ইবনে সিনা হাসপাতালে নারীর মৃত্যু তদন্তে কমিটি

চিকিৎসকদের অবহেলায় কল্যাণপুরের ওই হাসপাতালে ওই প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ স্বজনের।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 March 2024, 05:17 PM
Updated : 20 March 2024, 05:17 PM

ঢাকার বেসরকারি ইবনে সিনা হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে কমিটি করেছে ইবনে সিনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

চিকিৎসকদের অবহেলায় কল্যাণপুরের ইবনে সিনা হাসপাতালে পলি সাহা নামে ওই নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই নারীর স্বামী।

ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার অধ্যাপক ডা. ফারহানা দেওয়ানকে প্রধান করে চার সদস্যের এ কমিটি করেছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

পলি সাহা গত সোমবার সকাল ৯টায় সন্তান প্রসবের জন্য কল্যাণপুরের ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি হন। সেদিন বেলা আড়াইটার সময় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে একটি সন্তান জন্ম দেন তিনি। পরদিন মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় কল্যাণপুর ইবনে সিনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই নারীকে মৃত ঘোষণা করে।

বুধবার পলি সাহার স্বামী আশীষ রায় অভিযোগ করেন, চিকিৎসায় অবহেলার কারণে তার স্ত্রী মারা গেছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে চিকিৎসাধীন সময়ের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, সন্তান জন্মদান এবং পরবর্তীতে আরও একটি-মোট দুটি অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে পলি সাহার। ‍দুটি অস্ত্রোপচারেই প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। চিকিৎসকরা এটা বন্ধে পদক্ষেপ নেয়নি। তাদের গাফিলতি ছিল।

“দুপুর ২টা ১৫ মিনিটের দিকে পলির অপারেশন হয়। অপারেশনের পর ডাক্তার বলে বাচ্চা ঠিক আছে, মাও ঠিক আছে। এরপর তাদের পোস্ট অপারেটিভ রুমে দেয়। আমি তখন জিজ্ঞেস করি তার অবস্থা কেমন? তখন চিকিৎসকরা জানান, পলি ভালো আছে, তবে একটু ব্লিডিং হচ্ছে। ৬টার দিকে আবার জিজ্ঞেস করলে তারা একই উত্তর দেয়।”

আশীষ বলেন, ওইদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে চিকিৎসকরা তাকে জানান, পলিকে এক ব্যাগ রক্ত দিতে হবে। পলি যার তত্ত্ববধানে ছিলেন সেই চিকিৎসক ডা. শারমিন মাহমুদ তাকে বলেন চিন্তার কোনো কারণ নেই।

“রাত ৯টায় আমি পলির কাছে জানতে চাই তার কেমন লাগছে। সে বলে তার কেমন জানি লাগছে। সে বাঁচবে না। আমি ডাক্তারের কাছে জানতে চাই প্রকৃত অবস্থা কী? তখন ডাক্তার বলেন, রোগীর ব্লিডিং হচ্ছিল সেটা কমে গেছে, কোনো শঙ্কা নেই। কিন্তু ব্লাড প্রেশার কমে গেছে, আপডাউন করছে।”

এরপর মঙ্গলবার ভোর ৪টার দিকে আশীষকে ফোন করে শারমিন মাহমুদ জানান পলির অবস্থা খুব খারাপ। আইসিইউতে নিতে হবে। সকাল ৬টায় ডা. শারমিন হাসপাতালে এসে পলিকে আইসিইউতে স্থানান্তর করেন। এরপর সকাল ৭টার পর অস্ত্রোপচার করে পলির জরায়ু ফেলে দেয়। বিকেল চারটায় তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

আশীষ বলেন, “যখন তাকে আইসিইউতে নেয় তখনই দেখেছি ওর (পলি সাহা) রোগীর অবস্থা খুব খারাপ। অক্সিজেন পাচ্ছে না, শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। এরমধ্যেই তারা বলেন ব্লিডিং বন্ধ করা যাচ্ছে না, জরায়ু কেটে ফেলে দিতে হবে। নইলে রোগীকে বাঁচানো যাবে না। অস্ত্রোপচারের পর তারা বলেন রোগীর অবস্থা ভালো তাকে আবার আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে তাকে ৩-৪ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে। ১২টার দিকে আমি রোগীর অবস্থা জানতে চাইলে তারা বলেন রোগীর অবস্থা আশঙ্কার বাইরে না, সার্ভাইভ করতেও পারে-নাও পারে। পরে জানায় পলি মারা গেছে।”

ডা. শারমিন মাহমুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অস্ত্রোপচারের পরপর রোগীর অবস্থা ভালোই ছিল। কিন্তু পোস্ট অপারেটিভ রুমে নেওয়ার পর তার রক্তপাত শুরু হয়। খবর পেয়ে তারা সেখানে যান। তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন, চিকিৎসায় কোনো ত্রুটি ছিল না।

“আমরা সব ধরনের প্রটোকল মেনেই চিকিৎসা দিয়েছি। সাধারণত সন্তান জন্মদানের পর জরায়ু সংকুচিত হয়ে যায়। জরায়ু সংকুচিত না হলে ব্লিডিং বন্ধ হতে চায় না। অপারেশনের পর উনার (পলি সাহা) জরায়ু সংকুচিত হয়েছিল কিন্তু পরে আবার ছেড়ে দেয়, শেষের দিকে একেবারে ছেড়ে দিয়েছে, যেজন্য রক্তপাত হচ্ছিল। তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যে ফেলে দিতে হবে। যাই হোক, তদন্ত কমিটি হয়েছে উনারা দেখুক। আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি।”