“আদালতে হাজির হয়ে তারা যেন অভিযোগের মোকাবেলা করেন,” বলেন তিনি।
Published : 06 Apr 2025, 07:48 PM
‘হয়রানির’ অভিযোগের জবাবে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন দাবি করেছেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি ও যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রতিমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিককে দালিলিক প্রমাণের ভিত্তিতে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দের মামলায় আসামি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “আসামিদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে এবং তাদেরকে আদালতে হাজির হয়ে অভিযোগের জবাব দিতে হবে।”
রোববার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সামনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন তিনি।
গত ২৭ ডিসেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাসহ পরিবারের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে ‘অনিয়মের’ অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্তের কথা জানায় দুদক। এরপর ১২, ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে ছয়টি আলাদা মামলা করা হয়।
১০ মার্চ এসব মামলার অভিযোগপত্র অনুমোদন দেয় দুদক। ‘ব্রিটিশ সংসদ সদস্য হিসেবে প্লট বরাদ্দে প্রভাবিত করায়’ দুই মামলার অভিযোগপত্রে টিউলিপকে আসামি করা হয়েছে।
বুধবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘এক্স’ এ দেওয়া পোস্টে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের অভিযোগগুলোকে ‘ভুয়া’ দাবি করে তিনি বলেন, “সংবাদমাধ্যমে মাসের পর মাস মিথ্যা প্রচারণা চালানো হলেও তারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।”
এতে তিনি লেখেন, দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় আগে তার আইনজীবীরা ভিত্তিহীন অভিযোগের তথ্য নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে ব্রিফিং বন্ধ করতে চিঠি দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে তাদের যেকোনো আইনসিদ্ধ প্রশ্ন দ্রুত তার কাছে পাঠানোর অনুরোধ করেছিলেন।
“জবাব দেওয়ার সেই সময়সীমা শেষ হলেও বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ এখনও কোনো প্রশ্ন পাঠায়নি কিংবা উত্তর দেয়নি।
“উল্টো তারা সংবাদমাধ্যমে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক দাবি নিয়ে আমাকে ‘লক্ষ্য করে ভিত্তিহীন হয়রানি প্রচার চালাচ্ছে’।”
তার বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগগুলো অস্বীকার করে গত ২০ মার্চ টিউলিপ সিদ্দিক উল্টো সরকারের বিরুদ্ধে ভুয়া প্রচার চালিয়ে হয়রানির অভিযোগ তুলেছিলেন।
সম্প্রতি একটি খবর দুদকের নজরে এসেছে তুলে ধরে সংস্থার চেয়ারম্যান মোমেন বলেন, “তাতে বলা হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়েরকৃত মামলায় দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত মিস টিউলিপ সিদ্দিকের বিলেতি আইনজীবীর পাঠানো পত্রের জবাব আমরা প্রদান করিনি। স্কাই নিউজের সূত্র উল্লেখ করে উক্ত অভিযুক্ত বলেছেন, দুর্নীতি দমন কমিশন তার সাথেও যোগাযোগ করেনি।
“অনুগ্রহ করে লক্ষ্য করুন, দুর্নীতির অভিযোগ উড়িয়ে দিতে পারেননি বলেই ব্রিটেনের দুর্নীতি নিবারণের মন্ত্রী মিস টিউলিপ সিদ্দিক সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রবল সমর্থন সত্ত্বেও পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন।”
দুদক সম্পূর্ণভাবে দালিলিক প্রমাণের উপর ভিত্তি করেই টিউলিপের নামে আদালতে দুর্নীতির অভিযোগ দাখিল করেছে দাবি করে সংস্থার চেয়ারম্যান বলেন, “আদালতে হাজির হয়ে তারা যেন অভিযোগের মোকাবেলা করেন।”
“এটি কম্পাউন্ডেবল (আপসযোগ্য) কোনো মামলা নয়, চিঠি লেখালেখি করে মামলার পরিণতি নির্ধারিত হবে না,” বলেন তিনি।
আব্দুল মোমেন বলেন, “আদালতেই তা নির্ধারিত হবে। আদালতে তার অনুপস্থিতি ‘অপরাধমূলক পলায়ন’ বলে বিবেচিত হবে। কেবল টিউলিপ সিদ্দিক নন দুর্নীতির প্রশ্নে সাবেক পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে যে কোনো সাধারণ নাগরিকের বেলায় দুর্নীতি দমন কমিশনে একই প্রমিত প্রক্রিয়া অবলম্বন করে থাকে।”
টিউলিপ সিদ্দিকের বিষয়ে বাংলায় লিখিত বক্তব্যে তুলে ধরার পাশাপাশি একই বক্তব্য ইংরেজিতেও পড়ে শোনান দুদক চেয়ারম্যান।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, “যেহেতু টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার প্রতি বিদেশি সংবাদ মাধ্যমের আগ্রহ রয়েছে এবং আপনাদের কেউ কেউ সে সব গণমাধ্যমের লোকাল করেসপন্ডেন্ট। আমি খুব সংক্ষেপে একটি ইংরেজি বিবৃতিও তুলে ধরছি।”
এ সময় দুদক চেয়ারম্যানের সঙ্গে সংস্থার দুই কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী, কমিশনার (অনুসন্ধান) অরসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাফিজ আহ্সান ফরিদ ও মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
গত ৫ অগাস্ট অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহেনা ভারতে পালিয়ে যান।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ৬০ কাঠার ছয়টি প্লট বরাদ্দে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ছাড়াও পরিবারের সদস্য শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, শেখ রেহানার মেয়ে যুক্তরাজ্যের সংসদ সদস্য রিজওয়ানা সিদ্দিক (টিউলিপ সিদ্দিক), রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও অপর মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীকে আসামি করা হয়েছে।
বাংলাদেশে একটি প্রকল্পে বড় অঙ্কের দুর্নীতিতে তার নাম আসার পাশাপাশি প্লট নিতে ‘অনিয়মের’ পাশাশি লন্ডনে বিনামূল্যে ফ্ল্যাট উপহার নেওয়ার অভিযোগও ওঠে। এসব খবর আসার পর ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে তাকে পদত্যাগের আহ্বানের জানানোর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীকে তাকে বাদ দেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়।
বাংলাদেশে শেখ হাসিনার মত টিউলিপের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ‘ঘুষ আর অনিয়মের মাধ্যমে পাওয়া বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার তারা অবৈধভাবে অন্য দেশে পাচার’ করেছেন।
পরিস্থিতি আরো জটিল করে তোলে লন্ডনের কয়েকটি বাড়ি, যেগুলো টিউলিপ এবং তার পরিবারের সদস্যদের উপহার দেওয়া হয়েছে কিংবা বিনা পয়সায় থাকতে দেওয়া হয়েছে। আর সেগুলো তাদের দিয়েছেন ধনাঢ্য বাংলাদেশিরা, যাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার যোগ আছে।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসে কিংস ক্রসের একটি ফ্ল্যাট, যেটা ২০১৪ সালে টিউলিপকে উপহার দিয়েছিলেন আবদুল মোতালিফ নামের এক ব্যবসায়ী, যিনি শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ। ওই ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়ে টিউলিপ থাকেন অন্য বাসায়।
এসব নিয়ে সমালোচনার মুখে ১৪ জানুয়ারি পদত্যাগ করেন ব্রিটেনের আর্থিক সেবা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক।
আরও পড়ুন:
ঢাকার ফ্ল্যাট নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে 'বিভ্রান্ত' করার অভিযোগ
বাংলাদেশ সরকার 'হয়রানিমূলক' প্রচারণা চালাচ্ছে, অভিযোগ টিউলিপের
'ভুয়া' নোটারিতে বোনকে গুলশানের ফ্ল্যাট দেন টিউলিপ, বলছে দুদক