দুর্নীতি দমন কমিশনকে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে আগামী ৪ এপ্রিল প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
Published : 30 Jan 2023, 01:42 PM
ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানসহ নয় জনের বিরুদ্ধে কর্মচারী সমিতির ১৩২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তদন্ত করে দুর্নীতি দমন কমিশনকে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতির সম্পাদক মো. শাহাব উদ্দিন সরকারের করা এক মামলার আবেদনের ওপর শুনানি করে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ মো. আসাদুজ্জামান সোমবার এ আদেশ দেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী গাফফার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুর্নীতি দমন কমিশনকে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে আগামী ৪ এপ্রিল প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।“
তাকসিম ছাড়া মামলার অপর আসামিরা হলেন- ঢাকা ওয়াসার প্রকৌশলী শারমিন হক আমীর, সাবেক রাজস্ব পরিদর্শক মিঞা মো. মিজানুর রহমান, প্রকৌশলী মো. আখতারুজ্জামান, রাজস্ব পরিদর্শক মো. জাকির হোসেন, প্রকৌশলী মো. বদরুল আলম, জনতা ব্যাংকের সাবেক ডিজিএম শ্যামল বিশ্বাস, উপসচিব শেখ এনায়েত উল্লাহ ও উপ-প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. সালেকুর রহমান।
ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতির সম্পাদক মো. শাহাব উদ্দিন সরকার গতবছর জুনে হাকিম আদালতে এ মামলার আবেদন করলেও এখতিয়ার না থাকায় বিচারক তা ফিরিয়ে দেন। পরে গত বছরের ১০ নভেম্বর জজ আদালতে এ মামলার আবেদন করেন তিনি। শুনানি শেষে আদালত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিলের জন্য ৩০ জানুয়ারি দিন ধার্য করে দিয়েছিলেন।
মামলার আরজিতে বলা হয়, ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি ২০১৭ সালের ১৬ জুলাই থেকে ২০১৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ে ঢাকা ওয়াসা থেকে রাজস্ব আদায় কাজ বাবদ ৯৯ কোটি ৬৫ লাখ ১৯ হাজার ১৭৩ টাকা পায়। আর ২০১৮ সাল থেকে ২০১৯ অর্থবছরে এ কাজ থেকে সমিতি আয় করে ৩৪ কোটি ১৮ লাখ ৫৭ হাজার ৭৯০ টাকা।
এর মধ্যে ২০১৭ থেকে ২০১৮ অর্থবছরে সমিতির হিসাবে জমা হয় ১ কোটি ৭৯ লাখ ৫৯ হাজার ৫০৩ টাকা। বাকি ১৩২ কোটি ৪ লাখ ১৭ হাজার ৪৬০ টাকা ছয়টি ব্যাংক থেকে বিভিন্ন চেকের মাধ্যমে আসামিরা ‘আত্মসাৎ’ করেছেন এবং সমবায় অধিদপ্তরের অডিট রিপোর্টেও তা ‘প্রমাণিত’ হয়েছে বলে দাবি করা হয় আর্জিতে।
এছাড়া আসামিরা সমিতির গাড়ীসহ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি সমিতির হেফাজত থেকে স্থানান্তর করে প্রায় ২০০ কোটি টাকার সম্পদ ‘চুরি করেছেন’ বলে আর্জিতে অভিযোগ করা হয়।
মো. শাহাব উদ্দিন সরকার গতবছর জুনে যখন প্রথম দফা মামলার আবেদন করতে গিয়েছিলেন, সে সময় ওয়াসা এমডি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘চাকরিচ্যুত করায় ক্ষুব্ধ হয়ে’ শাহাব উদ্দিন তার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
তাকসিম এ খান ২০০৯ সাল থেকে ঢাকা ওয়াসার এমডি পদে রয়েছেন। প্রথম নিয়োগের পর থেকে মোট ছয়বার তার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন গতবছরই তাকসিম এ খানসহ ওয়াসার কর্তাব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ‘অনিয়ম, দুর্নীতি ও নিয়োগ বাণিজ্যের’ অভিযোগ নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে।
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটও (বিএফআইইউ) গত ২৫ অগাস্ট তাকসিম এ খানের সব ধরনের ব্যাংক হিসাব তলব করে চিঠি দেয়।
এর মধ্যেই দৈনিক সমকাল এ বছর জানুয়ারির শুরুতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যার শিরোনাম ছিল ‘ওয়াসার তাকসিমের যুক্তরাষ্ট্রে ১৪ বাড়ি!’ ওই প্রতিবেদন নজরে আনা হলে হাই কোর্ট দুদককে তদন্তের নির্দেশ দেয়।
হারাম পয়সা জীবনে খাইনি, আমাকে অনুরোধ করে রাখা হয়েছে: ওয়াসার এমডি
এরপর ১০ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে এসে তাকসিম এ খান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে তার ১৪টি বাড়ির যে খবর পত্রিকায় বেরিয়েছে, সেটা ‘সর্বৈব মিথ্যা’।
“যে ১৪টি বাড়ির কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে পাঁচটি বাড়িতে আমার পরিবার সেখানে বিভিন্ন সময় ভাড়া থেকেছেন। আর একটি বাড়ি আমার স্ত্রীর নামে। আমি, আমার স্ত্রী, সন্তান সবাই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।”
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত নিয়ে ওয়াসার এমডির ভাষ্য, “ঢাকা ওয়াসার ভালো কাজ দেখে যাদের ক্ষতি হয়, তারাই এমন অভিযোগ করেন। আমি জীবনে হারাম পয়সা খাইনি। খাবো না। ঢাকা ওয়াসার এমডি পদের চাকরি ছেড়ে দিতে চেয়েছি বহুবার। আমাকে অনুরোধ করে রাখা হয়েছে।”