‘সামরিক উচ্চাভিলাষ’ নয়, মানুষের অগ্রগতিতেই নজর বাংলাদেশের: শাহরিয়ার

এ সম্মেলনে থেকে কাউকে ইচ্ছাকৃতভাবে সরকার বাদ দেয়নি, ‘সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে’, এক প্রশ্নে বলেন তিনি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 May 2023, 02:51 PM
Updated : 12 May 2023, 02:51 PM

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সশস্ত্র সংঘাত ও বিরোধ চলমান থাকলেও বাংলাদেশের কোনো ‘সামরিক উচ্চাভিলাষ’ নেই; মানুষের অগ্রগতির মতো মৌলিক বিষয়েই নজর সরকারের বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

শুক্রবার ঢাকায় ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানে অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা এবং মধ্যপ্রাচ্য ও সুদানে সংঘাতের মধ্যেও এই শতাব্দী আগের তুলনায় ‘কম সংঘাতময় শতাব্দী’।

“তার মানে হচ্ছে, সবকিছু এখনও হাতছাড়া হয়ে যায়নি। তারপরও বাংলাদেশের উচ্চ সামরিক কিংবা আঞ্চলিক পরাশক্তি হওয়ার মতো কোনো সামরিক উচ্চাভিলাষ নেই।“

শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুদিনের এ সম্মেলন উদ্বোধনের আগে সকাল থেকে উদ্বোধন পূর্ববর্তী বিভিন্ন ‘থিমেটিক সেশন’ অনুষ্ঠিত হয়।

সম্মেলনে মরিশাসের প্রেসিডেন্ট পৃথ্বীরাজ সিং রুপন, মালদ্বীপের ভাইস-প্রেসিডেন্ট ফয়সাল নাসিম, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করসহ ২৫টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন।

বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধিভুক্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন ভারত মহাসাগরীয় এ সম্মেলনের আয়োজন করছে।

সামরিক উচ্চাভিলাষের বাইরে গিয়ে মানুষের অগ্রগতির দিকে সরকার নজর নিচ্ছে জানিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, “শেখ হাসিনার দর্শন হলো তার দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। আমাদের সমস্যাগুলো এখন অনেকটা মৌলিক, এখানে এখনও প্রায় ১৮ ভাগের মতো গরিবি আছে।

“এবং এই অঞ্চলের আরও অন্যান্য প্রধান অর্থনীতি আছে, তারাও যখন প্রধানমন্ত্রী-রাষ্ট্রপতি পর্যায়ে বসেন, তখনও কিন্তু তারা এই বিষয়গুলি অ্যাড্রেস করেন- কীভাবে আমরা আমাদের মানুষকে আরও ভালোভাবে রাখতে পারি। এটা হলো আঞ্চলিক লক্ষ্য। সেই উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য অর্জনের জন্যই আমাদের আয়োজন।”

ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলনের বিষয়ে তিনি বলেন, “পৃথিবীর সবচেয়ে বর্ধিঞ্চু অর্থনৈতিক অঞ্চল হলো ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো বা আরেকটু বড় করে বললে তা এশিয়া।

“এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক সহযোগিতা, যোগাযোগ, মহামারী, অপ্রত্যাশিত প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমরা কীভাবে সহযোগিতা করতে পারি, একজন আরেকজনকে- এই সার্বিক বিষয়গুলো আলোচনা হচ্ছে, হবে।”

সম্মেলনে সরকারি প্রতিনিধিদের পাশাপাশি নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বেশ খোলামেলা আলোচনার সুযোগ পাবেন জানিয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, “নীতিনির্ধারকদের জন্য এ অঞ্চলের বৃহত্তর স্বার্থে কীভাবে সামনের দিনে কাজ করা যায়, বৈশ্বিক বিভিন্ন সমস্যাকে মোকাবেলা করে, স্ব স্ব রাষ্ট্রকে আরও কীভাবে তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করা যায়, সার্বিক বিষয়গুলো আলোচনা হবে।”

এ সম্মেলনের মাধ্যমে চীন বিরোধী অবস্থানের সঙ্গে বাংলাদেশ মিলে গেল কি না, এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার বলেন, “মোটেই না। আপনারা দুটি প্রশ্ন করেছেন, একটি হলো আমাদের ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক, আরেকটি হলো আজকের সম্মেলনটি। পুরো দুই জিনিস, এটা প্রথম কথা। পরিষ্কারভাবে দুটো দুই জিনিস।

“এবং আমাদের ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুকের সকলের স্ব স্ব অবস্থানের বা মেজর ইকোনমিগুলোর অবস্থানের বা মেজর রাষ্ট্রগুলোর অবস্থানের সঙ্গে আংশিক মিল পাবেন আপনারা, একভাবে বা অন্যভাবে।”

এ সম্মেলনে থেকে কাউকে ইচ্ছাকৃতভাবে সরকার বাদ দেয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।”

মিয়ানমারকে আমন্ত্রণ না জানানোর বিষয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, “পরিষ্কার উত্তরটি হল, সেই দেশের সরকারকে বিশ্ব এখনও স্বীকার করে না। এ কারণে আমরা সরকারের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ করিনি। কিন্তু অন্যান্য সব প্রধান দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এখানে বাদ দেওয়া হয়নি।

“চীনকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমার ধারণা, তাদের প্রতিনিধিরাও এসেছেন বা আসার কথা।”

পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে নাগরিক সমাজের সম্পৃক্ততাকে সরকার ‘সম্মান’ জানায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, “যারা ভূ-রাজনীতি ও বিশ্ব কূটনীতি বোঝেন তাদের মতামত আমরা শুনি। সেখান থেকে ভালো কিছু থাকলে আমরা অবশ্য নিতেও পারি বা অতীতেও হয়তবা নিয়েছি।”