বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে চীন হস্তক্ষেপ করতে চায় না: রাষ্ট্রদূত

এদেশের রাজনৈতিক-সামাজিক স্থিতিশীলতার ধারা ‘অব্যাহত রাখাটা জরুরি’ বলেও মন্তব্য করেন লি জিমিং।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Nov 2022, 10:31 AM
Updated : 5 Nov 2022, 10:31 AM

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপের কোনো আগ্রহ চীনের নেই বলে জানিয়েছেন দেশটির রাষ্ট্রদূত লি জিমিং।

বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনের এক বছর আগে পশ্চিমা বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের নানা বক্তব্যের মধ্যে শনিবার এক অনুষ্ঠানে একথা জানান তিনি, যার দেশের নানা বিনিয়োগ রয়েছে বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে।

চীনের শাসক দল কমিউনিস্ট পার্টির ২০তম কংগ্রেস নিয়ে শনিবার ঢাকায় বাংলাদেশ-চায়না সিল্ক রোড ফোরামের এক আলোচনা অনুষ্ঠানে কথা বলেন লি জিমিং।

বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ধরে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ কেন, কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে চীন কখনও হস্তক্ষেপ করতে চায়নি।”

তবে এদেশের রাজনৈতিক-সামাজিক স্থিতিশীলতার এই ধারা ‘অব্যাহত রাখাটা জরুরি’ বলেও মন্তব্য করেন চীনের রাষ্ট্রদূত।

এই আলোচনা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরীর নাম থাকলেও তিনি উপস্থিত ছিলেন না।

আওয়ামী লীগের জোট শরিক দুই বাম দলের নেতা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এবং সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া ছিলেন অনুষ্ঠানের মঞ্চে রাষ্ট্রদূতের দুই পাশে।

লি জিমিং রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ নিয়ে তাদের দেশের অবস্থানও প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, “চীন কোনো যুদ্ধ চায় না। বর্তমান ক্রাইসিসের ক্ষেত্রেও দ্রুত সুষ্ঠু সমাধান চায়। তবে, এটাও মনে রাখতে হবে, কোনো কোনো রাষ্ট্র আবার এর সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখছে না। জ্বালানি সংক্রান্ত নানা পদক্ষেপ দেখে সেটা বোঝা যায়।”

এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “কেবল ইউক্রেইন, রাশিয়া, ইউরোপের মানুষ না, এই পরিস্থিতিতে পুরো বিশ্বের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। মূল্যস্ফীতির প্রভাব পড়ছে সবার উপর।”

“পশ্চিমারা ভাবে, মডার্নাইজেশন হল পশ্চিমা মডার্নাইজেশন। কিন্তু বিষয়টা তা না। এটা সার্বিক,” বলেন বরাবরই পশ্চিমাদের সমালোচনার কেন্দ্রে থাকা চীনের রাষ্ট্রদূত।  

গত মাসে অনুষ্ঠিত চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ২০তম কংগ্রেসে টানা তৃতীয় বারের মতো দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন শি জিনপিং।

কংগ্রেস প্রসঙ্গে লি জিমিং বলেন, “নতুন এক যাত্রা শুরু করতে চীনের সব জাতিগোষ্ঠীর মানুষকে নিয়ে মডার্ন সোশালিস্ট রাষ্ট্র গঠনে ভূমিকা রাখবে এই কংগ্রেস।” 

বৈশ্বিক অর্থনীতিতে চীনের অবদান ‘এককভাবে বৃহৎ’ দাবি করে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, চীন-বাংলাদেশ কৌশলগত সম্পর্ক এই কংগ্রেসের মাধ্যমে আরও দৃঢ় হবে। দুদেশের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে এই কংগ্রেস।

রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে জিমিং বলেন, “রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীন মিয়ানমারকে ‘চাপ’ দিচ্ছে। ‘দ্রুততম সময়ের মধ্যে’ রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান না হলে আঞ্চলিক নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।

একইসঙ্গে তিনি বলেন, “আবার ব্যবসা-বাণিজ্যে ক্ষতির কথা চিন্তা করে অনেকেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চায় না।”

অনুষ্ঠানে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি মেনন বলেন, নতুন সময়ের সমাজতন্ত্রের অগ্রযাত্রা, ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে সহায়ক হবে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির এই কংগ্রেস। আগামীতে সমাজতন্ত্র কীভাবে এগোবে তা নির্ধারণ করে দিয়েছে এই কংগ্রেস।

“নতুন কংগ্রেসে দুটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমটি হল দুর্নীতি দূরীকরণ এবং দ্বিতীয়টি হল দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনা। আরেকটি বিষয় এখানে গুরুত্বপূর্ণ। যেটা আমাদের বাংলাদেশের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। তা হলো, আঞ্চলিক শান্তি বজায় রাখা। তাইওয়ান প্রসঙ্গেও সেই একই কথা।” 

পশ্চিমা বিশ্ব কংগ্রেসে কেবল হু জিনতাওকে অধিবেশন থেকে সরিয়ে দেওয়াটাই দেখেছে বলে মন্তব্য করে এই বাম নেতা বলেন, “এটা মূলত তাদের কূট দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ।

“কংগ্রেসে রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতেও শান্তিপূর্ণ সমাধানের কথা বারবার বলা হয়েছে। যখন বিশ্ব পারমাণবিক হামলার মুখোমুখি, তখন সহনশীলতার পরিচয় দিচ্ছে চীন।”

বাংলাদেশে চীনের যেসব উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড চলমান, তা বজায় থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন সাবেক এই মন্ত্রী।

বাংলাদেশ-চায়না সিল্ক রোড ফোরামের চেয়ারম্যান দিলীপ বড়ুয়া বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে চীন কোনো যুদ্ধে জড়ায়নি। যেমনটা জড়িয়েছে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো। চীনের মূল শক্তি এসময় হয়েছে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধি অর্জন। সেটাই তারা করে যাচ্ছে।”

“২০৩০ সালের মধ্যে ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোর অর্থনীতি জি-৭ভুক্ত দেশগুলোর অর্থনীতিকে ছাড়িয়ে যাবে বলে অনেক পশ্চিমা বিশ্লেষকই মনে করছেন। আর তখন এক নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার সূচনা হতে পারে। ২০তম জাতীয় কংগ্রেস বিশ্ববাসীকে এমন আভাসই দিয়েছে,” বলেন তিনি।