কাটা গাছের ক্ষতিপূরণ এবং রাজধানীর পরিবেশ সংরক্ষণে দুই লাখ গাছ রোপণ শুরু করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।
মঙ্গলবার তেজগাঁওয়ের মেয়র আনিসুল হক সড়কে ১২১টি গাছ রোপণের মধ্য দিয়ে এ কর্মসূচি শুরু করেন মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
লাগানো গাছগুলো যাতে বেড়ে উঠতে পারে, সেজন্য সবার সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, একটি শিশুকে বড় করতে যেমন সবার সহযোগিতা দরকার, তেমনি প্রতিটি গাছ বড় করতেও নগরবাসীর সাহায্য প্রয়োজন।
“নগরবাসীকে অনুরোধ করছি, যেসব গাছ লাগাব, সেগুলোর মাথাটা ভেঙে দেবেন না। তাদের বেড়ে উঠতে সহায়তা করুন। পাশাপাশি আমাদের কাউন্সিলরদের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা হবে, গাছ লাগানোর পর কাউন্সিলররা তদারকি করে কোন ওয়ার্ডে কতটি গাছ বাঁচিয়েছেন। সেটির একটি পুরষ্কার দেওয়া হবে।”
রাজধানীতে দুই সিটি করপোরেশনের নেওয়া বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের জন্য অনেক এলাকায় ফুটপাত, সড়ক বিভাজকের গাছ কাটা পড়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন, নাগরিকদের সমালোচনার মধ্যে দুই লাখ গাছ রোপণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মেয়র।
সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন শুরু করে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বৃক্ষরোপণ অভিযানের রূপরেখা তৈরি করতে স্থপতি, নগর পরিকল্পনাবিদ, বন বিভাগসহ বিভিন্ন পেশাজীবীদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে সিটি করপোরেশন। কোন কোন জায়গায় কী গাছ লাগানো হবে তার একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ফুটপাতে একটি গাছ থেকে ২০ ফুট দূরত্বে আরেকটি গাছ লাগানো হবে।
“ফুটপাতে ছাতিম গাছ এবং কাঠ বাদাম গাছ লাগানো হবে ছায়া দেওয়ার জন্য। আর বকুল গাছ লাগানো হবে সুগন্ধ দেওয়ার জন্য। যেখানে খালি জায়গা পাওয়া যাবে সেখানে কৃষ্ণচূড়া, সোনালু গাছ লাগানো হবে।”
মেয়র আশা করছেন, এসব গাছ বড় হলে ঢাকায় বায়ুদূষণ, অতিরিক্ত গরম কমে যাবে এবং ভূমি সংরক্ষণ, কার্বন কমিয়ে গাছ ঢাকার পরিবেশ সংরক্ষণে ভূমিকা রাখবে।
গাছের যত্ন নেওয়ার জন্য ১০০ জন মালি নিয়োগ করবে সিটি করপোরেশন। তারা প্রত্যেকে এক কিলোমিটার এলাকার সব গাছের যত্ন নেবেন।
মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, নতুন ড্যাপে নিয়ম করা হয়েছে, বাড়ি করতে হলে অন্তত ৩০ শতাংশ জায়গা ছেড়ে করতে হবে। ওই জায়গায় অন্তত একটি করে গাছ লাগানো যেন বাধ্যতামূলক করা হয়, তা নিশ্চিত করতে রাজউককে চিঠি দিয়েছে উত্তর সিটি।
“আমি অনুরোধ করব, এক কাঠায় একটি গাছ, সেটি যেন রাজউক বাস্তবায়ন করে। ডেভেলপার যারা আছেন, আপনারাও খালি জায়গায় গাছ লাগাবেন।”
স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, “পরিকল্পিত সবুজায়ন ছাড়া নগর বাঁচানো যাবে না। বৃক্ষরোপের এই কর্মসূচি রাজধানীতে বিরাট পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে। তবে একটি প্রশ্ন থাকে, ঢাকায় কত শতাংশ গাছ ছিল, কত শতাংশ গাছ আছে। এজন্য একটি শুমারি করা হবে।
“এ বিষয়ে আমরা স্যাটেলাইট ইমেজ স্টাডি করে ধারণা দিচ্ছি। কিন্তু আমি মনে করি, বন বিভাগকে নিয়ে একটি নগর গাছ শুমারি করা প্রয়োজন। কোথায় কী ধরনের গাছ রয়েছে, কোনটা বদলাতে হবে। কোথায় ওই এলাকার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী কি গাছ নির্ধারণ করা দরকার, সেজন্য শুমারি করা দরকার। এটা করা হলে ত্রিশ শতাংশ গাছ কীভাবে ৫ শতাংশে নামল, সেটাকে কীভাবে আবার ২৫ শতাংশে নেওয়া যায়, সে পরিকল্পিত উদ্যোগ নেওয়া যাবে।”
মেয়র আতিকুল ইসলামের মেয়ে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ‘চিফ হিট অফিসার’ বুশরা আফরিনও উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে।
অন্যদের মধ্যে উত্তর সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, নগর পরিকল্পনাবিদ আকতার মাহমুদ, প্রধান বন সংরক্ষক আমিন হোসেন চৌধুরী এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন।