“আকস্মিক বন্যা কিংবা প্রকৃতিক দুর্যোগ বললে ত্রুটি থেকে যায়,” বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম।
Published : 27 Aug 2024, 11:15 PM
ত্রাণ ও উদ্ধার তৎপরতার বিবরণ দিতে এসে দেশের পূর্বাঞ্চলে চলমান বন্যার কারণ তদন্ত করে দেখার দাবি তুলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিত্বকারী সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বন্যায় উদ্ধার তৎপরতা ও ত্রাণ কার্যক্রম নিয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলন হয়।
সেখানে সেনাবাহিনী ও এনজিও প্রতিনিধিদের পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে কথা বলেন হাসিবুল।
সপ্তাহখানেক ধরে দেশে যে বন্যা শুরু হয়েছে, তাতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৭ জনে দাঁড়িয়েছে। বেশির ভাগ জায়গায় পরিস্থিতির উন্নতি হলেও এখনও পানিবন্দী ১২ লাখ ৭ হাজার ৪২৯টি পরিবার।
ভারত থেকে আসা আকস্মিক পাহাড়ি ঢল এবং দেশের মধ্যে টানা বৃষ্টি এই বন্যার কারণ বলে আবহাওয়াবিদরা জানাচ্ছেন। তবে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির যে চিত্র উঠে আসছে, তা তথ্যগত ঘাটতির কারণে বেশি মনে হচ্ছে বলে দাবি কারও কারও।
সংবাদ সম্মেলনে সমন্বয়ক হাসিবুল বলেন, “আকস্মিক বন্যা কিংবা প্রকৃতিক দুর্যোগ বললে ত্রুটি থেকে যায়। রাতের আঁধারে বাঁধ (ব্যারেজ) ছেড়ে দিয়ে কোনো রকম পূর্বাভাস ছাড়াই যদি এমন করা হয় এবং এর ফলে পানিতে তলিয়ে যদি মানুষ মারা যায়; এটাকে যদি আমরা উজান থেকে নেমে আসা পানি বলে উড়িয়ে দেই, তাহলে সেটা ভুল হবে। সরকারের প্রতি আহ্বান থাকবে তারা যেন তদন্ত সাপেক্ষে বিষয়টি ক্লিয়ার করেন। এটা একটা রাজনৈতিক বন্যা। এর পানিতে এখন পর্যন্ত ১১টি জেলা প্লাবিত হয়েছে।”
ত্রাণ তৎপরতার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, “টিএসসিতে নগদ অর্থগ্রহণ ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করা হচ্ছে। শুকনো খাবার, খেজুর, শিশুখাদ্য, পোশাক আমরা বিতরণ করছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে প্যাকেজিং করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রান্তিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা আমাদেরকে তথ্য দিচ্ছে যে কোন এলাকায় ত্রাণের কতটুকু প্রয়োজনীয়তা আছে। সেই অনুযায়ী আমরা বিতরণের পরিকল্পা করছি।”
“প্রতিটি ট্রাকে দুজন করে আমরা প্রতিনিধি পাঠাচ্ছি। তারা স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে উপযুক্ত ব্যক্তিকে ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছে। ফেনী ও নোয়াখালীতে আমাদের ডেডিকেটেড মেডিকেল টিম রয়েছে।”
আরেক সমন্বয়ক লুৎফর রহমান বলেন, “গত ছয় দিন ধরে গণচাঁদায় নগদ অর্থ গ্রহণ করা হচ্ছে। একজন শিশুর টিফিনের টাকা হতে শুরু করে নববিবাহিত দম্পতির গহনা পর্যন্ত ত্রাণ সংগ্রহে চলে আসছে। আসলে এখন মানুষ বাংলাদেশকে ‘ওন’ করছে বলেই এমনটি হচ্ছে। গতকাল (সোমবার) রাত ১০টা পর্যন্ত পাঁচ কোটি ৭৩ লাখ ৯৯ হাজার ৬৯০ টাকা সংগ্রহ হচ্ছে। এ ছাড়া মোবাইল ব্যাংকিংয়ে প্রায় ৬০ লাখ টাকা এসেছে।”
তিনি বলেন, “ত্রাণ মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে তাদের মাঠ পর্যবেক্ষণ ও আমাদের সেচ্ছাসেবকদের তথ্যকে সমন্বয় করে সশস্ত্র বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে বিতরণ করছি। সেনা ও বিমান বাহিনীর মাধ্যমে ছয় হাজার প্যাকেট পাঠিয়েছি। প্যাকেটে মুড়ি, চিড়া, গুড়, বিস্কুট, মশার কয়েল, মোম, স্যালাইন, খেজুর এই ধরনের খাদ্যসামগ্রী আমরা এখন দিচ্ছি।”
অচিরেই গণরান্না কর্মসূচি শুরু হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “যে জায়গাগুলো থেকে পানি নেমে যাচ্ছে সেখানে গণরান্না কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছি। কিন্তু চারদিকে যে অস্থিরতা ও ষড়যন্ত্র, সে কারণে এই কর্মসূচি শুরু করতে পারিনি। অচিরেই আমরা গণরান্না কর্মসূচিতে যাব।
“প্রতিদিন চার লাখ মানুষকে দুই বেলা করে রান্না করা খাবারের ব্যবস্থা করব। চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, লবণ ও আলু আমরা সংগ্রহণ করছি এই কর্মসূচির জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠের পাশে জিমনেশিয়ামে আমরা বেসিক খাবারগুলো গ্রহণ (সংগ্রহ) করছি।”
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের জ্যেষ্ঠ পরিচালক কেএম মোরশেদ বলেন, ব্র্যাক ছাড়াও সাজেদা ফাউন্ডেশন, আশা, টিএমএসএস, আসসুন্নাহ ফাউন্ডেশনসহ অন্তত ৩৪টি এনজিও কাজ করছে।
“গতকাল (সোমবার) পর্যন্ত ৩৪ হাজার শুকনো খাবার প্যাকেট বিতরণ করেছে ব্র্যাক। দুই দিন পর চাল-ডালসহ অন্যান্য খাবার বিতরণ করা হবে। ব্র্যাকের সাতটা মেডিকেল টিম কাজ করছে। সাজেদা ফাউন্ডেশনের অনেক অ্যাম্বুলেন্স কাজ করছে। সব একত্রিত করে সিভিল সার্জন কার্যালয় চাইলে কাজ ভাগ করে নিতে পারে।”
“এটা একটা ফ্ল্যাশ ফ্লাড। প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে পোস্ট-ফ্লাড রিকভারি। তাই আগামী দুই দিন পর আমাদের ত্রাণের কাজ জোরদার করতে হবে,” বলেন তিনি।