মোখা: এলএনজি টার্মিনাল বন্ধের পর গ্যাস-বিদ্যুতে ভোগান্তি

মঙ্গলবারের আগে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা কম।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 May 2023, 02:32 PM
Updated : 13 May 2023, 02:32 PM

ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ ধেয়ে আসার খবরে ভাসমান দুটি এলএনজি টার্মিনাল বন্ধ হওয়ার পর ঢাকাসহ সারাদেশে গ্যাস ও বিদ্যুৎ নিয়ে সংকট দেখা দিয়েছে।

শনিবার দেশের বিভিন্ন স্থানে রান্নার চুলায় যেমন গ্যাস মিলছে না, তেমনই ঘন ঘন বিদ্যুৎ যাচ্ছে শহরে। যদিও এতদিন গ্রামাঞ্চলে লোড শেডিং দিয়েও শহরকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের আওতায় রাখা হয়েছিল।

দুপুরের পর থেকেই ঢাকার মিরপুর, ধনিয়া, যাত্রাবাড়ী, কাজলাসহ বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংকটের কথা জানিয়ে মাইকিং করা হয়েছে। ‘সময়ে সময়ে বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করবে’ বলে জানিয়ে দেওয়া হয় সেই ঘোষণায়।

খিলগাঁও তালতলা এলাকার বাসিন্দা সাজিয়া আফরিন জানান, সকাল থেকেই ঘণ্টায় ঘণ্টায় বিদ্যুৎ আসা যাওয়া করছে। ঘূর্ণিঝড় আসতে আরও একদিন বাকি।

“এরইমধ্যে যদি এই পরিস্থিতি হয়, তাহলে কালকে কী হবে?”

বিদ্যুতের পাশাপাশি সকাল থেকে ঢাকার বেশির ভাগ বাসাবাড়িতে গ্যাস চলে যাওয়ার খবরও আসছে। আর বিদ্যুৎ যাওয়া-আসার কারণে অনেক বাসায় পানি সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কুমিল্লা প্রতিনিধি আব্দুর রহমান জানান, শনিবার চাঁদপুরে অবস্থান করে সেখানে তিনি লোড শেডিংয়ের ‘ভয়াবহ চিত্র’ দেখেছেন। দিনে অন্তত ১২ ঘণ্টা সেখানে বিদ্যুৎ থাকছে না। কুমিল্লা শহরে সাধারণত বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও শুক্রবার রাত থেকে সেখানেও বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে।

নারায়ণগঞ্জ শহরে শনিবার সারাদিন ১০ থেকে ১২ বার বিদ্যুৎ গেছে বলে জানান নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি সৌরভ হোসাইন সিয়াম।

দেশের আরও কয়েকটি জেলা শহর থেকেও একই ধরনের খবর এসেছে।

যে কারণে এই সংকট

দেশে গ্যাসের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজার থেকে এলএনজি আমদানি করে ২৫ শতাংশেরও বেশি চাহিদা পূরণ করা হয়। আমদানি করা এসব এলএনজি মূল ভূখণ্ডে নিয়ে আসার জন্য মহেশখালীর অদূরে দুটি ভাসমান টার্মিনাল স্থাপন করা আছে।

ঘূর্ণিঝড় 'মোখা’ ধেয়ে আসতে থাকায় ভাসমান টার্মিনাল দুটি শুক্রবার রাত ১১টার দিকে নির্ধারিত স্থান থেকে গভীর সমুদ্রের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ফলে ওই দুটি টার্মিনাল থেকে এতোদিন দৈনিক গড়ে যে ৭০০ এমএমসিএফ গ্যাস আসত তা বন্ধ হয়ে গেছে।

বিদ্যুৎ মন্ত্রণালায়ের তরফে দুঃখ প্রকাশ করে এক বার্তায় বলা হয়, ঝড়ের পরিস্থিতি বিবেচনা করে গভীর সমুদ্রে সরিয়ে নেওয়া টার্মিনাল দুটি দ্রুত পুনঃস্থাপন করে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক করা হবে। তবে মধ্যবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম, মেঘনাঘাট, হরিপুর এবং সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় গ্যাস চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ বা আংশিক চালু থাকতে পারে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের মে মাসের হিসাব মতে, এখন দেশে দৈনিক ১১ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট থেকে ১৩ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। এসব বিদ্যুতের প্রায় ৪৯ শতাংশই আসে বিভিন্ন গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে। গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় শিল্প কারখানার পাশাপাশি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উপাদনও ব্যাহত হচ্ছে।

সংকট কাটবে কবে?

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ রোববার উপকূল অতিক্রম করবে। তবে এর প্রভাবে আরও কয়েকদিন সংকট থাকার কথা বলছেন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বা পিডিবির উৎপাদন বিভাগের সদস্য এস এম ওয়াজেদ আলী সরদার।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মোখার প্রভাবে কয়েকদিন সমস্যা থাকবে। কেবল এলএনজি বন্ধ থাকার কারণে দুই হাজার মেগাওয়াটের চেয়ে বেশি উৎপাদন কমে যেতে পারে।

“দিনের বেলায় সর্বোচ্চ ১১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা গেছে। রাতের বেলায় হয়তো সাড়ে ১২ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন করা সম্ভব হবে। আগামী ১৬ মে’র আগে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে মনে হচ্ছে না।”

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশীদ মোল্লাহ্ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এলএনজির সরবরাহ বন্ধ হওয়ার কারণে জাতীয় গ্রিডে দৈনিক প্রায় সাড়ে ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস কমে গেছে। এলএনজি থেকে তিতাস ৩৫০ থেকে ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পেত, যা এখন কমে গেছে। এটাই বর্তমান গ্যাস সংকটের কারণ।

“সবমিলিয়ে সাড়ে ১৬০০ থেকে ১৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পেত তিতাস। আজকে সেখানে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস কম পাওয়া গেছে।”