এতে রাজধানীর ব্যস্ততম সড়কের চারপাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
Published : 13 Sep 2024, 08:06 PM
সনাতন ধর্মালম্বীদের নির্যাতন, ঘর-বাড়ি ও ধর্মীয় উপাসানালয়ে হামলার বিচারে শুধু আশ্বাস নয়, দাবি বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়ে আবারও রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।
শুক্রবার বিকাল ৪টার দিকে হিন্দুদের কয়েকটি সংগঠনের ব্যানারে কয়েকশ মানুষ শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এতে সড়কের চারপাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ছুটির দিনেও যান চলাচলে এর প্রভাব পড়ে রাজধানীর অন্যান্য সড়কে।
প্রায় তিন ঘণ্টা বিক্ষোভ শেষে তারা সন্ধ্যার পর শাহবাগ ছেড়ে যায়।
ট্রাফিক রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মেহেদী হাসান বলেন, "সন্ধ্যার পর তারা চলে গেছে। এরপর সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।"
বিক্ষোভকালে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নির্যাতন, ধর্মীয় উপাসনালয় ও ঘর-বাড়িতে হামলার অভিযোগ এনে তা বন্ধসহ আট দফা দাবি জানিয়ে বিভিন্ন ব্যানার নিয়ে সড়কে অবস্থান নেন ও নানা স্লোগান দিতে থাকেন।
হিন্দু জাগরণ মঞ্চ, জাতীয় হিন্দু ফোরাম, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটসহ কয়েকটি সংগঠনের তাদের সড়কে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। বিক্ষোভকারীদের বিভিন্ন ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরে বিভিন্ন দাবি জানাতে শোনা যায়।
তাদের অভিযোগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার এক মাস পেরিয়ে গেলেও তাদের আট দফা দাবির বাস্তবায়ন করা হয়নি। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ হামলার শিকার হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মন্দির ভাঙচুর করা হচ্ছে, অথচ অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।
সরকার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ভুলিয়ে রেখেছে মন্তব্য করে একজন শিক্ষার্থী বলেন, “আমাদের আট দফা দাবি রয়েছে। এরমধ্যে সারাদেশে সনাতনী পরিবারের উপর যেসব হামলা হয়েছে প্রত্যেকটি ঘটনার বিচার করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করাসহ নিরাপত্তায় আলাদা আইন করতে হবে। হিন্দুদের সুরক্ষায় আলাদা কমিশন গঠন করা হোক। এছাড়া, দুর্গাপূজায় পাঁচ দিনের ছুটি দিতে হবে।”
তিনি বলেন, “আমরা এ দেশের নাগরিক, বাইরের কেউ না। আমরা নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে স্বাধীনভাবে নিরাপদে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা চাই। আমাদেরকে বার বার আশ্বস্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু প্রতিনিয়তই কোথাও না কোথাও হামলার ঘটনা ঘটছে।”
আরেক বিক্ষোভকারী বলেন, “কিছু বললেই আমাদেরকে ভারতের দালাল বলা হয়। আমরা ভারতের দালালই যদি হব, তাহলে কেন আজ আমি শাহবাগে? এটা আমার দেশ, আমার দেশ আমি ছাড়ব না। অসাম্প্রদায়িক দেশের কথা বলা হলেও কথা ও কাজে কোন মিল দেখছি না। সরকার আশ্বাস দিচ্ছে কিন্তু প্রতিফলন এখন পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছি না।”
এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ডিএমপির ট্রাফিক-শাহবাগ জোনের সহকারী কমিশনার মেহেদি হাসান শাকিল বলেন, “এখনও শাহবাগ অবরোধ করে রাখা হয়েছে। আমরা বিকল্প রুট ব্যবহার করে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছি।”
ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনের মুখে গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেশত্যাগ করার পর থেকে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনাসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার পাশাপাশি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অনেকের বাড়িঘরেও হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
এর পর থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন হামলা ও নির্যাতনের বিচার দাবি করে আসছে। এর আগেও কয়েকদফা শাহবাগ অবরোধ করে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন সংগঠন। এর মধ্য থেকে কয়েকটি সংগঠনের প্রতিনিধিরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ সরকার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দাবি তুলে ধরেন।
“সরকারের পক্ষ থেকে দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলেও তা মানা হয়নি এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উপর এখনও হামলা হচ্ছে” অভিযোগ এনে আবারও এদিন সড়কে নামেন তারা।
শুক্রবার বিক্ষোভকালে তাদের তোলা আট দফা দাবির মধ্যে রয়েছে-সরকার পতনের পর সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনাগুলো দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচার করা, সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে হিন্দু ফাউন্ডেশনে উন্নীত করা, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকেও ফাউন্ডেশনে উন্নীত করা, দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন যথাযথ বাস্তবায়ন, দুর্গাপূজায় ছুটি পাঁচ দিন করা।