”, গত ৬ অক্টোবর বলেছিলেন সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা।
Published : 01 Feb 2025, 08:49 AM
সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় ভাতা পাওয়া ব্যক্তিদের তালিকায় যে ত্রুটি ধরা পড়েছে, তা ঠিকঠাক না করেই দ্বিতীয় কিস্তির (ডিসেম্বর) অর্থ ছাড় করেছে সমাজসেবা অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের ভাষ্য, তালিকা যাচাইয়ের আগে ভাতা ছাড় করা যাবে না, এমন নির্দেশনা তারা পাননি। ফলে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত অর্থ ছাড় দেওয়া হয়েছে এবং তা উপকারভোগীদের হাতেও চলে গেছে।
দেশে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় উপকারভোগীর সংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখ। এদের মধ্যে বয়স্ক ও বিধবারা মাসে ভাতা পান ৫৫০ টাকা। প্রতিবন্ধীরা পান ৮৫০ টাকা।
সামাজিক সুরক্ষা খাতের অধীনে এই অর্থ দেওয়া হয়। চলতি অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার ২৬ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের প্রায় ১৭ শতাংশ।
গত ৬ অক্টোবর সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, “ইউনিসেফ আমাদের কাছে একটা জরিপ প্রতিবেদন পাঠিয়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে, উপকারভোগীদের ৪৩ শতাংশই ত্রুটিপূর্ণ। অর্থাৎ যারা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, তারা হওয়ার মত নন।
“আমরা এটা এখন রিভিউ করব। তারপর টাকা ছাড় দেওয়া হবে। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর একবার ভাতা চলে গিয়েছে আগের নিয়মে। আমি খতিয়ে দেখার সুযোগ পাইনি।”
এর মধ্যে ডিসেম্বর পর্যন্ত ভাতা ছাড় হওয়ার বিষয়ে জানতে গত ১৩ জানুয়ারি থেকে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত নানা সময়ে সমাজকল্যাণ উপদেষ্টার সঙ্গে ফোন করে এবং বার্তা (হোয়াটসঅ্যাপ)পাঠিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু উপদেষ্টার কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
এদিকে তালিকা যাচাইয়ের আগে ভাতা ছাড় করা যাবে না– এমন সিদ্ধান্তের কথা জানতেন না বলে দাবি করেছেন সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক-১ (বয়স্ক ভাতা শাখা) ফরিদ আহমেদ মোল্লা।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমাদের কাছে এমন কোনো নির্দেশনা এখনও আসেনি। নির্দেশনা এলে আমরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারব।
“আমরা ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত টাকা ছেড়ে দিয়েছি এবং সেই টাকা উপকারভোগীরা পেয়েও গেছেন।”
সমাজসেবা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছর থেকে বয়স্ক ভাতা কর্মসূচির আংশিক পরিচালিত হয় এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। বর্তমানে মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান নগদ ও বিকাশ এবং এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জিটুপি পদ্ধতিতে (গভার্নমেন্ট টু পারসন) ভাতা দেওয়া হয়।
২০২১-২২ অর্থবছরে ১ কোটি ৪ লাখ ১৪ হাজার ৪২ জনকে জিটুপি পদ্ধতিতে অর্থ পরিশোধ করা হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেওয়া হয় ১ কোটি ৮ লাখ ২১ হাজার ৪২ জনকে। বছরে প্রত্যেক উপকারভোগী চার দফায় ভাতা পেয়ে থাকেন।
এরপর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫৮ লাখ এক হাজার বয়স্ক ব্যক্তিকে মাসে ৬০০ টাকা করে ভাতা দেওয়া হয়। এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৪ হাজার ২০৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।
দেশে ‘বয়স্কভাতা’ কর্মসূচি চালু হয় ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে । বয়োজ্যেষ্ঠ দুস্থ, স্বল্প উপার্জনকারী অথবা উপার্জনে অক্ষম বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সামাজিক নিরাপত্তা বিধানে এই কর্মসূচি হাতে নেয় সরকার।
প্রাথমিকভাবে দেশের সব ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিটি ওয়ার্ডে ৫ জন পুরুষ ও ৫ জন নারীকে মাসে ১০০ টাকা হারে ভাতা দেওয়া হয়। পরে কর্মসূচির আওতায় আনা হয় দেশের সব পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনকে।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ধীরে ধীরে উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ে। তবে একই সঙ্গে সমালোচনা শুরু হয় উপকারভোগী বাছাই করার প্রক্রিয়া নিয়েও।
১৯৯৮-৯৯ অর্থ বছরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারীদের ভাতা কর্মসূচি প্রবর্তন করা হয়। ওই অর্থ বছরে ৪ লাখ ৩ হাজার ১১০ জনকে এককালীন মাসিক ১০০ টাকা হারে ভাতা দেওয়া হয়।
এরপর ২০০৩-০৪ অর্থ বছরে এই কর্মসূচি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত হয়।
কিন্তু কর্মসূচি বাস্তবায়নে গতি বাড়াতে সরকার পুনরায় ২০১০-১১ অর্থ বছরে এই কর্মসূচি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করে।
সে সময়ে ভাতাভোগীর সংখ্যা ছিল ৯ লাখ ২০ হাজার জন এবং জন প্রতি মাসিক ভাতার পরিমাণ ছিল ৩০০ টাকা।
এই কর্মসূচির আওতায় ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ২৭ লাখ ৭৫ হাজার জনের জন্য মাসিক ৫৫০ টাকা করে ১ হাজার ৮৪৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
তালিকা যাচাই-ভাতা ছাড়ের কাজ একসঙ্গে
তালিকা যাচাই আর ভাতা ছাড়ের কাজ একসঙ্গে চলছে বলে মন্তব্য করেছেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাইদুর রহমান খান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এটা আমাদের চলমান প্রক্রিয়া; কাজ চলছে। আমাদের সফটওয়্যার হালনাগাদ হচ্ছে। একসঙ্গে সব কাজ চলছে।
“ফাইন্যান্সিয়াল প্রতিষ্ঠান যেগুলো আছে, বিকাশ কিংবা নগদ, তাদের সঙ্গেও মিটিং চলছে। আমাদের যেগুলো লিকেজ আছে, সেগুলো দূর করার কার্যক্রম চলছে।”
তিনি বলেন, “ডিসেম্বরের দ্বিতীয় কিস্তি আমরা ছাড় দিয়েছি এরই মধ্যে। মাঝখানে দীর্ঘ দিন ডিজি ছিলেন না। দীর্ঘ সময় আটকে ছিল, সে কারণে।
“তালিকা শুদ্ধিকরণের কাজও চলছে। একটার জন্য আরেকটা বন্ধ রাখলে তো মানুষজন ভুক্তভোগী হবে।”
পুরনো খবর
সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী: 'তালিকা পর্যালোচনার আগে ভাতা ছাড় নয়'