Published : 31 Aug 2022, 07:06 PM
দৃষ্টিহীনদের হাতে লেখা ব্রেইল লিপি বাংলায় রূপান্তর করার একটি সফটওয়্যারের প্রোটোটাইপ তৈরি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষক দল।
বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে এই নমুনা সফটওয়্যারটি উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মুহাম্মদ শোয়াইবের অধীনে ছয় সদস্যের একটি গবেষক দল এই অফলাইন ডেস্কটপ সফটওয়্যারটি বানিয়েছে।
এ দলের বাকি সদস্যরা হলেন- ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক আহমেদুল কবীর এবং শিক্ষার্থী মিনহাজ কামাল, আতিক আহম্মেদ, মো. আরমান হোসেন এবং সাদিকুল হক সাদি ।
এ সফটওয়্যার নিয়ে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে আহমেদুল কবীর বলেন, শিক্ষিত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের লিখন পদ্ধতি ব্রেইল একটি স্পর্শনির্ভর পদ্ধতি, যা শুধু অভিজ্ঞরাই পাঠ করতে পারেন।
“কিন্তু আইসিটি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে নির্মিত এ সফটওয়ারের মাধ্যমে যে কোনো ব্যক্তি ব্রেইল পদ্ধতিতে লেখা বাংলায় পড়তে পারবেন মাত্র কয়েক ক্লিকেই ৷”
দৃষ্টিহীনদের সাথে বাকিদের লিখিত যোগাযোগে ‘দূরত্ব কমাতে’ এ সফটওয়্যারের একটি ‘মাইলফলক হওয়ার সমস্ত সম্ভাবনা আছে’ বলে মন্তব্য করেন এই সহকারী অধ্যাপক।
বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭০ জনের বেশি দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থী রয়েছেন, যারা শ্রুতিলেখকের সহায়তা নিয়ে বিভিন্ন অ্যাকাডেমিক পরীক্ষায় অংশ নেন।
তাতে অনেক সময় পরীক্ষায় ‘খারাপ প্রভাব পড়ে’ মন্তব্য করে ড. আহমেদুল কবীর বলেন, ”তারা ব্রেইলেই উত্তর লেখার সুযোগ পেলে এ সফটওয়্যারের মাধ্যমে পাঠোদ্ধার করে তাদের উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা আরও যুক্তিযুক্ত হবে।”
প্রতিটি বর্ণ বা ক্যারেক্টার লেখার জন্য ছয়টি ডটের বিন্যাস করা হয় ব্রেইল পদ্ধতিতে । এভাবে ৬৪ ক্যারেক্টারের সমন্বয়ে বাংলা ভাষা, সংখ্যা, চিহ্ন, যুক্তাক্ষর প্রকাশ করা হয় বাংলা ব্রেইল লিখন পদ্ধতিতে ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দলের সফটওয়্যারটি ব্রেইল থেকে পাঠযোগ্য বাংলা ভাষায় রূপান্তর করার উপযোগী করে বানানো। প্রাথমিকভাবে এ সফটওয়্যারে ৯৪ দশমিক ৮১ শতাংশ নির্ভুল ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান আহমেদুল কবীর।
অন্য ভাষায় ব্রেইল থেকে টেক্সটে রূপান্তরের সফটওয়্যার থাকলেও বাংলায় রূপান্তরের এটিই প্রথম সফটওয়্যার বলে গবেষক দলটির দাবি।
আহমেদুল কবীর বলেন, “ইতোপূর্বে ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, স্প্যানিশ, আরবি, হিন্দি, তামিল ও সিংহলি ভাষায় ব্রেইললিপিকে স্ব স্ব ভাষায় রূপান্তরের পদ্ধতি ছিল। বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে এটিই প্রথম এ ধরনের প্রয়াস। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গসহ বিশ্বের যে কোনো দেশের বাংলা ভাষাভাষী দৃষ্টিহীনরা শ্রুতিলেখক বা অন্য কোনো মধ্যবর্তী ব্যক্তির সাহায্য ছাড়াই তাদের মৌলিক কাজ, গল্প, কবিতা সরাসরি তাদের দৃষ্টিহীন সম্প্রদায়ের বাইরের পাঠকের কাছে ছড়িয়ে দিতে পারবেন৷”
অনুষ্ঠানে বলা হয়, এ সফটওয়্যারটি এক বা একাধিক পাতার ব্রেইল ডকুমেন্ট একসঙ্গে রূপান্তর করতে পারে। এছাড়া সংখ্যা ও ইংরেজি ক্যারেক্টার চিহ্নিত এবং ফলাফল ডকস ও পিডিএফ আকারে সংরক্ষণ করা যায় এ সফটওয়্যার দিয়ে ।
যাচাই করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাথমিকভাবে সফটওয়্যারটি ব্যবহার করা হবে।
উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান অনুষ্ঠানে বলেন, “টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ বিনির্মাণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে এই সফটওয়্যার।”
প্রতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিপর্যায়ে এই সেবা বাংলা ভাষাভাষী সব দৃষ্টিহীন ও সংশ্লিষ্টদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে তিনি প্রযুক্তিটির পেটেন্ট, বাজারজাতকরণসহ বিষয়গুলো তদারকি করবেন বলে জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, তথ্য প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক, শিক্ষক ও দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।