এদের মধ্যে আন্দোলনকারীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে তিনটি লাশ শহীদ মিনারের দিকে নিয়ে যায়।
Published : 04 Aug 2024, 05:58 PM
পরে আন্দোলনকারীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে তিনটি লাশ শহীদ মিনারের দিকে নিয়ে যায়।
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
রাজধানীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগের সময় তিন শিক্ষার্থীসহ আটজনের মৃত্যুর খবর এসেছে। সংঘর্ষের সময় আহত ২২২ জনকে হাসপাতালে আনা হয়েছে।
রোববার বিকালের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাতজন এবং মিটফোর্ড হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনার পর চিকিৎসক একজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিন বিকাল পৌনে ৪টার দিকে প্রথমে রাজধানীর জিগাতলা এলাকা থেকে গুলিবিদ্ধ এক তরুণকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। তখন দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে জানিয়েছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকের ঢাকা মেডিকেলে প্রতিনিধি আমিনুল ইসলাম।
ওই তরুণের নাম আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী (২৩)। তিনি হাবিবুউল্লাহ বাহার কলেজের বিবিএ এর শিক্ষার্থী। তিনি পুরান ঢাকার রায় সাহেব বাজার এলাকায় থাকতেন, তার বাবার নাম আবু বক্কর সিদ্দিকী।
এর কিছুক্ষণ পর থেকে চার ঘণ্টার মধ্যে গুরুতর আরও সাতজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। তাদের বেশির ভাগকে মৃত অবস্থায় জরুরি বিভাগে আনা হয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানান। বাকিরা হাসপাতালে আনার কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যান।
আব্দুল্লাহ সিদ্দীকির পর ফার্মগেইটে গুলিতে আহত এক তরুণকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। পরে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে তৌহিদুল ইসলাম (২২) নামে ওই তরুণের মৃত্যু হয়।
তিনি কবি নজরুল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে স্নাতকে ভর্তির অপেক্ষায় ছিলেন। পাশাপাশি ঢাকার মিরপুর ডিওএইচএসে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। তার বাড়ি বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলায় বলে ঢাকা মেডিকেল প্রতিনিধি জানান।
এরপর আরও দুইজনকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে আনতে দেখেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের মেডিকেল প্রতিনিধি।
পরে এ দুইজন ‘মারা গেছেন বুঝতে পেরে’ তাদের বহনকারীরা জরুরি বিভাগের রেজিস্টারে তাদের পরিচয় নিবন্ধন করেননি। এদের একজনের শরীরে জাতীয় পতাকা বাঁধা ছিল। পরে এই দুইজন এবং তৌহিদুলের মৃতদেহ জরুরি বিভাগ থেকে স্ট্রেচারে করে শহীদ মিনারের দিকে নিয়ে যায় আন্দোলনকারীরা।
তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নাম জানতে পারেননি মেডিকেল প্রতিনিধি।
হাসপাতালে এর আগে আনা মৃত শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ সিদ্দিকীর (২৩) লাশ জরুরি বিভাগের মর্গে রয়েছে।
এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রমিজ উদ্দিন রূপ (২৪) নামে আরেক শিক্ষার্থীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনার পর মৃত ঘোষণা করা হয়। তাকে কারওয়ান বাজার থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসেন বহনকারীরা। তিনি বেসরকারি ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
এর কিছুক্ষণ পর অজ্ঞাত আরেক যুবকের লাশ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রেখেই চলে যান কয়েকজন। ঢাকা মেডিকেল প্রতিনিধি বলেন, রক্তাক্ত এ ব্যক্তিকে নিয়ে আসা ব্যক্তিরা লাশ রেখে যাওয়ার সময় কথা বলারও সুযোগ দেননি হাসপাতালের কর্মীদের।
এরপর রাত পৌনে ৮টার দিকে বুকে গুলিবিদ্ধ আরেক যুবককে রাজধানীর কাজলা এলাকা থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন কয়েকজন কিশোর। ওই ব্যক্তির নাম জুয়েল (২৮)। তার বাসা ডেমরার কোনাপাড়া ৭ তলা মসজিদের পাশে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ঢাকা মেডিকেল প্রতিনিধি বলেন, জুয়েলের বুকের বাম পাশে গুলির চিহ্ন রয়েছে। কাজলা এলাকা থেকে জিসানসহ কয়েকজন কিশোর তাকে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত আনা হয়েছে বলে জানান। এরপর তাকে নিয়ে আসা ব্যক্তিরা ওই যুবকের লাশ বাড়ি পৌঁছে দিতে নিয়ে চলে যায়। ফোন থেকে তার নাম ঠিকানা তারা জানতে পারেন।
অপরদিকে রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালে আরেক যুবকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। জহির উদ্দিন (২৫) নামে ওই যুবককে গুলিস্তান থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে সেখানে অবস্থানরত এক সংবাদমাধ্যম কর্মী জানান।
এই আটজনের মৃত্যু ছাড়াও এদিন সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অসহযোগকে ঘিরে পুলিশ ও সরকারদলীয় সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে ২২২ জনকে আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৬৩ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, রোববার বিকাল ৫টা পর্যন্ত হাসপাতালে আসা আহতদের মধ্যে ইট-পাটকেল, লাঠির আঘাতের পাশাপাশি গুলিবিদ্ধরাও রয়েছেন। ছররা গুলি ও লাইভ বুলেট দুরকমের গুলিবিদ্ধ আহতরা এখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এদের মধ্যে বিকালে সায়েন্সল্যাব এলাকা থেকে ছররা গুলিবিদ্ধ একটি শিশুকে নিয়ে আসেন বৃষ্টি নামের এক নারী। নয় বছর বয়সী বায়েজিদ নামের শিশুটি নিউ মার্কেটের একটি ব্লেজারের দোকান কাজ করেন। তার বাবা শাহীন বাহরাইন প্রবাসী, তাদের গ্রামের বাড়ি বরিশালের গৌরনদীতে। শিশুটিকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।