“কিছুটা ভোগান্তি তো থাকেই। সড়কে যানজট থাকে অনেকসময়, ভাড়াও বাড়ে। তবু বাড়ি যাওয়ার আনন্দের কাছে এসব বিড়ম্বনা কিছুই মনে হয় না,” বলেন এক যাত্রী।
Published : 06 Apr 2024, 11:13 PM
সারা বছর তেমন ছুটি না পেলেও এবার ঈদে ছুটি পেয়ে বাড়ি ফিরছেন বেসরকারি চাকরিজীবী আহসান হাবীব।
মহাখালী বাস টার্মিনালে শনিবার ‘শাহ ফতেহ আলী’ পরিবহনের টিকেট কাটেন তিনি, তবে ৮০০ টাকার টিকেট তাকে নিতে হয়েছে হাজার টাকায়।
এই ভাড়া বাড়ানোতে আক্ষেপ নেই হাবিবের। তার ভাষ্য, “সবসময় দেখে আসতেছি ভাড়া বাড়ে। এটা নিয়ে আসলে বলার কিছু নেই। না বাড়লেই বরং অবাক হই। মনে হয় ঈদযাত্রা হচ্ছে না।”
বগুড়ার এই যাত্রী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঈদ উপলক্ষেই যাওয়া। বেসরকারি চাকরি করায় তেমন ছুটি মেলে না। কিন্তু ঈদে তো যেতেই হয়। পরিবার পথ চেয়ে থাকে।”
আহসান হাবীবের মত অনেক যাত্রীই তল্পিতল্পা নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন মহাখালী বাস টার্মিনালে। যদিও পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদুল ফিতরের আর চার-পাঁচ দিন বাকি থাকলেও পুরো মাত্রায় যাত্রীর চাপ পড়েনি বাসে। সোমবার থেকেই সড়কে চাপ বাড়বে বলে মনে করছেন তারা।
আর এরই মধ্যে ঘরমুখো মানুষ যারা টার্মিনালগুলোতে ভিড় করছেন, তারাও নানা ভোগান্তি আর জটিলতায় পড়ছেন। টার্মিনালে গিয়ে অনেকে কাঙ্ক্ষিত সময়ের টিকেট পাচ্ছেন না, আবার টিকেট পেলেও গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া।
ঈদ ঘিরে বাসে ভাড়া বাড়ানোর ‘চিরাচরিত’ অভিযোগ নিয়ে শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের যাত্রী আহসান হাবীব বলেন, “এমনিতে ৮০০ টাকা করে টিকিট। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে এক হাজার টাকা নিল।”
তবে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি শাহ ফতেহ আলী কাউন্টারের বুকিং সহকারীরা।
শনিবার মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে বগুড়া ও নওগাঁর পথে চলাচলকারী একতা পরিবহনের টিকেট কাটেন দীপ্র জেরিন।
ঈদযাত্রার বিড়ম্বনার প্রসঙ্গ তুলতেই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আসলে ঈদযাত্রা একটা আনন্দের উপলক্ষ। পরিবার-পরিজন মিলে উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করতেই ছুটে যাওয়া।
“সারা বছর এমনি দুই-তিন দিনের ছুটি পেলেও যাওয়া হয় না। কিন্তু ঈদে তো যাওয়া চাই-ই। কিছুটা ভোগান্তি তো থাকেই। সড়কে যানজট থাকে অনেকসময়, আবার ভাড়াও বাড়ে। তবু বাড়ি যাওয়ার আনন্দের কাছে এসব বিড়ম্বনা কিছুই মনে হয় না।”
এই টার্মিনালের এনা পরিবহনের কাউন্টারের সামনে ঝুলছে একটি ব্যানার, তাতে লেখা- ‘ঈদ উপলক্ষে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হয় না’।
শায়েস্তাগঞ্জ যাওয়ার জন্য এই পরিবহনের টিকেট কাটেন সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী মো. জানেল মিঞা।
তিনি বলেন, “আমি প্রথমে এনা পরিবহনের সায়েদাবাদ কাউন্টারে গিয়েছিলাম। ওখানে সবসময়ই টিকিট পাওয়া যায়। কিন্তু আজ গিয়ে না পেয়ে আবার এখানে (মহাখালী) এসেছি।”
সিলেট রুটে চলাচলকারী এনা পরিবহনের মহাখালী কাউন্টারের বুকিং সহকারী ফয়সাল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঈদযাত্রার তেমন চাপ নেই এখনো। কাল বা পরশু থেকে ভিড় বাড়তে পারে।”
একতা পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার মো. আবদুল্লাহও বললেন একই কথা। তার ভাষ্য, “এবার তো লম্বা ছুটি। মানুষ আগে আগে চলে যাচ্ছে। তবে ৮ তারিখ থেকে চাপ বাড়তে পারে।”
১১ এপ্রিল বাংলাদেশে ঈদুল ফিতর হতে পারে ধরে নিয়ে চলতি বছরের ছুটির তালিকা বছরের শুরুতেই সাজিয়ে রেখেছে সরকার। সরকারি ক্যালেন্ডারে ঈদের ছুটি ধরা হয়েছে ১০, ১১ ও ১২ এপ্রিল। ঈদের ছুটির পর ১৩ এপ্রিল শনিবার, ১৪ এপ্রিল নববর্ষের ছুটি।
আর ঈদের আগে ৭ এপ্রিল শবে কদরের ছুটি। তার আগের দুদিন ৫ ও ৬ এপ্রিল সাপ্তাহিক ছুটি রয়েছে। ফলে ৮ ও ৯ এপ্রিল ছুটি পেলে সরকারি চাকরিজীবীরা এবার ঈদে টানা ১০ দিন ছুটি কাটাতে পারবেন।
লম্বা এই ছুটি ঘিরে অনেকে আগে-আগেই রাজধানী ছেড়েছেন। তবে মূল চাপটা শুরু হয় মূলত পোশাক কারখানা ছুটি হলেই।
ঈদের ছুটি ঘিরে শনিবার তেমন চাপ ছিল না মহাখালী থেকে টাঙ্গাইলের পথে চলাচল করা ক্রাউন ডিলাক্স পরিবহনের কাউন্টারে।
এই কাউন্টারের বুকিং সহকারী জোবায়ের হোসেন বলেন, “আমাদের এখানে আপাতত তেমন চাপ নেই। মানুষ নির্বিঘ্নে যেতে পারছে। দুয়েক দিনের মধ্যে যাত্রীর চাপ বাড়তে পারে বলে আশা করছি।”
ঢাকা থেকে শেরপুর রুটে চলাচল করা সোনার বাংলা পরিবহনের চালক শাহ আলম বলেন, “আমরা ভালোই যাত্রী পাচ্ছি। আজ (শনিবার) থেকেই মূলত ঈদযাত্রী আসা শুরু হয়েছে। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত ধীরে ধীরে এই চাপ বাড়তেই থাকবে।”
এদিকে ঈদযাত্রা ঘিরে নিরাপত্তা নিশ্চিতে মহাখালী বাস টার্মিনালে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব সদস্যদেরও দেখা গেছে।
নাম প্রকাশ না করে এক র্যাব সদস্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতেই আমরা যৌথভাবে এখানে কাজ করছি। যাত্রী হয়রানি করলেই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এই টার্মিনালে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) উদ্যোগে একটি ‘ভিজিলেন্স টিমের’ বুথও দেখা গেছে।
সেখানে দায়িত্ব পালনরত বিআরটিএ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, “যাত্রী সাধারণের নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন চলাচলের লক্ষে বিআরটিএ, পুলিশ বিভাগ, সিটি করপোরেশন, পরিবহন মালিক, শ্রমিক ইউনিয়নের সমন্বয়ে এই ভিজিলেন্স টিম গঠন করা হয়েছে।”