“মেয়ে গোপনে বিয়ে করেছেন। বাবা মেনে নেননি। স্বামীকে টাকা দেওয়ার জন্য সে চুরি করছে,” বলেন ওসি।
Published : 13 Jul 2024, 11:54 PM
ঈদের ছুটিতে তালা দেওয়া বাসা থেকে ঢাকার মোহাম্মদপুরের এক ব্যবসায়ীর প্রায় পৌনে দুই কোটি নগদ টাকা ও দামি অলংকার চুরির তদন্তে নেমে ওই ব্যক্তির মেয়ে ও জামাতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
আবাসন ব্যবসায়ী আব্দুল হামিদ বাবুলের বাসা মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডে। কোরবানি ঈদের দুই দিন আগে বাসায় তালা দিয়ে সপরিবারে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন তিনি। ফিরে এসে দেখেন বাসার সব কিছুই অক্ষত আছে; তবে সিন্দুকে রাখা এক কোটি ৬৬ লাখ নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও হীরার আংটি নেই, সিন্দুকটিও বন্ধ ছিল।
পরে তিনি চুরির অভিযোগে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন গত ৫ জুলাই। সেই মামলার তদন্তে গিয়ে বাদীর ছোট মেয়ে ও তার স্বামীকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিয়েছেন মোহাম্মদপুর থানার ওসি মাহফুজুল হক ভুঁইঞা। বলেছেন, জামাতার হেফাজত থেকে উদ্ধার হয়েছে টাকা ভর্তি ব্যাগ।
গ্রেপ্তাররা হলেন- মেয়ে মীনা হামিদ ও তার স্বামী সাকিবুল হাসান।
ওসি বলেন, ব্যবসায়ী বাবুলের ছোট মেয়ে আইনের ছাত্রী মীনা পরিবারের অমতে বিয়ে করেছিলেন ঢাকার একটি সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক পাস করা সাকিবকে।
মামলায় ব্যবসায়ী বাবুল অভিযোগ করেন, কোরবানির ঈদের আগে গত ১৫ জুন বিকালে তিনি বাসায় তালা দিয়ে সপরিবারে গ্রামের বাড়িতে যান। ২২ জুন তার স্ত্রী, বড় ছেলে ও গৃহকর্মী বাসায় ফিরেন। তার তখন সব জিনিসপত্র ঠিকঠাক দেখতে পান। তাদের আসার দুই দিন আগে তার ছোট ছেলে, শ্বশুর এবং এক ভাগ্নি বাসায় ঢুকেও সব জিনিসপত্র ঠিকঠাক দেখতে পান। এরপর ব্যবসায়িক কাজে গত ১ জুলাই তিনি নিজের শোয়ার ঘরে রাখা সিন্দুকটি খুললে সেখানে রাখা নগদ টাকা ও অলংকার পাননি।
এজাহার অনুযায়ী, সিন্দুকে নগদ এক কোটি ৬৬ লাখ টাকা, সাড়ে ১৮ ভরি স্বর্ণের অলংকার ও দুটো হীরার আংটি ছিল।
বিপুল নগদ টাকা রাখার ব্যাখায় তিনি লেখেন, ঈদের আগে বিভিন্ন কোম্পানি থেকে পাওয়া বকেয়া টাকা ব্যাংক বন্ধ থাকায় তিনি সিন্দুকে রেখেছিলেন।
এজাহারে বলা হয়, ফ্ল্যাটের সব তালা, দরজা, জানালা অক্ষত দেখে তিনি পরিবারের সবাইকে ব্যক্তিগতভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কিন্তু কেউই চুরির কথা স্বীকার করেনি। বাসার দারোয়ান, গৃহকর্মী ও গাড়িচালককেও পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে কোনো সদুত্তর পাননি।
এরপর আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে আলোচনা করে তার মামলা করতে বিলম্ব হয়েছে বলে এজাহারে তুলে ধরা হয়।
এ বিষয়ে বাবুলের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
মোহাম্মদপুর থানার ওসি মাহফুজুল বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর ওই বাসায় গিয়ে সিন্দুক, দরজার সব তালা অক্ষত দেখতে পাওয়া যায়। জানালা, গ্রিল কোনো কিছুই ভাঙা হয়নি। চোর বাইরে থেকে ঢুকলে ছোট হলেও কোনো সূত্র থাকবে।
”তখনই আমাদের সন্দেহ হয়। আমরা পরিবারের লোকজনকে সন্দেহ করছি এটা তখন বাদীকে জানাই। এরপর জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করি। অনলি চার দিনের মাথায় আমরা মামলার রহস্য উদঘাটন করে ফেলি।”
ওসি বলেন, ছেলে ও মেয়েদের সন্দেহ করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। ছোট মেয়ের কিছু সন্দেহজনক ‘মোবাইল যোগাযোগের’ সূত্র ধরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি চুরির কথা স্বীকার করেন।
কীভাবে চুরি করেছে জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুল বলেন, “বাসা থেকে জাস্ট নিয়ে গেছে, নিজেদের ঘরের লকার। ওদের কাছে চাবি ছিল। মেয়ে গোপনে বিয়ে করেছেন। বাবা মেনে নেননি। স্বামীকে টাকা দেওয়ার জন্য সে চুরি করছে।
“ওর স্বামী কেবল পড়াশোনা শেষ করেছেন, তেমন কিছু করেন না। তার গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ থেকে টাকা ভর্তি ব্যাগসহ অক্ষত অবস্থায় টাকাটা উদ্ধার করা হয়। যেই ব্যাগে মীনা তাকে টাকা দিয়েছিলেন সেটিসহ টাকাটা উদ্ধার করা হয়, খরচও করেনি তারা।“