উদ্বেগের মধ্যে আশা ‘বেঙ্গল ওয়াটার মেশিন’

দেশের কিছু এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ার পর আবার প্রাকৃতিকভাবেই ভরে উঠছে বলে গবেষণায় দেখা গেছে, যদিও সব এলাকার চিত্র এমন নয়।

মঈনুল হক চৌধুরী ও রোকন রাকিববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Sept 2022, 07:34 PM
Updated : 26 Sept 2022, 07:34 PM

দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ার উদ্বেগের মধ্যে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকা নিয়ে স্বস্তির খবর দিয়েছেন একদল বিশেষজ্ঞ।

তারা বলছেন, বঙ্গীয় অববাহিকা সংলগ্ন এলাকায় কৃষিকাজের জন্য যে পরিমাণ পানি মাটির নিচ থেকে তোলা হয়, তা পূরণ হয়ে যাচ্ছে পাঁচ-ছয় মাসের মধ্যেই।

আর যেসব এলাকায় তা পূরণ হচ্ছে না, সেসব এলাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে পানিসম্পদের দক্ষ ব্যবস্থাপনায় মনোযোগী হতে পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা।

ভূ-গর্ভস্থ পানি নিয়ে ১৯৭৫ সালে এক গবেষণায় রজার রিভেল ও ভি লক্ষ্মীনারায়ণ দেখিয়েছিলেন, গঙ্গা অববাহিকার আশেপাশের এলাকায় শুষ্ক মৌসুমে সেচের জন্য পানি উত্তোলন করায় ভূ-গর্ভের পানির স্তর নেমে যায়। তবে বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি খাড়াভাবে মাটির মধ্য দিয়ে নামার ফলে সেই ফাঁকা স্থান পূরণ হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়াকে তারা নাম দেন ‘গঙ্গা ওয়াটার মেশিন’।

এখন বঙ্গীয় অববাহিকা নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে আরেকদল বিশেষজ্ঞ বলছেন, নদীর পাশাপাশি ভূ-উপরিস্থ অন্যান্য উৎস যেমন পুকুর, খাল, মৌসুমী নদী, নালার পানি মাটি হয়ে ভূ-গর্ভের পানিস্তরের শূন্যতা পূরণ করে চলেছে, যেই প্রক্রিয়াকে তারা নাম দিয়েছেন ‘বেঙ্গল ওয়াটার মেশিন (বিডব্লিউএম)’। এই প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার কারণে কৃষকরা খরা মৌসুমে গভীর ও অগভীর নলকূপ ব্যবহার করে জমিতে সেচ দিলেও দেশের উল্লেখযোগ্য অংশে ভূ-গর্ভস্থ পানির ফাঁকা স্তর ভরাট হচ্ছে দ্রুতই।

গবেষকরা বলছেন, দেশজুড়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১২৫০টি অগভীর পর্যবেক্ষণ কূপের মধ্যে তারা ৪৬৫টি কূপের চার দশকের তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করেছেন। গবেষণায় নির্বাচিত কূপের এক-তৃতীয়াংশেই (১৫৩টি) বিডব্লিউএমের অস্তিত্ব বা স্বস্তিদায়ক ফল মিলেছে।

বিজ্ঞান সাময়িকী ‘সায়েন্স’-এ গত ১৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ‘দ্য বেঙ্গল ওয়াটার মেশিন : কোয়াইন্টিফাইড ফ্রেশওয়াটার ক্যাপচার ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণাপত্রে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের তিন গবেষক- মোহাম্মদ শামসুদ্দুহা, রিচার্ড ডি টেলর, এম ইজাজুল হক; বুয়েটের সারা নওরীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী মতিন উদ্দীন আহমেদ এবং বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালক আনোয়ার জাহিদ যৌথভাবে এ গবেষণা পরিচালনা করেছেন।

ড. আনোয়ার জাহিদ বলেন, গবেষণালব্ধ তথ্যে সাধারণভাবে বলা যায়- দেশের কয়েকটি অঞ্চলের অধিকাংশ জায়গায় শুষ্ক মৌসুমে তুলে নেওয়া ভূগর্ভস্থ পানি বর্ষায় পূরণ হয়ে যায়।

তবে পুরো দেশের চিত্র এক না হওয়ায় সতর্কও করেছেন তিনি। তার কথায়, “কোনো কোনো জায়গা আছে, সেখানে ভূগর্ভস্থ যে পরিমাণ পানি উত্তোলন করা হয়েছে, তা বর্ষা মৌসুমে পুরোটাই ভরে যায়, অর্থাৎ আগের ওয়াটার লেভেলে পৌঁছে যায়।

“কিছু কিছু জায়গা আছে, যেখানে অনেক বেশি পানি উত্তোলন করা হচ্ছে, সেখানে পানির স্তর আর পূরণ হচ্ছে না। এটা এলার্মিং। যেসব জায়গায় ভরে যাচ্ছে, যতদিন পর্যন্ত ভরে যাবে, সেখানে ভূগর্ভস্থ পানির টেকসই ব্যবহার করা যাবে।”

‘বেঙ্গল ওয়াটার মেশিনে’ আশীর্বাদ

বঙ্গীয় অববাহিকার আশপাশের বেশ কিছু এলাকায় স্বাভাবিক বন্যা, বৃষ্টিপাত ও ভূতাত্ত্বিকগত কারণে ভূ-গর্ভস্থ পানি নিয়ে স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে গবেষকরা জানাচ্ছেন, তারা ১৯৭৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ কূপের প্রতি মাসের তথ্য-উপাত্ত পর্যোলোচনা করে সেসব এলাকায় ভূগর্ভে পানি রিচার্জ হওয়ার তথ্য পেয়েছেন।

পানি রিচার্জ

দেশে মূলত বৃষ্টি ও বন্যার পানি খাড়াভাবে মাটির মধ্য দিয়ে (পারকোলেশন বা অনুস্রবণ) ভূগর্ভে প্রবেশ করে ও তার ফলে সেখানে রিচার্জ (পুনঃসঞ্চারণ) ঘটে থাকে। তবে বরেন্দ্র অঞ্চলে এই রিচার্জ ঘটে প্রধানত বৃষ্টির মাধ্যমে; কিন্তু সেখানে বৃষ্টিপাত কম হওয়ার ফলে পানির স্তর আর পূরণ হচ্ছে না।

মাটির গঠন, প্রকৃতি ও ভূতাত্ত্বিক অবস্থান ভূগর্ভস্থ পানির স্তর পূরণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে জানিয়ে ড. আনোয়ার জাহিদ বলেন, “গ্রাউন্ড ওয়াটার রিচার্জ মানে পানি উত্তোলনের পর ভূগর্ভস্থ পানিস্তর রি-কাভার হয়ে যাওয়া, পূর্বাবস্থা ফিরে যাওয়া। এটা একটা শ্যালো অ্যাকুইফার। বন্যা, বৃষ্টির পানি ইনফিলট্রেশন হয়ে যাচ্ছে।“

দেশজুড়ে ১৬ লাখেরও বেশি অগভীর-গভীর সেচ নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে অগভীর রয়েছে প্রায় ১৬ লাখ, গভীর রয়েছে ২৫ হাজারের মতো (সংখ্যা ধীরে ধীরে কমছে); যেসব দিয়ে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করা হয়।

বর্ষা মৌসুমে শহরাঞ্চল ও ঢাকা ছাড়া সবখানে পাম্প বন্ধ থাকে। তখন পানি উত্তোলন হয় না, মাটি দিয়ে পানি প্রবেশ করে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ভরে ওঠে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও খাদ্য নিরাপত্তার সম্ভাব্য ঝুঁকির মধ্যে অন্তত কিছু জায়গায় পানির স্তর প্রতি বছর রিচার্জ হওয়াকে ‘আশীর্বাদ’ হিসেবে দেখছেন গবেষকরা। যদিও এই রিচার্জ আগে যেখানে জুন-জুলাইয়ের মধ্যে সম্পন্ন হতো, সেখানে এখন সময় লাগছে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত। অর্থাৎ আগের চাইতে ২ মাসের মতো সময় লাগছে বেশি।

বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. সারা নওরীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ গবেষণায় আমরা কিছু সতর্কতা রেখেছি- পানিস্তর স্বাভাবিকতায় ফিরে আসার এ চিত্র পুরো দেশের নয়; বাছাইকৃত অনুকূল পরিবেশবান্ধব বেশ কিছু এলাকার জন্য প্রযোজ্য।

“মনে রাখা জরুরি, যেসব নদের আশপাশের এলাকা প্রতিনিয়ত স্বাভাবিক নিয়মেই বন্যায় প্লাবিত হয় অথবা বৃষ্টিপাতও থাকে স্বাভাবিক বা প্রচুর এবং (হলসিন টাইপ) মাটির গঠন এমন অনুকূল যে, সহজেই অগভীর জলাধারগুলো ভরে যায়; শুধুমাত্র সেসব জায়গায় অগভীর স্তর থেকে অতিরিক্ত পানি উত্তোলনের এরূপ সুফল ভোগ করা সম্ভব।”

কৃষিনির্ভর এ দেশে জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট অনিশ্চয়তার কথা বিবেচনা করে ‘স্বস্তিদায়ক’ এলাকায় নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এ ধরনের গবেষণা আরও বড় পরিসরে করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

কোন এলাকায় স্বস্তি, কোথায় ঝুঁকি

পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভূগর্ভস্থ পানি বিশেষজ্ঞ ড. আনোয়ার জাহিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, নীলফামারীর দিকে শুষ্ক মৌসুমে কৃষিকাজে ব্যবহারের জন্য ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করা হলেও যখন তেমন পানি তোলা হয় না, সেই বর্ষা মৌসুমে পানির স্তর ভরে যায় সেপ্টেম্বরের মধ্যে।

“আমরা দেখেছি- প্রতিবছর নীলফামারীর দিকে ৪ মিটারের বেশি পানির স্তর নেমে যায়। টাঙ্গাইলের দিকে ১০ মিটারের বেশি নেমে যায়। এসব এলাকায় ৩-১০ মিটার নেমে যায় ওই সময়। পরে রিকভার হয়ে ভরে আগের লেভেলে চলে আসে। ঢাকাতে ৮২ মিটারের নিচে নেমে গেছে। এটা আর ভরে না, প্রতিবছর আরও নেমে যাচ্ছে।”

‘বেঙ্গল ওয়াটার মেশিন’ এলাকায় প্রতি বছর পানির স্তর সাধারণত ৪-১২ মিটার নামে উল্লেখ করে ড. জাহিদ বলেন, “পরবর্তী বর্ষাকালে আগের অবস্থায় ফিরে আসে। যেখানে ফিরে আসে, এটা পটেনসিয়াল এরিয়া, বাকিগুলো (নন-বিডব্লিউএম এলাকা) তো ঝুঁকিপূর্ণ। পটেনসিয়াল এরিয়ায় বারবার পানি তুললেও ক্ষতি হচ্ছে না, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাকে ব্যবস্থাপনার মধ্যে আনতে হবে।”

গবেষকরা জানাচ্ছেন, ঢাকা ও এর চারপাশে ২০০৪/২০০৫ সাল থেকে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাচ্ছে আশঙ্কাজনক হারে। আবার কিছু কিছু এলাকা বাদে পুরো বরেন্দ্র এলাকায় প্রতিবছর নামছে তিন-চার মিটার করে। আর শহর এলাকায় প্রতি বছর যা উত্তোলন হচ্ছে, তা আর পূরণ হচ্ছে না।

>> দিনাজপুর, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট; ব্রহ্মপুত্রের দুই পাড়ে জামালপুর, গাইবান্ধা, টাঙ্গাইল এবং শহর এলাকার মধ্যে সিলেট, কুমিল্লা ও বরিশালের (শেষ দুই শহর এলাকার কিছু এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ) কিছু কিছু এলাকায় প্রতিবছর পানিস্তর ভরে যাচ্ছে। এসব স্বস্তিদায়ক এলাকা।

>> বৃহত্তর ঢাকা, বৃহত্তর বরেন্দ্র, শিল্প এলাকা ও শহরাঞ্চল বাদে অধিকাংশ এলাকায় পানির স্তর বর্ষায় ভরে যাচ্ছে। আবার অনেক এলাকার চারপাশে ভরে যাচ্ছে; কিন্তু মাঝখানের একটি উপজেলায় তুলনামূলক বেশি পানি তোলায় তা আর রিচার্জ হচ্ছে না। হাওর এলাকার ক্ষেত্রে কোথাও কোথাও পানি ভরে যাচ্ছে, আবার কোথাও কোথাও তা হচ্ছে না। আর উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততার প্রভাব থাকায় ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহারই কম।

>> দেশের বিস্তীর্ণ এলাকা ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার টেকসই অবস্থায় নেই; ওইসব এলাকা বরাবরই ঝুঁকিতে রয়েছে।

পানিসম্পদের চিত্র তুলে ধরে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার আহ্বান জানিয়ে আনোয়ার জাহিদ বলেন, “সতর্কতার সঙ্গে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করতে হবে এবং মনিটর করতে হবে এজন্য। কোন জায়গায় নেমে যাচ্ছে, কোন জায়গায় রিচার্জ হয়ে যাচ্ছে- পর্যবেক্ষণটা অব্যাহত রাখতে হবে।”

এ গবেষণায় যেসব বাংলাদেশি অবদান রেখেছেন

  • মোহাম্মদ শামসুদ্দুহা, সহযোগী অধ্যাপক, ইন্সটিটিউট অব রিস্ক অ্যান্ড ডিজাস্টার রিডাকশন, ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন

  • মো. ইজাজুল হক, ডক্টরাল গবেষক, ভূগোল বিভাগ, ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন এবং প্রভাষক, ডিপার্টমেন্ট অব ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

  • সারা নওরীন, সহযোগী অধ্যাপক, পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)

  • আনোয়ার জাহিদ, পরিচালক, গ্রাউন্ড ওয়াটার হাইড্রোলজি সার্কেল, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড

  • কাজী মতিন উদ্দীন আহমেদ, অধ্যাপক, ভূতত্ত্ব বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

গবেষণার সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে লেখকরা বলেছেন, গবেষণায় ভূগর্ভস্থ পানির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারকে কোনোভাবেই উৎসাহিত করা হয়নি। পানির গুণগত মানের উপর অতিরিক্ত পানি উত্তোলনের প্রভাব নিয়েও কোনো আলোচনা করা হয়নি। সেই কারণে লবণাক্ততার প্রভাব পড়ে এমন এলাকা (দক্ষিণাঞ্চল), ভূগর্ভের গভীর পানির ওপর নির্ভরশীল বরেন্দ্র অঞ্চলসহ মহানগরগুলোর পানির স্তর নিয়ে উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মতিন উদ্দীন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইরিগেশনের ইম্প্যাক্ট নিয়ে আমরা দেখছি- সবাই কথা বলছি। এর কারণে ওয়াটার লেভেল নিচে চলে যাচ্ছে। আমরা এ স্টাডিটা করেছি পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডেটা নিয়ে।

“আমরা দেখিয়েছি- সবখানে নয়, কিছু স্থানে এক্সট্রাক্টস অব বেনিফিট পাওয়া যাচ্ছে। এখানে বাড়তি পানি মাটির নিচে জমা হচ্ছে; একটা বেনিফিট হচ্ছে ফসল উৎপাদনে।”

বর্ষাকালে যত বেশি পানি ধরে রাখা সম্ভব হবে, পরে তত বেশি ব্যবহার করা সম্ভব হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “এটা কিন্তু সব জায়গায় হয় না। এ জায়গাগুলো নর্থ বেঙ্গলের কিছু জায়গা; যশোরের কিছু এলাকা রয়েছে- যেখানে ভূতাত্ত্বিক অবস্থাটা অনুকূলে রয়েছে, সেসব জায়গায়। এর বেনিফিট পাব।

“এ জিনিসটাই এখানে হাইলাইট করেছি। এজন্য স্টাডি করতে হবে, মেকানিজমগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে।”

সময়ের সঙ্গে খাদ্যোৎপাদন বাড়ছে, সেই সঙ্গে ভূগর্ভস্থ পানিতে চাপও বাড়ছে উল্লেখ করে গবেষক ড. আনোয়ার জাহিদ বলেন, “কোথাও কোথাও রিচার্জ হচ্ছে, কোথাও কোথাও রিচার্জ হচ্ছে না। যেসব জায়গায় রিচার্জ হচ্ছে না, সেসব জায়গায় সরকার চিন্তা করছে আর্টিফিসিয়ালি বৃষ্টির পানি নিয়ে স্টোরেজ বাড়াতে।”

‘গবেষকরা দেখিয়েছেন- কিছুটা ফ্লাড মডারেশন হয়’

‘বেঙ্গল ওয়াটার মেশিন’ গবেষণা নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের তরফে বুয়েটের বন্যা ও পানি ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক জি এম তারেকুল ইসলামের পর্যবেক্ষণ জানতে চাওয়া হয়েছিল।

প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেছেন, “কাল্পনিকভাবে দেখলে- তিনটি নদীর পানি যদি আটকে রাখা হত, তাহলে ৯ মিটার উচ্চতা হত, তিন তলা বিল্ডিংয়ের সমান। এ বিশাল পানি বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এটাও ঠিক, বাংলাদেশের গ্রাউন্ড ওয়াটার রিজার্ভ লার্জেস্ট ইন দ্য ওয়ার্ল্ড। মধ্যপ্রাচ্যে যেমন মাটি খুঁড়লে তেল বের হয়, বাংলাদেশে মাটি খুঁড়লেই গ্রাউন্ড ওয়াটার বের হয়; যা দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে সাহায্য করছে।

“তবে সব কিছুর একটা সীমা রয়েছে। যে পরিমাণ রিচার্জ হয়, তার চেয়ে বেশি উত্তোলন করলে এটা ডিক্লাইন করবে। যেখানে গ্রাউন্ড ওয়াটার পূরণ হয়ে যাচ্ছে, সেখানে (উত্তোলনে) কোনো ঝুঁকি নেই। অতিমাত্রায় যেখানে হচ্ছে, সেখানে আর সম্ভব না।“

বন্যার বেলায়ও ‘বেঙ্গল ওয়াটার মেশিন’ প্রক্রিয়ার কারণে সুফল পাওয়ার কথা গবেষণায় উঠে এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা তো ফ্লাডপ্লেইন এরিয়ায় (এখানে রিচার্জ হবে)। রিচার্জ হতে হলে শুধু বৃষ্টির পানি দিয়ে সম্ভব না, পানি থাকতে হবে, দাঁড়াতে হবে; সেখানে এর পটেনিশিয়াল আছে। ...ওনারা ডেটা দিয়ে দেখিয়েছেন, এটা কিছুটা ফ্লাড মডারেশন হয়; যেহেতু কিছু পানি ভেতরে ঢোকে।”

অধ্যাপক তারেকুল বলেন, “গবেষকরা দেখিয়েছেন, ওই (ভূ-গর্ভস্থ) পানি যদি না তুলতাম, তাহলে বঙ্গোপসাগরে চলে যেত। এখন ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারের কারণে তা আর সেখানে যাচ্ছে না, কৃষিতে ব্যবহার হচ্ছে। বন্যার পানি এলে তার কিছুটা মাটি দিয়ে আবার ভূ-গর্ভে প্রবেশ করছে। তাতে ফ্লাড কিছুটা মডারেশন হচ্ছে।”