আইটিইউ নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র না কি রাশিয়াকে ভোট, ‘সিদ্ধান্ত নেয়নি’ বাংলাদেশ

কার জেতার সম্ভাবনা, বাংলাদেশ তা দেখছে বলে জানালেন পররাষ্ট্র সচিব।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 August 2022, 03:01 PM
Updated : 8 August 2022, 03:01 PM

আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) নির্বাচনে নিজেদের প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র; যেখানে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়া।

এই অবস্থায় কাকে ভোট দেবে, সেই সিদ্ধান্ত এখনও বাংলাদেশ নেয়নি বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।

সোমবার ঢাকা সফররত যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সংস্থা বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিশেল সিসনের সঙ্গে বৈঠকের পর এনিয়ে কথা বলেন তিনি।

বাংলাদেশ কাকে ভোট দেবে- এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “এটা এখনও সময় আছে। আমরা এখনও সিদ্ধান্ত নিই নাই, আমরা দেখি যে কে ভালো করছে, কার জেতার সম্ভাবনা আছে।”

তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থা আইটিইউর শীর্ষ পর্যায়ের প্লেনিপটেনশিয়ারি কনফারেন্স ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ অক্টোবর রোমানিয়ার রাজধানী বুখারেস্টে অনুষ্ঠিত হবে।

চার বছর পরপর আসা এমন সম্মেলনে পরবর্তী সময়ের জন্য নীতি ও কৌশল প্রণয়ন এবং আর্থিক পরিকল্পনা গ্রহণের পাশাপাশি জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের ব্যবস্থাপকদের নির্বাচন করা হয়।

শীর্ষ ব্যবস্থাপকদের তালিকায় প্রথমে থাকা মহাসচিব পদে এবার নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ডরিন বগড্যান-মার্টিন ও রাশিয়ার রাশিদ ইসমাইলভ।

স্নায়ুযুদ্ধ কালের দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া এখন ইউক্রেইন যুদ্ধ নিয়ে পরস্পরের মুখোমুখি।

নির্বাচনে ব্যাপক প্রচার চলার মধ্যে ২ থেকে ১০ অগাস্ট ভারত, বাংলাদেশ ও কুয়েত সফর করছেন মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিশেল সিসন।

অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে আইটিইউ নির্বাচনে ডরিনের পক্ষে সমর্থন চাওয়ার বিষয়টিও তার সফরের আলোচ্যসূচিতে থাকবে বলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আগেই জানিয়েছিল।

তিন দিনের সফরে শনিবার বিকালে ঢাকায় আসেন সিসন। ঢাকা থেকে উপসাগরীয় দেশ কুয়েতে যাওয়ার কথা রয়েছে তার।

সোমবার সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর দুপুরে ফরেইন সার্ভিস একাডেমিতে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদের সঙ্গে বসেন সিসন।

ভোটে প্রচারের বিষয়টিকে ‘স্বাভাবিক’ হিসেবে তুলে ধরে এক প্রশ্নে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “তারা তুলেছে। আমরাও বলেছি, আমাদেরও নির্বাচন আছে হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলে, সেখানে আমরাও তাদের কাছে ভোট চেয়েছি। এটা স্বাভাবিক ঘটনা।”

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে আশ্বস্ত করল ঢাকা

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ‘সঠিক’ প্রয়োগ নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা সাংবাদিকদের জানান পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ।

তিনি বলেন, “মানবাধিকারের যে বিষয়গুলো আছে, সেগুলো নিয়েও সাধারণ আলোচনা হয়েছে। আমাদের যে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের যে সমস্ত লুপহোলগুলো আছে, সেগুলো নিয়ে আমরা বর্তমানে কাজ করছি এবং তারা আমাদের অন্যান্য স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গেও আলোচনা করেছে।

“আমরা চাই, এই ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের যে প্রয়োগটা সেখানে যেন কোনো রকমের অসঙ্গতি না থাকে। এতে করে কাউকে যাতে ক্ষতির মুখে পড়তে না হয়। এ ব্যাপারে আমরা অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করছি। তারাও (যুক্তরাষ্ট্র) উনাদের সাথে কথা বলেছে।”

বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মত প্রকাশের সুযোগ ‘খর্ব’ করছে বলে দেশে যেমন সমালোচনা রয়েছে, তেমনি তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক মহলেরও উদ্বেগ রয়েছে।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “আমরাও বলেছি, এ ব্যাপারে আমরা সজাগ আছি। আমরাও চেষ্টা করব, যদি কোনো ধরনের অ্যাবিউস হয়ে থাকে, সেটাকে মিনিমাইজ করতে চাই এবং আমাদের কিছু কিছু রিভিউর কাজও হচ্ছে।

“জার্মান সরকারের কনসালটেন্টের সাথেও আলাপ করছি যে, তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা কীভাবে প্রয়োগের ক্ষেত্রে আরও কী উন্নতি করা যায়, সেটা আমরা দেখছি।”

র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞার প্রত্যাহারের দাবি ঢাকার পক্ষ থেকে তোলার কথা জানিয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, “তারা বলেছে, এটা পররাষ্ট্র দপ্তর নয়, অর্থ মন্ত্রণালয় দেখে। র‌্যাব ইস্যু, এটা একটা আইনি প্রক্রিয়া।

“আমরা বলেছি, তাদের সিস্টেমের মাধ্যমে কাজ করতে চাই এবং ইতোমধ্যে আমরা অন দ্যা গ্রাউন্ড অনেক ইমপ্রুভমেন্টও দেখেছি। যুক্তরাষ্ট্রের যে আইনি ফার্ম আছে, তাদের সঙ্গে আমরা এঙ্গেজমেন্টে আছি। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ব্যাপারে আমরা কাজ করছি। এ ব্যাপারে আমরা স্টেট ডিপার্টমেন্টের সহযোগিতা চেয়েছি।”

তাইওয়ান নিয়ে কোনো আলোচনা যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি উঠায়নি জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “তবে তারা বলেছে যে জাতিসংঘের সনদের মূল যে বিষয় আছে, তাতে যেন আমাদের সমর্থন থাকে। আমরা তো এটা আমাদের বিবৃতিতেও বলেছি, জাতিসংঘ সনদের মূল নীতির বিষয়ে আমাদের অঙ্গীকার আছে।

“আমরা চাই যে ওয়ার্ল্ড অর্ডার নিয়ে জাতিসংঘের যে মূলনীতি, তা যেন সকলেই মেনে চলে। আলাদা করে তাইওয়ান ইসুতে তারা কিছু বলেনি এবং আমরাও বলিনি।”

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফর নিয়ে বেইজিং-ওয়াশিংটন চাপান-উতর চলছে। চীন তাইওয়ানকে নিজেদের অংশ মনে করে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বিবৃতি দিয়ে ‘এক চীন নীতি’তে সমর্থনের কথা জানিয়েছে।

সিসনের সঙ্গে বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, খাদ্য নিরাপত্তা, মানবাধিকার, রোহিঙ্গা ইস্যু, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, শান্তিরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিষয়ে বৈঠকে আলোচনার হওয়ার কথা জানান পররাষ্ট্র সচিব।

তিনি বলেন, “বহু বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে আলোচনায় বহুপক্ষীয় বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে। সামনে জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক আছে। সেখানকার বিভিন্ন ইভেন্ট নিয়ে আলোচনা হয়েছে; সেখানে দুইপক্ষের মধ্যে কোন কোন ইস্যুতে সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করা যায়, সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।”

জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এ ব্যাপারে তারা আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে। এ ব্যাপারে সামনে আরও কীভাবে সহযোগিতা করা যায়, সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।”

রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনার হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “তারা বলেছে, ভাসানচরে তাদের সহযোগিতার হাত প্রসারিত করবে। আমরা প্রস্তাব করেছি, আইসিজিতে যে বিচার প্রক্রিয়া আছে, সেখানে যেন তারা সহায়তা করে।

“রোহিঙ্গাদের তৃতীয় কোনো দেশে স্থানান্তরের বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। আমরা বলেছি, এটার মূল সমাধান হবে তারা যদি রাখাইনে ফিরে যেতে পারে।”