“ল-ইয়ার সার্টিফিকেট দিয়েছেন, তারপরও ধরে নিয়ে কোর্টে প্রডিউস করেছে; রিমান্ডেও পাঠিয়েছে; হাই কোর্টের অনলাইনে আদেশ আছে, সেটাও দেখে না,” বলে আদালত।
Published : 06 Aug 2023, 10:12 PM
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে ভাঙচুরের ঘটনাকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ বলেছে হাই কোর্ট।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে ভাঙচুরের মামলায় বিএনপির ১৮ আইনজীবীর জামিন চাইতে গেলে রোববার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের বেঞ্চ থেকে এ মন্তব্য আসে।
পরে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের জামিনের আবেদন শুনানির জন্য সোমবার দিন ঠিক করে দেয় আদালত।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলায় রায় হওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন সুপ্রিম কোর্টে। এক পর্যায়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি ও হামলার ঘটনা ঘটে।
পরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদকের কক্ষ ভাংচুর এবং সভাপতি ও সম্পাদকের কক্ষের নামফলক খুলে নেন একদল আইনজীবী।
এ ঘটনায় ওইদিনই সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট মো. রফিক উল্লাহ বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় ১৮ জন আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা করেন।
রোববার অ্যাডভোকেট সৈয়দ মামুন মাহবুব, জয়নুল আবেদীন, এ জে মোহাম্মদ আলী, বদরুদ্দোজা বাদল জামিন আবেদন উপস্থাপন করেন।
এক পর্যায়ে জ্যেষ্ঠ বিচারক মোস্তফা জামান ইসলাম সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে ভাঙচুরের ঘটনার বিষয়ে বলেন, “এইসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা কারা করেছে, তা জানি না। কিন্তু সারাদেশের মানুষ এগুলো ভালোভাবে নিচ্ছে না।”
মামলার আসামিদের পুলিশি হয়রানির আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে আইনজীবীরা রোববারই আবেদন শুনানির অনুরোধ করলেও আদালত অপারগতা প্রকাশ করে। তখন আইনজীবীরা মৌখিক আদেশ হলেও দিতে বলেন।
এ সময় জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, “জামিন আদেশ থাকা সত্ত্বেও যখন গ্রেপ্তার করা হয়, ধরে নিয়ে টর্চার করা হয়, তখন মৌখিক আদেশে আর কী হবে?”
রোববারই শুনানি করার সুযোগ চেয়ে এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, “আপনাদের এখতিয়ার আছে। জরুরি ভিত্তিতে একটি তালিকা করে নিতে পারেন।”
তখন জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম বলেন, “সিনিয়র কাউন্সিল, আমার ব্রাদার শুনতে চাচ্ছেন না। আপনারা অন্য সিনিয়র কোর্টে চেষ্টা করেন প্লিজ।”
এ সময় আইনজীবী বলেন, “আপনারা সব কোর্ট যদি এমন করেন- তাহলে আমাদের কী হবে, আমরা কোথায় যাব? জুডিসিয়ারির যদি এমন ‘পিটি’ অবস্থা হয়, যেখানে আমরা আইনজীবীরা এখানেই প্র্যাকটিস করছি। এই অঙ্গনের আইনজীবী হিসেবে আমরা সুরক্ষা চাইছি। এ বিষয়ে আপিল বিভাগেরও নির্দেশনা রয়েছে।”
তখন আদালত বলেন, “ঠিক আছে, আজকে দিয়ে যান, কাল শুনব। কালকে তালিকায় আসবে।”
এ সময় অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ও বদরুদ্দোজা বাদল কাল পর্যন্ত পুলিশ যাতে গ্রেপ্তার না করে, সেই নির্দেশনা দিতে বলেন।
জয়নুল আবেদীন বলেন, “আমরা তো সবসময় আপনাদের কাছেই আসি। আপনাদের যদি একটা আদেশ থাকে, যাতে পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার না করে। প্রয়োজনে একটা মৌখিক আদেশ দেন।”
এক পর্যায়ে জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, “আমাদের বক্তব্য হচ্ছে – আমরা অর্ডার পাস করেছি তারপরও বিভিন্ন জায়গায় আসামি ধরা হয়েছে। টাকা-টুকা চাইছে এমন ধরনের ঘটনাও আছে। ল-ইয়ার সার্টিফিকেট দিয়েছেন, তারপরও ধরে নিয়ে কোর্টে প্রডিউস করেছে। রিমান্ডেও পাঠিয়েছে। হাই কোর্টের অনলাইনে আদেশ আছে, সেটাও দেখে না।”
জামিন আবেদন সোমবার শুনবে বলে পরে আদালত জানিয়ে দেয়।