Published : 10 Sep 2024, 09:11 PM
ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে কিশোরী স্বর্ণা দাসের পর একই কায়দায় কিশোর জয়ন্ত কুমার সিংহ নিহতের ঘটনায় বাংলাদেশের কড়া প্রতিবাদ জানানোর কথা বলেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
এ ধরনের ঘটনা যে দুদেশের সম্পর্কে ‘নেতিবাচক প্রভাব’ ফেলছে, সে কথা তুলে ধরে মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেছেন, “এটা ভারতের কোনো উপকার করছে- এমনটা কাউকে বলতে আমি শুনিনি।”
গত ১ সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলায় সীমান্তে নিহত হন ১৪ বছর বয়সী বাংলাদেশি কিশোরী স্বর্ণা দাস।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় ভারতের হাই কমিশনে পাঠানো এক চিঠিতে ওই ঘটনার কড়া প্রতিবাদ জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর চারদিনের মাথায় প্রায় একই কায়দায় নিহত হয় জয়ন্ত।
সোমবার ভোরে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় সীমান্তে গুলিতে ১৫ বয়সী কিশোর জয়ন্ত সিংহের মৃত্যুর খবর দেয় পুলিশ।
জয়ন্তর মরদেহ বিএসএফ নিয়ে গেছে এবং ওই কিশোরের বাবাসহ দুজন আহত হয়েছেন বলেও পুলিশের ভাষ্য।
বালিয়াডাঙ্গী থানার ওসি ফিরোজ কবির জানান, সোমবার ভোররাতে উপজেলার ধনতলা ইউনিয়নের কান্তিভিটা সীমান্তের ৩৯৩ নম্বর পিলার এলাকায় ওই ঘটনা ঘটে। জয়ন্ত বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ফকির ভিটা গ্রামের মহাদেব কুমার সিংহের ছেলে।
জয়ন্ত হত্যার ঘটনাতেও কড়া প্রতিবাদপত্র পাঠানো হবে জানিয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ বলেন, “আপনারা হয়ত খেয়াল করেছেন, আমরা প্রতিবাদের ভাষা অনেক শক্ত করেছি।
“আমাদের এটুকুই এই মুহূর্তে করার আছে আসলে। আমরাতো তাদের সাথে যুদ্ধ বাঁধাব না। এটা যেহেতু অত্যন্ত সেনসিটিভ একটি ইস্যু, সেটা কিন্তু আমরা প্রতি মুহূর্তে বলছি। আমরা আশা করছি, এটা তারা বিবেচনায় নেবে।”
বৃহস্পতিবার ভারতীয় হাই কমিশনে পাঠানো প্রতিবাদপত্রে সব সীমান্ত হত্যার তদন্ত ও বিচার দাবি করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
কড়া প্রতিবাদ জানানোর পরও ঘটনার পুনরাবৃত্তির বিষয়ে এক প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আমরা দাবি করেছি, যারা এটা করেছে, তাদেরকে বিচারের সম্মুখীন করা হোক। এটা আমরা কিন্তু উল্লেখ করেছি আমাদের নোটে। আমরা স্পষ্ট করে বলেছি যে, আমরা এটার নিন্দা জানাই এই কাজটার। এটা আমরা সুস্পষ্টভাবে বলেছি।
“এবং গতকাল যেটা হল, সেটা নিয়েও আমরা ঠিক অনুরূপ প্রতিবাদ করব। এবং যেখানে আমাদের সুযোগ হয় সেখানে বলব। এটা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে অত্যন্ত নেতিবাচক ভূমিকা রাখছে। দুদেশের স্বার্থে উচিত, এটা থেকে বেরিয়ে আসা।”
চোরাচালানসহ আন্তঃসীমান্ত নানা অপরাধের কারণে সীমান্ত হত্যার ঘটনা ঘটে আসছে বলে যুক্তি দেয় ভারত সরকার। কিন্তু এবার নিহত দুজনই শিশু।
এ প্রসঙ্গে ভারতের প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, “কাজেই, (এবার) তারা ওই কথা বলে নাই। সুযোগ পেলে হয়ত বলত।”
ভারতের বক্তব্যের বিষয়ে আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা তাদের রিঅ্যাকশন পাইনি এখনও। আমার জানামতে, কোনো প্রতিক্রিয়া পাইনি। আমরা এটার প্রতিবাদ জানিয়েছি এবং বিচার চেয়েছি।”
মানবাধিকার সংস্থা আইন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাবে, ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে প্রাণ গেছে ১৩ জনের। তার মধ্যে ২২ জানুয়ারি যশোরের বেনাপোল সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হন বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিজিবির সদস্য মোহাম্মদ রইশুদ্দীন।
একই সংস্থার হিসাবে, বিএসএফের গুলিতে ও নির্যাতনে ২০২৩ সালে ২৮ জন, ২০২২ সালে ২৩ জন, ২০২১ সালে ১৭ জন, ২০২০ সালে ৪৮ জন এবং ২০১৯ সালে ৪৩ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন।
সীমান্ত হত্যার বিষয়ে ঢাকার কড়া প্রতিবাদের মধ্যে মঙ্গলবার নতুন পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিনের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ করেছেন ভারতীয় হাই কমিশনার প্রণয় ভার্মা। সাক্ষাতের পর সীমান্তে প্রাণহানি নিয়ে ঢাকার প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
ঢাকা-করাচি সরাসরি ফ্লাইটের আলোচনা
ঢাকার সঙ্গে পাকিস্তানের করাচির সরাসরি বিমান চলাচলের বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
মঙ্গলবার ঢাকায় পাকিস্তানের হাই কমিশনার আহমদ মারুফের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হওয়ার প্রসঙ্গ ধরে তিনি বলেন, “তারা বিমানের সাথে যোগাযোগ করছে। এটা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে হবে। এটা যদি হয়, তাহলেতো কোনো সমস্যা নাই।”
অন্য অনেক দেশের সঙ্গে বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রেও পাকিস্তানের ভিসার ফি উঠিয়ে নেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ অন্তর্বর্তী সরকার বাড়াচ্ছে কি-না, সে প্রশ্ন করা হয় পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে।
উত্তরে তিনি বলেন, “এটা কূটনৈতিক যোগাযোগের চেয়ে বেশি যে, মানুষের যোগাযোগ সহজ ওটা যেটা, সেটা হতে পারে।”
নতুন সরকার আসার পর দুদেশের সম্পর্ক উন্নত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কি-না, এমন প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, “দেখুন, আমাদের নীতিমালাই হচ্ছে, সবার সাথে ভালো সম্পর্ক আমরা রাখতে চাই।”