রাষ্ট্রপতির অনুমোদন সাপেক্ষে পদোন্নতির আদেশ জারি করা যেতে পারে, বলেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব।
Published : 24 Dec 2024, 08:43 PM
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের টানা দেড় দশকের শাসনামলে জনপ্রশাসনে ‘বঞ্চিত’ সাবেক ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ সুযোগ সুবিধাসহ পদোন্নতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। তাদের মধ্যে ১১৯ জন সচিব পদে পদোন্নতি পাচ্ছেন।
মঙ্গলবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম এই তথ্য দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এ কর্মকর্তাদের জন্য বকেয়া বেতন ও ভাতা বাবদ সরকারের ৪২ কোটি টাকা খরচ হবে। এছাড়া তাদের পেনশন বাবদ বছরে অতিরিক্ত ১৩ কোটি টাকা খরচ হবে।
‘বঞ্চিত ও বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো’ জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে জাকির আহমেদ খানের নেতৃত্বাধীন পর্যালোচনা কমিটির প্রতিবেদনের বিষয়টি তুলে ধরে প্রেস সচিব বলেন, পদোন্নতি ‘বঞ্চিত’ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য একটি সুপারিশমালা দিয়েছিল কমিটি। সে বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদে একটি সিদ্ধান্ত এসেছে।
তিনি বলেন, ৭৬৪ জনকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১৯ জনকে সচিব পদে, ৪১ জনকে গ্রেড-১, অতিরিক্ত সচিব পদে ৫২৮ জন, যুগ্ম সচিব পদে ৭২ জন এবং উপ সচিব পদে ৪ জন।
শফিকুল আলম বলেন, রাষ্ট্রপতির অনুমোদন সাপেক্ষে প্রত্যেক কর্মকর্তার জন্য প্রযোজ্য তারিখ থেকে উচ্চতর পদে পদোন্নতির আদেশ জারি করা যেতে পারে। এ বিষয়ে মন্ত্রী পরিষদ থেকে বিস্তারিত জানানো হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা চাই না, কোনো বঞ্চিত কর্মচারী এমনটা না ভাবেন যে তাকে আরো বঞ্চিত করা হয়েছে। আমরা সবার প্রতি ফেয়ার আছি এবং থাকব। এই সরকার খুবই স্বচ্ছ। আমরা যেটা করছি সব জানানো হচ্ছে। কোন কিছু গোপন করা হচ্ছে না।
“এ জন্য বিশৃঙ্খলা হচ্ছে, সেটা আমরা মানতে রাজি নই। অবশ্যই যারা বঞ্চনার শিকার হয়েছেন বলে মনে করছেন তাদের বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্টরা দেখছেন।”
জনপ্রশাসনের ‘বঞ্চিত’ কর্মকর্তাদের চাকরিতে ফিরিয়ে আনা বা তাদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা দিতে গত ১৬ সেপ্টেম্বর পাঁচ সদস্যের একটি পর্যালোচনা কমিটি করা হয়। যার নেতৃত্বে আসেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব জাকির আহমেদ খান।
কমিটিকে তিন মাস সময় দেওয়া হলেও, তার আগেই গত ১০ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টার কাছে কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়।
ওইদিন প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেছিলেন, কমিটি সুপারিশসহ রিপোর্ট দিয়েছে।
“তারা ১৫৪০ জনের মত আবেদন পেয়েছিলেন। সেটা যাচাই-বাছাই করে ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষা সুযোগ সুবিধা নিয়ে পদোন্নতি দেওয়ার সুপারিশ করেছে। সুপারিশ পর্যালোচনা করে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।”
তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট পর্যন্ত ‘বঞ্চিত ও বাধ্যতামূলক অবসরে যাওয়া’ সচিব থেকে শুরু করে উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা এই তালিকায় রয়েছেন।
আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে শপথ নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার চার মাস সময় পার করেছে। এই কয়েক মাসে শেখ হাসিনা সরকারের রেখে যাওয়া প্রশাসনে রদবদল, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল এবং গত সরকারের আমলে বঞ্চিতদের পদোন্নতির সিদ্ধান্ত এসেছে একের পর এক।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, পুলিশ, আইন-আদালত, সশস্ত্র বাহিনী, হাসপাতাল ও সেবাখাত, জনপ্রশাসন সব জায়গায় পরিবর্তন অব্যাহত আছে।