“প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা মর্মাহত। প্রধানমন্ত্রীকে ওই বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিতে হবে,” বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সমন্বয়ক।
Published : 15 Jul 2024, 01:09 PM
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যকে ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম ও ছাত্রলীগ।
সরকারপ্রধানের বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে সোমবার দুপর সাড়ে ১২টার পর থেকে বিক্ষোভ সমাবেশের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জড়ো হচ্ছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা।
অন্যদিকে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অপমান’ করার প্রতিবাদে বিকাল ৩টায় একই স্থানে অবস্থান কর্মসূচির ডাক দিয়েছে ছাত্রলীগ।
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা মর্মাহত। প্রধানমন্ত্রীকে ওই বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিতে হবে।”
রোববার চীন সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? তাদের নাতিপুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা পাবে? এটা আমার দেশবাসীর কাছে প্রশ্ন।”
ওই বক্তব্যে ‘মর্মাহত ও অপমানিত’ বোধ করায় মধ্যরাতে স্লোগানে স্লোগানে প্রতিক্রিয়া দেখান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা; হল থেকে মিছিল নিয়ে বেরিয়ে রাত ১টা পর্যন্ত তারা বিক্ষোভ করেন ক্যাম্পাসে।
ছাত্রদের সঙ্গে ছাত্রীরাও বিভিন্ন হল থেকে বেরিয়ে যোগ দেন মধ্যরাতের এ বিক্ষোভে। ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘তুমি কে? আমি কে? রাজাকার রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে স্বৈরাচার স্বৈরাচার’, ‘লাখো শহীদের রক্তে কেনা, দেশটা কারও বাপের না' ইত্যাদি স্লোগান দেন তারা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “স্বাধীন বাংলাদেশে সবাই রাজাকারকে সবাই ঘৃণা করে, আমাদেরকে রাজাকার বলে সম্বোধন করা হয়েছে। ২ পারসেন্ট ছাড়া বাকি ৯৮ পারসেন্ট রাজাকার? এটা ছাত্রদের আহত করেছে।”
মিছিলে অংশ নেওয়া হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর মুখে এ ধরনের কথা আমরা কখনোই প্রত্যাশা করিনি। তিনি কোটা আন্দোলনকারীদের রাজাকারের নাতিপুতি বলেছেন, এর চেয়ে জঘন্য কথা আর কী হতে পারে?
“হাজার হাজার শিক্ষার্থী কোটা আন্দোলনে স্বেচ্ছায় অংশ নিয়েছে। সবাই কি রাজাকারের নাতিপুতি?”
রাত ১টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা চলে যাওয়ার পর টিএসসি এলাকায় তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খানসহ আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের দেখা যায়। পরে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ছাত্রলীগ।
মিছিলে ‘তুমি কে আমি কে, বাঙালি বাঙালি’, ‘তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা’ প্রভৃতি স্লোগান দেওয়া হয়। রাত ৩টার পর রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ছাত্রলীগ সমাবেশ করে। সমাবেশ থেকে সোমবার বেলা ৩টায় রাজু ভাস্কর্যে প্রতিবাদী অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।
তিনি বলেন, “বাঙালির মহান স্বাধীনতাকে কটাক্ষ, একাত্তরের ঘৃণিত গণহত্যাকারী রাজাকারদের প্রতি সাফাই এবং আন্দোলনের নামে অস্থিতিশীলতা তৈরির প্রতিবাদে এ সমাবেশ হবে।”
কী নিয়ে আন্দোলন
২০১৮ সালে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র হাই কোর্ট অবৈধ ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা মাঠে নেমেছে। তারা প্রথমে সেই পরিপত্র ফিরিয়ে আনা অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার দাবি জানালেও পরে সংস্কারের দাবি তুলেছে।
গত সপ্তাহে মঙ্গলবার বাদ দিয়ে প্রতিটি কর্মদিবসেই তারা বাংলা ব্লকেড নামে অবরোধ কর্মসূচি পালন কলে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়ে। বুধবার পর্যন্ত তারা নির্বিঘ্নে কর্মসূচি পালন করলেও বৃহস্পতিবার থেকে পুলিশের পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়, একাধিক এলাকায় বাধাও দেওয়া হয়।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কোটা নিয়ে হাই কোর্টের রায়ের ওপর চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন না করে ক্লাসে ফিরে যাওয়ার এবং আদালতে এসে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।
তবে শিক্ষার্থীরা সংসদ অধিবেশন ডেকে কোটার বিষয়ে ফয়সালা চাইছেন, আর ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন।
রোববার শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি মেনে নিতে রাষ্ট্রপতিকে স্মারকলিপি দেন। এতে জাতীয় সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে কোটা সংস্কারের দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে সরকারকে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন আন্দোলনকারীরা। পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে করা সব মামলা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তুলে নেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন।
পরে বিকালে প্রধানমন্ত্রী চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “কোটার বিষয়টি ফয়সালা হবে আদালতেই। আর রাস্তায় ধ্বংসাত্মক কিছু হলে আইন নিজস্ব গতিতে চলবে।”
আরও পড়ুন...
কোটা: মধ্যরাতের নির্জনতা ভেঙে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ-স্লোগান
‘কোটার সমাধান আদালতে’, অশান্তি হলে আইন চলবে ‘নিজের গতিতে’: প্রধানমন্ত্রী
কোটা আন্দোলন: হত্যা চেষ্টার অভিযোগে সময় টিভির মামলা
কোটা: হাই কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ, 'নিয়মিত আপিল করবে রাষ্ট্র