চিঠিতে আট দফা নির্দেশনা দিয়ে গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে তাদের অবস্থান চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।
Published : 13 Apr 2025, 08:37 PM
তীব্র গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনাকে ‘দেশে ফিরিয়ে আনতে’ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ‘সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে’ ঢাকায় আসার পরিকল্পনার কথা জানতে পারার কথা বলছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা।
আওয়ামী লীগের এমন ‘সরকার বিরোধী কার্যকলাপ’ প্রতিরোধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দেশের সব থানায় একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে সংস্থাটি।
চট্টগ্রাম পুলিশের সব থানার ওসিদের গত বুধবার পাঠানো ওই ‘জরুরি বিশেষ বার্তা’র একটি চিঠির অনুলিপি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম দেখেছে।
ওই চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন চট্টগ্রাম পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা, তবে তারা নাম প্রকাশ করতে চাননি।
চিঠির বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রাসেল সরাসরি মন্তব্য না করে বলেন, “আপনারা যাচাই করে দেখেন।”
চিঠিতে বলা হয়েছে, “আওয়ামীলীগ ও তার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে কমপক্ষে ২০০/২৫০ জন তৃণমূল নেতাকর্মীদেরকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে ঢাকায় আসার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেছে মর্মে গোপন সূত্রে জানা যায়।”
চিঠিতে আট দফা নির্দেশনা দিয়ে গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে তাদের অবস্থান চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন ও নৌ-ঘাট, রেল স্টেশন ও বাসস্ট্যান্ডে নজরদারির পাশাপাশি স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের (বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি) সহযোগিতা নিয়ে ঢাকামুখী কার্যক্রম প্রতিহত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সেখানে।
এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন সাইট পর্যালোচনা করে গ্রেপ্তার, অর্থদাতাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া এবং ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাস/প্রাইভেট কার স্ট্যান্ডগুলোতে নজরদারি করতে বলা হয়েছে।
এসব নির্দেশনার আলোকে প্রতিনিয়ত ২৪ ঘণ্টার (রাত ১২টা থেকে পরবর্তী রাত ১২টা পর্যন্ত) গ্রেপ্তারের তথ্য সকাল ৬টার মধ্যে পুলিশ কন্ট্রোলরুমে পাঠাতে হবে, যা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
চিঠিতে একটি ছকের নমুনা দিয়ে সে অনুযায়ী ইউনিটের নাম, মামলায় গ্রেপ্তারের সংখ্যা, চেকপোস্টের সংখ্যা ও তল্লাশি মাধ্যমে আটক সন্দেহভাজন ব্যক্তির সংখ্যা উল্লেখ করে মন্তব্যসহ তথ্য সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোনো গোয়েন্দা সংস্থা চিঠি দিয়েছে কি-না বিষয়টি আমার এই মুহূর্তে মনে নেই। তবে নাশকতাকারী যেই হোক, সে যেই সংগঠনেরই হোক তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। কেউ কি বলল, কি বলল না সেটা বিষয় না। নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে আমরা সবসময়ই তৎপর রয়েছি।
“কোন সংগঠনের নাম দিয়ে অন্য কেউওতো নাশকতা করতে পারে, বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করতে পারে। তাই সংগঠন কোনো বিষয় না। নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে আমরা সবসময়ই তৎপর রয়েছি।”
তৃণমূলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিষয়ে সতর্ক করে ওই গোয়েন্দা সংস্থার চিঠির বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য না করলেও এ বিষয়ে সতর্ক থাকার কথা জানিয়েছেন একাধিক জেলার পুলিশ সুপার।
গোপালগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ বিষয়ে আমাদের নজরদারি রয়েছে। কোথাও কোনো জমায়েত হচ্ছে কি না, কোনো অপতৎপরতার চেষ্টা করা হচ্ছে কি না আমরা খোঁজখবর রাখছি। কিছু গোপনীয় বিষয় থাকে, সেসব কাজ আমরা গোপনীয়ভাবেই চালিয়ে যাচ্ছি।”
২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। সে দিনই ভারতে পালিয়ে যান হাসিনা। এরপর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশের দেশের বাইরে পালিয়ে যাওয়ার তথ্য বিভিন্ন সময় সংবাদমাধ্যমে এসেছে।
জুলাই-অগাস্টের ওই আন্দোলনের মধ্যে প্রায় দেড় হাজার মানুষের প্রাণ যায়, সেসব ঘটনায় হামলার জন্য শেখ হাসিনাকে দায়ী করে তার সরকারের মন্ত্রী ও পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে।
জুলাইয়ের সেসব ঘটনাকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার করারও উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। একাধিক মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেছে ট্রাইব্যুনাল।
প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২৩ ডিসেম্বর ভারত সরকারকে ‘কূটনৈতিকপত্র’ পাঠায় অন্তর্বর্তী সরকার। তবে ভারত এখনও তার জবাব দেয়নি।
অপরদিকে আন্দোলন দমনে ভূমিকার জন্য আওয়ামী লীগকে অনেকে এখন ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ আখ্যায়িত করে নিষিদ্ধের দাবি তুলেছেন। সরকার উৎখাত আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম সারির নেতারাও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি তুলেছেন।
এরইমধ্যে আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগকেও নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং দলটির নিবন্ধন বাতিল চেয়ে গত ১৯ অগাস্ট হাই কোর্টে রিট আবেদন হয়েছে।
ভারতে পালিয়ে থাকা শেখ হাসিনাকে বিভিন্ন সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিতে শোনা যায়। এমন তৎপরতার মাধ্যমে তিনি দিল্লিতে বসে বাংলাদেশে ‘অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি ‘চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করে আসছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।