“জাতীয় নির্বাচনের অভিজ্ঞতার আলোকে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উপজেলা পরিষদে আরো সুন্দর নির্বাচন উপহার দেবে,” বলেন তিনি।
Published : 16 Feb 2024, 06:18 PM
মিয়ানমার সীমান্ত থেকে কেউ অস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশে ঢুকবে, ‘সেই অবস্থা নেই’ বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
শুক্রবার বিকালে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে দুটি প্রশ্ন রাখা হয়, যার একটি মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের মধ্যে সীমান্তে বাংলাদেশ কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছে কি না। আরেক প্রশ্নে জানতে চাওয়া হয়, মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষীদের অস্ত্র রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপের কাছে পৌঁছেছে কি না।
জবাবে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, “প্রথম কথা হল, সারা মিয়ানমারেই শুধু আরাকান আর্মি নয়, অনেকগুলো তাদের এথনিক গ্রুপ তৈরি করে যুদ্ধে লিপ্ত আছে। আরাকান আর্মি আমাদের এ অঞ্চলে যুদ্ধে লিপ্ত আছে।
“এ অঞ্চলে যুদ্ধ করলে সেখানকার কিছু গোলাগুলির শব্দ আমাদের এখানে আসে। সেগুলো যেরকম সত্য, সেখানে সরকারি বাহিনী, বিজিপি এবং অন্যান্য সরকারি লোকজন ভয়ে আত্মরক্ষার্থে আমাদের দেশে পালিয়ে আসছিল, সেটাও আপনারা দেখেছেন।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমাদের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির একটিই কথা ছিল যে, ‘ফ্রেন্ডশিপ উইথ অল, মেলাইস উইথ নান’। আমরা সেই নীতি অবলম্বন করছি। তারা যতই গোলাগুলি করুক, আমরা প্রতিবাদ করছি। আমরা তাদেরকে আমাদের এলাকায় ঢুকতে দিচ্ছি না।
“আমাদের বিজিবির ওখানে ফোর্স আরো বাড়িয়েছি। আমাদের কোস্ট গার্ডকে ওখানে সজাগ রেখেছি। আমাদের নেভিও ওখানে সজাগ রয়েছে। আমাদের পুলিশ সেখানে সজাগ আছে। কাজেই যে ওখান থেকে এখানে আসবে, সেটি হবে না।”
কামাল বলেন, “আপনারা যেটা বলেছেন যে অস্ত্রপাতি, হ্যাঁ পরিত্যক্ত অবস্থায়… এগুলো হয়ত আরাকান আর্মি ওরাই হয়ত দুই চারটা এখানে নিয়ে আসছিল, এগুলো তাদের অন্য কোনো মোটিভ থাকতে পারে। সবই ধরা পড়েছে।
“এবং বিজিবি সবাইকে আটক করেছে। আপনারা নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। আমাদের বিজিবি খুব কঠোর অবস্থানে রয়েছে। কেউ অস্ত্র নিয়ে এখানে ঢুকলে- সেই অবস্থা এখানে নাই। আমরা সবাই সজাগ রয়েছি।”
‘বিএনপি অনেক কথাই বলে’
জেল থেকে বেরিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতারা সরকার পতনের যে আন্দোলনে কথা বলছেন, সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আসাদুজ্জামান খান বলেন, “তারা তো অনেক কথাই বলে। এদেশের মানুষ তাদেরকে প্রত্যাখান করেছেন। আমি সবসময় বলে আসছি, ধারাবাহিকভাবে আপনারা যদি বিশ্লেষণ করেন, ২০০১ এরপরে ২০০৮ এ তারা কতগুলো সিট পেয়েছে? ৩০টা সিট পেয়েছে।
“এরপর ২০১৪-তে তারা বয়কট করল। ২০১৮-তে তারা ৬টি সিট পেয়েছে। এবং তারা সুনিশ্চিত যে তারা যদি কোনো ষড়যন্ত্র না করতে পারে, কিংবা তাদের বিদেশি প্রভুরা যদি ইন্টারফেয়ার না করতে পারে; তাহলে তারা নির্বাচনে জিতবে না। এটা তারা জানতেন। সেজন্যই তারা এবারও নির্বাচনে আসেননি।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “তারা আগেও বলেছে, এই আগামী সোমবার দিন আগামী রবিবার দিন- একটা টাইম ঠিক করে দিত। আমাদের সরকার পতন হয়ে যাচ্ছে এবং খালেদা জিয়া যা বলবে, তাই হবে। এসমস্ত কথাগুলো আপনারা শুনেছেন।
“এদেশের মানুষ হাসছিল। এদেশের মানুষ তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, এটা যেমন সত্য। ঠিক তারাও যেসমস্ত প্রোগ্রাম দেয়, মানুষ এগুলোতে হাসে।”
‘ইউনূসের ব্যাপারটা সম্পূর্ণ আদালতের’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে এক সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল, নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘মিরপুরে ১৪ তলা গ্রামীণ পরিবারের যে ভবন সেখানে কয়েকটি দপ্তর সরকার জবরদখল করেছে’, তিনি আইনি সহায়তা চেয়েও পাননি বলেছেন?
জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, “স্পষ্ট করে বলতে পারি, আইনের বাইরে আমরা কিছু করছি না। ড. ইউনূসের ব্যাপারটা সম্পূর্ণ আদালতের ব্যাপার। আদালতের নির্দেশনা যেভাবে আসছে, সেভাবেই কাজ হচ্ছে। এর বাইরে সরকার কিংবা পুলিশ কেউ কিছু করছে না।”
উপজেলা নির্বাচন ‘সুন্দর’ হবে
চট্টগ্রাম সফরের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে এসেছি। এখানে কিছু বার্নিং ইস্যু হয়েছে। সেগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনাই আমরা করেছি। আপনারা জানেন, নির্বাচনে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী সারা বাংলাদেশে একটা সুন্দর, অবাধ নির্বাচন উপহার দিয়েছে নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে।
“যেটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীরও একটা স্ট্রং ভূমিকা ছিল যে, একটা সুন্দর অবাধ নির্বাচন হওয়ার। সেটি দেশবাসী লক্ষ্য করেছে। শুধু দেশবাসী না, সারা পৃথিবীর সবাই এটা লক্ষ্য করেছেন। একটা সুন্দর নির্বাচন হয়েছে।”
কামাল বলেন, “কেউ এই ব্যাপারে আজকে পর্যন্ত কিছু বলতে পারেনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী টানা চতুর্থবারের মত দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি দেশের শাসনভার নিয়েছেন। এবং তার যে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা এটা আগের মতই চলবে। আমরা মনে করি বাংলাদেশের জন্য একটা আর্শীবাদ স্বরূপ।”
আসন্ন উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের পার্টি থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, জাতীয় নির্বাচন ছাড়া অন্য নির্বাচনে আমরা নৌকা প্রতীক আর ব্যবহার করব না। আমাদের সিদ্ধান্তটা সেরকমই। সব নির্বাচনে আমাদের ডিরেকশন এটাই, যেহেতু নৌকা প্রতীক থাকবে না।
“যে যার যার প্রতীক নিয়ে ফাইট করবে। তারা কে কতখানি জনপ্রিয়, সেটাই প্রমাণ হবে। আমরা মনে করি, জনপ্রিয় লোকগুলো নির্বাচনে আসুক। জনপ্রিয় লোকগুলো নির্বাচনে আসলে, তাদের এলাকা ডেভলপ করতে তারা বাধ্য হবে এবং তারা করবে।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আর জাতীয় নির্বাচন যেভাবে হয়েছে আমাদের, সেই অভিজ্ঞতার আলোকে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আরো সুন্দর একটা নির্বাচন উপহার দেবে। সেই ধারাবাহিকতা তারা রক্ষা করে চলবে।”