“সরকার গঠনের প্রায় ৩ মাস হয়ে গেলেও আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান এবং প্রথম অগ্রাধিকার চিকিৎসার কোনো কিছুতেই ওইরকম সাড়া পাচ্ছি না,”বলেন রক্তিম জুলাইয়ের সদস্য সচিব।
Published : 29 Oct 2024, 05:51 PM
জুলাই-অগাস্টের গণআন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা, কর্মসংস্থান ও ক্ষতিপূরণসহ সরকারের কাছে সাতটি দাবি তুলে ধরেছে ‘রক্তিম জুলাই ২৪’ নামের একটি সংগঠন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের কর্মসংস্থান, ক্ষতিপূরণ ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিরও দাবি জানান সংগঠনটির সদস্যরা।
অতিদ্রুত সেগুলো বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে 'রক্তিম জুলাই ২৪' এর সদস্য সচিব সালমান হোসেন বলেন, “জুলাই থেকে ৫ অগাস্ট পর্যন্ত আমরা একটি রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে আমাদের ‘স্বাধীনতা ২’ অর্জন করেছি। ৮ অগাস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়েছে। সরকার গঠনের প্রায় ৩ মাস হয়ে গেলেও আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান এবং প্রথম অগ্রাধিকার চিকিৎসার কোনো কিছুতেই ওইরকম সাড়া পাচ্ছি না।
“সরকার ইতোমধ্যে দুইজনকে চিকিৎসার উদ্দেশে বাইরে পাঠিয়েছেন। আমাদেরকে বলছেন কাদের বাইরে পাঠানো লাগবে আমাদেরকে জানাও। কিন্তু আমরা যখন বলছি একটা ছেলেকে বাইরে পাঠানোর জন্য যে, তাকে বাইরে পাঠালে তার চোখের জ্যোতি ফিরে আসবে। ওনারা তেমন কোন কিছুই দিচ্ছেন না, শুধু আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন।”
সালমান হোসেন বলেন, “আমরা ৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেছিলাম। সেখানে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল উপস্থিত ছিলেন। সেখানে তিনি আহতদের যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মসংস্থানের যোগান দেবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করেননি। তখন তাকে আমি জিজ্ঞাসা করায় উনি বলেছিলেন, দুই-তিন দিনের ভেতর সেটা প্রকাশ করা হবে। কিন্তু আজ দেড় মাস হয়ে গেলেও তিনি সেটা প্রকাশ করেননি।”
'রক্তিম জুলাই ২৪' এর আহ্বায়ক সাইফুদ্দীন মুহাম্মদ এমদাদ সাতটি দাবি তুলে ধরেন।
• জুলাই বিপ্লবে শহীদ ও আহতদের নির্ভুল ও সম্পূর্ণ তালিকা রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে অতিসত্বর গেজেট আকারে প্রকাশ করতে হবে। শহীদ ও আহতদের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ও পদবি দিতে হবে।
• সরকারকে আগামী ১০ কর্মদিবসের মধ্যে আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য একসঙ্গে প্রয়োজনীয় সব স্বাস্থ্যসেবা অর্থোপেডিক, ফিজিওথেরাপি, চক্ষু, নিউরোলজি, জেনারেল সার্জারি, মেডিসিন বিভাগের সমন্বয় করে দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞদের দিয়ে একটি বিশেষায়িত সরকারি হাসপাতালের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করতে হবে। পাশাপাশি সংকটাপন্ন আহতদের তালিকা করে অতি দ্রুত উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে হবে।
• আহতদের এবং শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান, ক্ষতিপূরণ বিষয়ে সরকারকে আগামী নভেম্বরের মধ্যে সব কার্যক্রম নিশ্চিত করতে হবে।
• অনতিবিলম্বে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের অপসারণ ও ফ্যাসিস্ট সংবিধান বিলুপ্ত ঘোষণা করে জনগণের অভিপ্রায়ের ভিত্তিতে প্রজাতন্ত্রের নতুন গঠনতন্ত্র প্রস্তুত করতে হবে।
• শহীদদের লাশের ওপর দাঁড়িয়ে মাফিয়াতন্ত্র বহাল রাখার জন্য কোনো নির্বাচন নয়। অতিদ্রুত রাজনৈতিক অংশীজনদের ঐক্য নিশ্চিত করে রাষ্ট্র সংস্কারের রোডম্যাপ জনগণের সামনে তুলে ধরে কার্যকর জনক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
• দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অতিদ্রুত উন্নয়ন ঘটিয়ে জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে হবে। দ্রুততার সঙ্গে পুলিশ ও বিচার বিভাগসহ সব বিভাগে সার্বিক সংস্কার করতে হবে।
• স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ভিত্তিতে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদায়ন কার্যপ্রণালি বাস্তবায়ন করে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী ভূতদের প্রশাসন থেকে বিতাড়িত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনের ব্যানারে সংগঠনটির পরিচয় হিসেবে ‘গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদ পরিবারের কল্যাণে নিয়োজিত’ লেখা হয়েছে। গণআন্দোলনে আহত প্রায় ২০/২৫ জন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।