“আমি প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশের অপেক্ষায় থাকবো না। যত দ্রুত সম্ভব যা বাস্তবায়ন করা যায় করে ফেলবো,” বলেন তিনি।
Published : 23 Apr 2025, 11:19 PM
শ্রমিকদের ‘অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে গিয়ে শিল্প মালিকদের রোষের মুখে পড়েছেন’ বলে দাবি করেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন।
বুধবার সচিবালয়ে শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন গ্রহণের সময় উপদেষ্টা বলেন, তার মত আর কেউ ‘মালিকদের বিপক্ষে, শ্রমিকদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে’ বলে তার মনে হয় না।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে উপদেষ্টার হাতে প্রতিবেদন তুলে দেন শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্যরা। উপদেষ্টা এই মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্বে আছেন।
সেখানে শ্রম কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে সংবাদ সম্মেলন হয়।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিআইএলএস) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ নেতৃত্বাধীন এই কমিশন সোমবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি শ্রম উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “ইতোমধ্যেই শ্রমিকের পক্ষে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছি, এর আগে এই মন্ত্রণালয়ের কেউ আমার মত করে মালিকদের বিপক্ষে শ্রমিকদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে বলে আমার মনে হয় না।
“কারণ, সবাই ছিল ইন্টারেস্টেড গ্রুপ। তাদের স্বার্থের দ্বন্দ্ব ছিল। যখন আমার সিকিউরিটি থাকবে না, তখন তাদের মাইর খেতে হবে। তারা আমার ওপর অনেকে ক্ষ্যাপা, অনেক মেসেজ পাই।”
ক্ষুব্ধ হওয়ার বার্তা পেলেও শ্রমিকের পক্ষে নিজের অবস্থানে কোনো নড়চড় না হওয়ার কথা বলেছেন সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা।
“আমি তাদেরকে বলেছি, আপনি সব কিছু করতে পারেন, বিদেশ যেতে পারেন, অসুস্থ্ হলে বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারেন। কিন্তু শ্রমিকের বেতনটা দিতে হয় যখন, তখন বলেন আমার টাকা নাই। আমাকে ব্যাংক ধরে ফেলছে।”
দুই ধাপে পর্যালোচনা
গত নভেম্বরে ১০ সদস্যের শ্রম সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছিল। পাঁচ মাস পর কমিশনের সদস্যরা শ্রমিকের কল্যাণ ও বৈষম্য দূর করতে একগুচ্ছ সুপারিশ করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
শ্রম উপদেষ্টা বলেছেন, কমিশনের সুপারিশগুলো দুই পর্যায়ে পর্যালোচনা শেষে যথাসম্ভব বাস্তবায়ন করা হবে।
“আমরা একজন অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে একটা ইন্টারন্যাল কমিটি করবো। ইতোমধ্যেই আমাদের নেওয়া অনেকগুলো পদক্ষেপ কমিশনের সুপারিশের অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। দেখবো কী কী বিষয় আমাদের কাজের সঙ্গে মিল রয়েছে।
“বাংলাদেশে যা কিছু সম্ভব সব কিছু করা হবে। আমাদের আর্থসামাজিক অবস্থা লক্ষ্য রেখে যা কিছু করা যায় তা করা হবে। কমিটি আমাকে সুপারিশ করবে। সেই অনুযায়ী কাজ হবে।”
এর বাইরে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়ে একটি একাডেমিক পর্যালোচনা কমিটিও করা হবে বলেছেন উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “একটা একাডেমিক ডিসকাশন হবে। একটা বিশ্ববিদ্যালয়কে রিপোর্ট দেওয়া হবে। তারাও একটা স্টাডি করবে। তাদের সুপারিশও বিবেচনায় নেব। আমি প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশের অপেক্ষায় থাকবো না। যত দ্রুত সম্ভব যা বাস্তবায়ন করা যায় করে ফেলবো।”
‘উদ্দেশ্য বৈষম্য নিরসন’
সংবাদ সম্মেলনে বিশেষ অতিথি শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, “চব্বিশের গণআন্দোলনে হাজারও মানুষ জীবন দিয়েছে বৈষম্যহীন সমাজের জন্য। বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় বৈষম্য হচ্ছে অপ্রাতিষ্ঠানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের মধ্যে বৈষম্য। আট কোটি শ্রমিকের মধ্যে ৮৫ ভাগ অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক, তারা কোনো আইনি সুরক্ষা পায় না। তাদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি নেই। এটাতে শুধু শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, রাষ্ট্রও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
“আমরা এই অবস্থার অবসান চাই। ৮৫ ভাগ শ্রমিককে বাদ দিয়ে রাষ্ট্র চলতে পারে না। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হতে পারে না।”
কমিটির সুপারিশগুলোর সারমর্ম তুলে ধরে তিনি বলেন, “সব শ্রমিককে যেন ন্যূনতম আইনি সুরক্ষার মধ্যে আনা হয়। তার মজুরির গ্যারান্টি থাকবে। সামাজিক নিরাপত্তার গ্যারান্টি থাকবে। শ্রমিক হিসাবে তার স্বীকৃতি থাকবে। বিপদগ্রস্ত হলে আইনি সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকবে। তিনি সংগঠিত হতে পারবেন। এজন্য প্রক্রিয়াধীন শ্রম আইনে এগুলো অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।”
অদূর ভবিষ্যতে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঠিক করার সুপারিশ করে তিনি বলেন, তিন বছর পর পর মজুরি পর্যালোচনা করার ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রতিবছর মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মজুরি বাড়াতে হবে। একটা মানুষের মর্যাদাকর জীবন যাপনের জন্য যেই টাকা প্রয়োজন সেটাই যেন মজুরি হয়। একটা মজুরি কমিশন থাকা চাই। সর্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তা স্কিম থাকবে। এখনও একজন শ্রমিক মাতৃত্বকালীন ছুটি পায় না। এটা একটা সভ্য সমাজে চলতে পারে না। অস্থায়ী শ্রমিক, মাস্টার রোলে নিয়োগপ্রাপ্ত শ্রমিক মাতৃত্বকালীন ছুটি পায় না। এগুলো দূর করতে হবে।
শ্রম সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে কমিশনের সদস্য আরিফুল ইসলাম আদিব, রাজেকুজ্জামান রতন, শ্রমিক আন্দোলনের সংগঠক তাসলিমা আখতার, বাংলাদেশ লেবার কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এ কে এম নাসিম, বাংলাদেশ লেবার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শাকিল আখতার চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।