পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ায় বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে ঝোড়ো হাওয়ার আশঙ্কায় দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "এখন এটি গভীর নিম্নচাপ আবস্থায় রয়েছে। আমরা সারাদিনের ডেটা অ্যানালাইসিস করে সন্ধ্যার পর বুঝতে পারব যে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা। তবে ঘূর্ণিঝড় হলেও দুর্বল ঘূর্ণিঝড় হবে।"
ঘূর্ণিঝড় হোক বা না হোক, এই নিম্নচাপের কারণ দেশের বিভিন্ন স্থানে কমবেশি বৃষ্টিপাত হবে জানিয়ে তিনি বলেন, "এসময় বৃষ্টিপাত থাকবে। যেমন, আরিচায় সকাল থেকে এ পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৬ মিলিমিটার এবং কক্সবাজারে ৫ মিলিমিটার। দুপুরের রিপোর্টে আরও জানতে পারব।"
নিম্নচাপের প্রভাবে এই বৃষ্টি সারাদেশে শীত নামিয়ে আনতে কিছুটা সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন এই আবহাওয়াবিদ।
"আমাদের ভৌগোলিক কারণে শীত আসার আগে এরকম দুই একটা নিম্নচাপ সাধারণত প্রতিবারই হয়। এই সময়ে সূর্যটা আস্তে আস্তে দক্ষিণ দিকে চলে যায়। তখন সমুদ্র উত্তপ্ত হয় এবং নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়। আর যখন এরকম কোনো সিস্টেম আসে, তখন মেঘ আসে এবং বৃষ্টি হয়।
"বৃষ্টির পর মেঘ কেটে যায়, আকাশ পরিষ্কার হয়ে যায়। আর শীতের পূর্বশর্তই হল আকাশ ক্লিয়ার থাকতে হবে। সে হিসেবে বলা যায়, এই বৃষ্টির পর হালকা শীত শীত অনুভূতি হতে পারে। অবশ্য দিনাজপুর, রংপুর, পঞ্চগড়সহ প্রান্তিক পর্যায়ে ইতোমধ্যে শীত নামতে শুরু করেছে।"
জেবুন্নেসা জানান, নিম্নচাপ কেটে যাওয়ার পর কয়েক দিনের ব্যাবধানে আবারও বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
“এ মাসের শেষ দিকে আবার একটি নিম্নচাপ হতে পারে, সেটা না হলেও ছোটখাটো একটা কনভেকশন হতে পারে। তখন আরেকবার বৃষ্টি হতে পারে। নভেম্বর এভাবেই যাবে।"
আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গভীর নিম্নচাপটি বেলা ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৫৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। আরও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হওয়ার পথে আরো ঘনীভূত হতে পারে এ ঘূর্ণিবায়ুর চক্র।
তখন গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল।
গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
সে কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। সেইসাথে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে এবং গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।