বন্দি প্রত্যার্পন চুক্তিটিও সরল বিশ্বাসে প্রতিপালনের ইচ্ছাও ভারতের নেই বলে মনে করেন তিনি।
Published : 11 Feb 2025, 09:17 PM
ভারত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে তাকে বাংলাদেশ সম্পর্কে ‘কুৎসা ও উস্কানিমূলক’ কথা বলতে দিয়ে এদেশে ’অস্থিতিশীলতা’ তৈরির প্রচেষ্টা করছে ও করবে বলে অভিযোগ করেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
বন্দি প্রত্যার্পন চুক্তিটিও সরল বিশ্বাসে প্রতিপালনের ইচ্ছাও ভারতের নেই বলে মনে করছেন তিনি।
মঙ্গলবার জুলাই-অগাস্টের অভ্যুত্থানের সময় সংগঠিত অপরাধের বিচারের চলমান প্রক্রিয়ার অগ্রগতি জানাতে সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন আইন উপদেষ্টা। সেখানে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা ও ভারত প্রসঙ্গে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ভারতে থাকা শেখ হাসিনার প্রতি অন্ধ বিশ্বাসের কারণে আওয়ামী লীগের ’অনুশোচনাহীন’ নেতাকর্মীরা দেশে অস্থিতিশীলতার নতুন চক্রান্ত করছেন। সেটির সুস্পষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ শুরু করা হয়েছে।
শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সরকার কতটা আশাবাদী, এই প্রশ্নের উত্তরে আইন উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের আইনে পলাতকের বিচারের বিধান রয়েছে। আমরা আনার সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। ভারতের মনোভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে তারা নানান অজুহাতে এটাকে নাকচ করার চেষ্টা করবে।
”বরং তারা শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে তাকে বাংলাদেশ সম্পর্কে কুৎসামূলক, উস্কানিমূলক কথা বলতে দিয়ে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির প্রচেষ্টা করছে এবং করবে। বন্দি প্রত্যার্পন চুক্তিটি সরল বিশ্বাসে প্রতিপালনের ইচ্ছা ভারতের রয়েছে বলে আমাদের মনে হয় না।”
ভারতে থেকে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে দেওয়া হাসিনার সবশেষ ভাষণের সমালোচনা করে আইন উপদেষ্টা বলেন, ”শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকার সময় যে ঔদ্ধত্ব নিয়ে কথা বলতেন গত ৬ ফেব্রুয়ারি ঠিক একই টোনে কথা বলেছেন। গণঅভ্যুত্থানে আমাদের যন্ত্রণার স্মৃতিগুলো নিয়ে তিনি পরিহাস করেছেন। এইআই দিয়ে আবু সাঈদের হত্যার দৃশ্য বানান হয়েছে বলে তিনি বলেছেন। এগুলো কি সহ্য করা যায়? সবাইকে উস্কানি দিয়েছেন প্রতিপক্ষের বাড়িতে আগুন দিতে।
“আশ্চর্য লাগে আমার। আল্লাহ কি মানুষটার মধ্যে মিনিমাম অপরাধবোধ দেয় নাই। যার মধ্যে মিমিমাম অপরাধবোধ থাকে না উনি তো যেকোনো কিছু করতে পারেন। আওয়ামী লীগের নেতা ও কর্মীদের অন্ধ বিশ্বাস রয়েছে ওনার ওপর। তারাও একই টোনে কথা বলে। তারা দেশে নানা ধরনের ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডে এখন লিপ্ত।”
ছাত্র-জনতার তুমুল গণ আন্দোলনের মুখে গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা ভারতে চলে যান। তখন থেকে তিনি দিল্লিতে অবস্থান করছেন। তাকে ফিরিয়ে দেশে বিচারের মুখোমুখি করতে প্রতিবেশী দেশটিকে ডিসেম্বরে চিঠি দিয়েছে সরকার। তবে এ নিয়ে ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।
এ নিয়ে কূটনৈতিক পর্যায়ে চিঠি চালাচালির মধ্যে গত ৬ ফেব্রুয়ারি দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা অডিও ভাষণ দেন। তার এ ভাষণকে কেন্দ্র করে ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ও শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদন ভাঙচুর করার পর আগুন দেওয়া হয়। এরপর দেশজুড়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ও দলীয় কার্যালয়সহ শেখ পরিবারের নামে থাকা স্থাপনা ভাঙচুর করা হয়।
এসব ঘটনার মধ্যে গাজীপুরে সাবেক মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা করতে গিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা পাল্টা হামলার শিকার হয়। এরপর সারাদেশে ’অপারেশন ডেভিল হান্ট’ শুরুর ঘোষণা দেয় সরকার। শনিবার শুরু যৌথ বাহিনীর এ অভিযানে এক হাজার ৭০০ জনের বেশি গ্রেপ্তার হয়েছে, যাদের বেশির ভাগেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী।
এ অভিযান নিয়ে এক প্রশ্নে আইন উপদেষ্টা বলেন, ইতোপূর্বে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিরোধী দল দমনে চালানো অভিযানগুলোর মত এ অভিযান নয়। আওয়ামী লীগের উগ্র নেতাকর্মীদের দমন করে দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে এটি পরিচালনা করা হচ্ছে।
“খুব সতর্কতার সঙ্গে এই অভিযান চলছে। গ্রেপ্তারের সময় কারও উপর যাতে নির্যাতন না করা হয় বা কেউ যাতে আঘাতপ্রাপ্ত না হন সেদিকে নজর রাখছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।”
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় ২০০ নেতা ও তৃণমূলের এক হাজার কর্মী ভারত, বিশেষ করে তাদের কলকাতায় অবস্থান নিয়ে বিবিসির এক প্রতিবেদনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “চুক্তি অনুযায়ী সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে প্রত্যার্পন করতে বলেছি। ইন্টারপোলের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনার রেড এলার্ট জারি নিয়ে আমাদের তরফ থেকে যা করার সেটা করেছি। এখন ইন্টারপোল রেড এলার্ট জারি করেছে কি না সেটার সুনিশ্চিত তথ্য নেই।
“বিচারকাল চলা অবস্থায় আদালত তাদেরকে হাজির করতে বললে সাথে সাথে ভারতের কাছে বন্দি প্রত্যার্পন চাওয়া হবে।”