হাই কোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে আপিল বিভাগ বিষয়টি আবার শুনবে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যেতে বলেছে সর্বোচ্চ আদালত।
Published : 10 Jul 2024, 12:43 PM
সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটার বিরোধিতায় আন্দোলনের মধ্যে সব পক্ষকে চার সপ্তাহ স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
কিছু পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনা দিয়ে সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, কোটা নিয়ে এখন কোনো কথা বলা যাবে না। হাই কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে আপিল বিভাগ আবার বিষয়টি শুনবে। এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ৭ অগাস্ট।
পৃথক দুটি আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ বুধবার স্থিতাবস্থা জারির এ আদেশ দেয়।
আপিলকারী রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, আপিলকারী দুই শিক্ষার্থীর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক। রিটকারীর পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনসুরুল হক চৌধুরী।
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আপিল বিভাগ সাবজেক্ট ম্যাটারে স্থিতাবস্থা জারি করেছে। ফলে হাই কোর্টের রায়ের আগে যেমন ছিল, সব তেমন থাকবে। তার আগে কোটা বাতিল-সংক্রান্ত ২০১৮ সালের পরিপত্র কার্যকর ছিল, সেটা থাকবে।”
প্রধান বিচারপতি তার আদেশের সঙ্গে তিনটি পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনা দেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তিনি ক্লাসে ফিরে যেতে বলেন। শিক্ষকদের বলেন ছাত্রদের বুঝিয়ে ক্লাসে ফিরিয়ে নিতে। আর সংক্ষুব্ধদের উদ্দেশে বলেন, কোনো শিক্ষার্থী যদি মামলায় যুক্ত হতে চান, আইনজীবীর মাধ্য্যমে যুক্ত হতে পারবেন, শুনানি হলে তখন তাদের কথাও শোনা হবে।
এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, আপিল বিভাগ প্রয়োজনে সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাই কোর্টের রায় সংশোধন কিংবা এ বিষয়টি নিয়ে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটিও করতে পারে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা ওই পরিপত্রে বলা হয়, নবম গ্রেড (আগের প্রথম শ্রেণি) এবং দশম থেকে ১৩তম গ্রেডের (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হল। এখন থেকে মেধারভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে।
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা বাতিল হলেও তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে কোটা ব্যবস্থা আগের মতই বহাল থাকবে বলে ওই পরিপত্রে বলা হয়।
ওই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন।
গত ৫ জুন সেই আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাই কোর্ট বেঞ্চ কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়। পরে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে।
গত ৪ জুলাই এ বিষয়ে আপিল বিভাগে শুনানির দিন ধার্য ছিল। তবে রিটকারীর পক্ষে সময়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাই কোর্টের রায় আপাতত বহাল রাখে আপিল বিভাগ।
এদিকে গত মঙ্গলবার দুই শিক্ষার্থীও হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য অনুমতি চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে আবেদন করেন। চেম্বার জজ বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম তাদের হলফনামা করার অনুমতি দেন এবং বিষয়টি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য বুধবারের কার্যতালিকায় রাখেন।
হাই কোর্টের রায়ের পর থেকেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নতুন করে আন্দোলনে নামেন চাকরিপ্রত্যাশী তরুণরা। ১ জুলাই থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে তারা কোটা বাতিলসহ চার দফা দাবিতে বিক্ষোভ করছিলেন।
এর অংশ হিসেবে রবি ও সোমবার ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড় অবরোধ করে তারা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করেন। তাদের অবরোধের কারণে শহরজুড়ে ব্যাপক যানজটে নাকাল হতে হয় নাগরিকদের।
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে এই আন্দোলন সমন্বয়ের জন্য ৬৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছেন আন্দোলনকারীরা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে তারা চার দফা দাবিকে এক দফায় নামিয়ে আনেন।
এখন তাদের দাবি হল- সকল গ্রেডে সকল প্রকার ‘অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক’ কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ‘ন্যূনতম পর্যায়ে’ এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতিকে সংশোধন করতে হবে৷
এই দাবিতে বুধবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সারাদেশে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচির ঘোষণা আসে ওই সংবাদ সম্মেলন থেকে।
সেই ঘোষণা অনুযায়ী বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে আন্দোলনকারীরা ঢাকার বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাদের অবরোধের কারণে শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাব মোড়, মৎস্য ভবন মোড়, জিরো পয়েন্ট, মহাখালীর আমতলীতসহ বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দেশের বিভিন্ন স্থানে মহাসড়ক ও রেলপথও তারা অবরোধ করেন।
তাদের এই আন্দোলনের মধ্যেই সুপ্রিম কোর্ট থেকে কোটা নিয়ে স্থিতাবস্থা জারির আদেশ আসে। তবে শাহবাগে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, ‘আইন করে কোটা সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত’ তাদের আন্দোলন চলবে।
বিএনপিসহ সমমনা বিভিন্ন দল শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীদের এ আন্দোলনে সমর্থন দিচ্ছে। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে এই আন্দোলনকে বলা হচ্ছে ‘অযৌক্তিক’।
পুরনো খবর
কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে পথে পথে অবরোধ, ভোগান্তি
কোটার বিরোধিতা: এবার সারাদেশে 'সর্বাত্মক অবরোধের' পরিকল্পনা
মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের রায় আপাতত বহাল
মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল অবৈধ: রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন
মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ: হাই কোর্টের রায়
বহালের আন্দোলনের মধ্যেই কোটা বাতিলের পরিপত্র জারি
কোটা বাতিল পুনর্বিবেচনা করতে হবে: মোজাম্মেল হক
‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল অবৈধ’: রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ঢাবিতে বিক্ষোভ