“এবার আমরা কোনো ভাবেই হাজিদের নম্বর সিস্টেম থেকে বের হতে দিচ্ছি না,” বলেন যুগ্ম সচিব মঞ্জুরুল।
Published : 21 Nov 2024, 09:09 AM
রাজধানীর ইস্কাটন এলাকার সানজিদা খানম ২০২৩ সালে হজ করে দেশে ফেরার পর ‘হজ প্যাকেজ’র বেঁচে যাওয়া কিছু টাকা ফেরত পেয়েছিলেন। সেই প্রসঙ্গ ধরে সম্প্রতি তাকে কথার ফাঁদে ফেলে প্রতারক চক্র, হাতিয়ে নেওয়া হয় প্রায় আড়াই লাখ টাকা।
ঘটনার বর্ণনায় ভুক্তভোগী বলেন, প্রায় মাসখানেক আগে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পরিচয় দিয়ে একজন তাকে ফোন করেন। ফোনদাতা বলেন, ‘ম্যাডাম, আপনি তো পেমেন্ট বোধ হয় পেয়েছেন। আপনার আর কিছু পেমেন্ট বাকি আছে। আপনার অ্যাকাউন্ট নম্বর দিলে আমরা ট্রান্সফার করে দেব।’
তখন সানজিদা অ্যাকাউন্ট নম্বর দেন। এরপর ফোনদাতা বলেন, ‘টাকা যাচ্ছে না। আপনার যদি কোনো কার্ড থাকে, কার্ডের নম্বর বলেন’। তিনি কার্ডের নম্বর বলার পর তাকে বলা হয়, ‘আমরা টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি। কিন্তু, আপনার ফোনে একটা ওটিপি কোড যাবে। সেটা আমাদের বলেন।’
ওই নারী ‘সরল মনে’ ওটিপি জানালে প্রায় আড়াই লাখ টাকা তুলে নেয় প্রতারকচক্র।
ভুক্তভোগী বলছেন, যেহেতু একবার টাকা ফেরত পেয়েছেন, সেই কারণে আরও অর্থ ফেরত পাওয়ার বিষয়ে তার মনে কোনো সন্দেহ জাগেনি। আর তাতেই ঘটে সর্বনাশ।
এ ঘটনায় রমনা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তিনি।
পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার জুয়েল রানা বলেন, “এ বিষয়ে জিডি হয়েছে, বিষয়টি আমরা অবগত আছি। এ নিয়ে আমাদের কর্মকর্তারা কাজ করছে।”
সরকারি কর্মকর্তাও বাদ যাননি
প্রায় একইসময়ে একই ধরনের ঘটনা ঘটে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা মাওলানা মোহাম্মদ নূর উদ্দীনের সঙ্গে। একদিন বিকালে ফোন করে তাকে বলা হল, তিনি হজ গাইড হিসেবে কাজ করায় সম্মানী পাচ্ছেন। সেই টাকা পাঠাতে তার কাছে চাওয়া হল এটিএম কার্ডের তথ্য। যিনি ফোন করলেন, তিনি নিজেকে পরিচয় দিলেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা হিসেবে।
ঘটনার বর্ণনায় নূর উদ্দীন বলেন, “প্রায় মাসখানেক আগে বিকাল বেলায় আমাকে ফোন করে বলা হল, ‘ড. ইউনূস স্যারের পক্ষ থেকে হজ গাইডদের ২৯ হাজার ৫০০ টাকা সম্মানী দেওয়া হচ্ছে, এজন্য আপনার এটিএম কার্ডের তথ্য লাগবে। আপনি তো ২০২২ সালে হজ গাইড হিসেবে গিয়েছিলেন।’ আমি তাকে বললাম, ‘আমি তো ২২ সালে যাইনি; আমি গিয়েছিলাম ২০২৪ সালে।’
“তখন ওই প্রতারক বললেন, ‘ওহ আচ্ছা’। তখনই আমি বুঝে গিয়েছিলাম সে প্রতারক।”
নূর বলেন, এরপর নানা কথার এক পর্যায়ে প্রতারক সুবিধা করতে না পেরে ফোন কেটে দেয়।
“আমিও আর কথা বাড়াইনি। আমি তো কাজের সূত্রে মন্ত্রণালয়ের প্রায় সবাইকেই চিনি। তো, আমি তখন এই নম্বর আর তথ্য জানালাম মন্ত্রণালয়ে।”
কী বলছে মন্ত্রণালয়
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অধিশাখার যুগ্ম সচিব মঞ্জুরুল হক শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মূলত কিছু রেজিস্ট্রেশনবিহীন নম্বর থেকে ফোনগুলো আসছে। আন রেজিস্ট্রাড নম্বরগুলোই প্রতারক চক্র ব্যবহার করছে।
“এজন্য আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। এবং বিটিআরসিকেও বলেছি, এই নম্বরগুলোকে বন্ধ করার জন্য।”
তিনি বলেন, “আমরা যেটা পেয়েছি, সেটা হল যে, ফোন করে পরিচয় দিচ্ছে আমি ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা, এই পরিচয় দিয়ে বলতেছে যে আপনি তো হজে গিয়েছিলেন, মন্ত্রণালয় থেকে আপনাকে অর্থ ফেরত দেয়া হবে।
“এই ফেরত দেওয়ার জন্য আপনার ফোন নম্বর বা ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড নম্বর লাগবে। আপনি তো আগেও টাকা পেয়েছেন, আরও পাবেন।”
কীভাবে প্রতারক চক্র হাজীদের নম্বর পেলেন, এ প্রশ্নের উত্তরে মঞ্জুরুল হক বলেন, “আমরা যেটা অনুমান করছি, ২০২৩ সালে যারা হজে গিয়েছেন, তাদের যখন প্রশিক্ষণের জন্য আসতে বলেছিলাম, সে সময় কোনোভাবে হয়ত নম্বরগুলো লিক হয়েছে। প্রশিক্ষণে আসার সময় আমরা যে এসএমএস দিই, আমরা ধারণা করতেছি, সেখান থেকেই কোনোভাবে নম্বর লিক হয়েছে।
“এখন পর্যন্ত আমরা যেটা পাচ্ছি, শুধু ২৩ সালে যারা হজে গিয়েছিল, তাদের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটছে। ২০২৪ সালে টাকা ফেরত দেয়া হয়নি। ২৪ সালের হাজিদের কাছ থেকে এরকম অভিযোগও আমরা পাইনি।”
কাদের টাকা ফেরত দেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “২০২৩ সালে হজে সৌদি আরবে যাওয়ার পর অনেক হাজিকেই মক্কা থেকে দূরে বাড়ি ভাড়া করে রাখা হয়েছিল, সেখানে ভাড়া তুলনামূলক কম হওয়ায় পরে আমরা প্যাকেজের মধ্যে থাকা বাড়িভাড়ার একটা অংশ হাজিদের ফেরত দিয়েছিলাম।
“কেউ ২০ হাজার বা কেউ ৫০ -৬০ হাজার টাকাও ফেরত পেয়েছিল; যে অংশটা বেঁচে গিয়েছিল সেখান থেকে। এটার সুযোগটা নিয়েছে প্রতারকরা। এজন্য এবার আমরা কোনো ভাবেই হাজিদের নম্বর সিস্টেম থেকে বের হতে দিচ্ছি না।”
গত শনিবার মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সেখান থেকে হাজি, হজ এজেন্সি ও হজ গাইডদের রিফান্ডের টাকা সরাসরি ব্যাংক হিসাবে বিইএফটিএন অথবা চেকের মাধ্যমে পাঠানো হয়। এজন্য কোনো ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড, বিকাশ কিংবা নগদের তথ্য চাওয়া হয় না।