এর মধ্যে যুক্তরাজ্যে ৩৪৩টি, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২২৮টি এবং যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে ৯টি সম্পত্তি রয়েছে।
Published : 17 Oct 2024, 09:05 PM
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার পরিবারের নামে দেশ-বিদেশে থাকা ৫৮০টি বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, জমিসহ স্থাবর সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছে আদালত।
এর মধ্যে যুক্তরাজ্যে ৩৪৩টি, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২২৮টি এবং যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে ৯টি সম্পত্তি রয়েছে।
এছাড়া তার নামে সংযুক্ত আরব আমিরাতে দুটি ব্যাংকের হিসাব ও বাংলাদেশের একটি ব্যাংকের হিসাব আদালত অবরুদ্ধ রাখতে বলেছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন এ আদেশ দেন।
সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রী রুকমিলা জামানের মালিকানাধীন স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি জব্দ ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার জন্য গত বুধবার এই আবেদন করেন দুদকের উপপরিচালক রাম প্রসাদ মণ্ডল। বৃহস্পতিবার ওই আবেদনের ওপর শুনানি করেন দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর।
জব্দ হওয়া সম্পত্তির মধ্যে চট্টগ্রামের দুটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। বিদেশের স্থাবর সম্পদ জব্দের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের এইচএম ল্যান্ড রেজিস্ট্রি, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ল্যান্ড ডিপার্টমেন্ট ও যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট রেজিস্ট্রার, এবং ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের ক্ষেত্রে দুবাই ইসলামিক ব্যাংক, ফার্স্ট আবুধাবি ব্যাংক এবং বাংলাদেশের জনতা ব্যাংকের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছে আদালত।
দুদকের আবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্যে ৩৪৩টি, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২২৮টি এবং যুক্তরাষ্ট্রে নয়টিসহ অন্যান্য দেশেও বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট/জমিসহ অন্যান্য স্থাবর সম্পদ রয়েছে সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার পরিবারের। ২০১৫ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে এসব সম্পদ কেনা হয়েছে। ওই সময় তিনি বাংলাদেশ সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।
চট্টগ্রামের প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর ছেলে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ২০১২ সালে তার বাবার আসন থেকে প্রথমবার সংসদে যান।
তিনি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। তার স্ত্রী রুকমিলা জামান গত ২০১৭ হতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। ওই ব্যাংক থেকে তাদের নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে আত্মসাতের একটি অভিযোগও তদন্ত করছে দুদক।
আদালতে দুদকের দেওয়া আবেদনে বলা হয়, সাইফুজ্জামান বা তার পরিবারের সদস্যরা বিদেশে সম্পদ অর্জনের বিষয়টি বাংলাদেশে তাদের আয়কর নথিতে বলেননি। বিদেশে সম্পদ কেনার জন্য নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতিও তিনি নেননি। নির্বাচনি হলফনামায় বিদেশে সম্পদ অর্জনের কোনো তথ্য দেননি সাইফুজ্জামান।
“অনুসন্ধানকালে সাইফুজ্জামান চেৌধুরী সরকারের প্রতিমন্ত্রী/মন্ত্রী থাকাকালে ও ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির চেয়াম্যান এবং তার স্ত্রী রুকমিলা জামানের চেয়ারম্যান হিসাবে ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অপরাধলব্ধ অর্থ অর্জনপূর্বক তা স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রুপান্তর করে বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহারপূর্বক বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার করে লেয়ারিং এর আশ্রয়ে যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাষ্ট্রে সম্পদ ক্রয়ের মাধ্যমে ইন্টিগ্রেশন সম্পন্ন করেন।
“একইভাবে তিনি ও তার স্ত্রী রুকমিলা জামান সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন ব্যাংকে ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের নামে হিসাব খুলে হিসাবসমূহের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ লেনদেন করেছেন বলে প্রতীয়মান হয়।”
এর আগে গত ৭ অক্টোবর এই দম্পতির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত। এছাড়া তাদের সব ধরনের ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
গত ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে আগে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য প্রকাশ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল।
এর জবাবে কয়েক মাস পর আওয়ামী লীগের এ নেতা সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন, তার বাবা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু পাকিস্তান আমল থেকেই বিদেশে ব্যবসা করেন। তিনি সেই ব্যবসার উত্তরাধিকারী। যুক্তরাষ্ট্রে পড়ার সময়ও তিনি ব্যবসা করেছেন। যুক্তরাজ্যে তার আয়কর নথিও আছে।
পুরনো খবর
জাবেদের সম্পত্তির তদন্তে উদ্যোগ কী, জানতে চান ব্রিটিশ এমপি