প্রথমপক্ষের স্ত্রী-সন্তানদের বিরুদ্ধে দুদকের তিনটি মামলায় মতিউর রহমানকেও আসামি করা হয়েছে।
Published : 06 Jan 2025, 08:24 PM
অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে এবার এনবিআরের সাবেক সদস্য মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী ও তাদের ছেলে-মেয়ের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদক।
মামলাগুলোতে মতিউরের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ, মেয়ে ফারজানা রহমান ইপ্সিতা ও ছেলে তৌফিকুর রহমান অর্নবের বিরুদ্ধে ১২৬ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ এনেছে সংস্থাটি।
সোমবার তাদের বিরুদ্ধে মামলার তথ্য দিয়ে দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন বলেন, তাদের সম্পদ বিবরণী জারির আদেশ হয়েছিল। পরে মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যরা তা দাখিল করেন। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে দুদক।
এর মধ্যে প্রথম মামলায় লায়লা কানিজের বিরুদ্ধে ১৩ কোটি ১ লাখ ৫৮ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। পাশাপাশি ১ কোটি ৫৩ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগও রয়েছে। এসব সম্পদ অর্জনে মতিউরের সহযোগিতার অভিযোগ করে তাকেও মামলায় আসামি করা হয়েছে।
দ্বিতীয় মামলায় ফারজানা রহমান ইপ্সিতার বিরুদ্ধে ৫৩ কোটি ৪১ লাখ ৩৮ হাজার ৩৯৩ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি ২ কোটি ৪৫ লাখ ৩৪ হাজার ৬১১ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন বলেও দুদকের অভিযোগ। এ মামলায় মা-বাবা ও ভাই অর্ণবকেও আসামি করা হয়েছে।
আর তৃতীয় মামলায় মতিউরের ছেলে অর্ণবের বিরুদ্ধে ৪২ কোটি ২২ লাখ ৫৮ হাজার ২৭১ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও ১৩ কোটি ৩৮ লাখ ৭০ হাজার ৭৪৩ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলাটিতে মতিউরকেও আসামি করা হয়েছে।
এর আগে গত ১৫ ডিসেম্বর মতিউরের বিরুদ্ধে এক মামলায় ৫ কোটি ২৮ লাখ ৭৫ হাজার ৯৩৯ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং ১ কোটি ২৭ লাখ ৬৬ হাজার ২১৬ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ করে দুদক।
একইসঙ্গে দ্বিতীয় মামলায় মতিউরের সঙ্গে আসামি হয়েছেন তার স্ত্রী শাম্মী আখতার শিবলী। তার বিরুদ্ধে ১ কোটি ৮৭ লাখ ১৫ হাজার ৪৯০ টাকার অবৈধ সম্পদ’ এবং ২ কোটি ৭৫ লাখ ২৮ হাজার ৪৭৫ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
গত কোরবানির ঈদের সময় ‘ছাগলকাণ্ডে’ আলোচনায় আসেন একাদশ বিসিএসের (শুল্ক ও আবগারি) কর্মকর্তা মতিউর রহমান।
এরপর তাকে এনবিআর থেকে সরিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে যুক্ত করা হয়। সরিয়ে দেওয়া হয় রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকে সরকার মনোনীত পরিচালক পদ থেকেও।
সংবাদমাধ্যমে একের পর এক মতিউর, তার স্ত্রী ও সন্তানের সম্পদের খবর আসার মধ্যে দুদক তার সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করে।
এরপর তার দেশত্যাগের আলোচনার মধ্যে আদালত মতিউর, তার প্রথম স্ত্রী-সন্তানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়।
কোরবানির জন্য ঢাকার মোহাম্মদপুরের সাদিক অ্যাগ্রো থেকে ইফাত নামের এক তরুণের ১৫ লাখ টাকা দামে ছাগল কেনার ফেইসবুক পোস্ট ঘিরে রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমানকে নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় আলোচনা শুরু হয়।
ছাগল কিনতে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলেছিলেন ইফাত। ধানমন্ডির বাসায় ঈদের দিন ছাগলটি কোরবানি দেওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি। তখন ছাগলসহ ইফাতের ছবি জুড়ে দিয়ে অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন তোলেন- ১৫ লাখ টাকা দিয়ে ছাগল কেনার অর্থের উৎস কী?
এ প্রশ্ন ঘিরে সামনে আসতে থাকে ইফাতের পরিচয়। ইফাত নিজেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবিসহ পোস্ট দিয়ে ও সংবাদমাধ্যমে বাবার পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন, তার বাবা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস, এক্সসাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের সভাপতি মো. মতিউর রহমান।
ইফাতের বাবার পরিচয় ধরে অনেকে প্রশ্ন তোলেন, একজন সরকারি কর্মকর্তার ছেলের বিপুল ব্যয়ে কোরবানির পশু কেনার সামর্থ্য হল কী করে?
অবশ্য ছাগলটি ইফাত শেষপর্যন্ত কেনেননি বলে দাবি সাদিক অ্যাগ্রোর কর্ণধার মোহাম্মদ ইমরান হোসাইনের। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, ইফাত শুধু ১ লাখ টাকা দিয়ে ছাগলটির বুকিং করেছিলেন। তবে অবশিষ্ট মূল্য পরিশোধ করে ছাগলটির তিনি আর নিয়ে যাননি।
বিষয়টি নিয়ে ইফাতের বক্তব্যও এসেছে সংবাদমাধ্যমে। তার দাবি, ইমরান হোসাইনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সূত্রে তার ‘অনুরোধে’ ছাগলটি নিয়ে প্রচারের জন্য এতটা দামের কথা বলে পোস্ট দিয়েছিলেন তিনি।
মতিউর রহমান এ আলোচনায় ঘি ঢালেন ছেলের পরিচয় ‘অস্বীকার’ করে। একটি টেলিভিশনের প্রশ্নের জবাবে তিনি দাবি করেন, মুশফিকুর রহমান ইফাত নামে কেউ তার ছেলে বা আত্মীয় নয়, এমন নামে কাউকে চেনেন না পর্যন্ত। তার একটিই ছেলে, তার নাম তৌফিকুর রহমান।
এরপর ইফাতের পরিচয় ও পারিবারিক ঠিকুজি নিয়ে ফেইসবুকে নানা তথ্য আসতে থাকে। ইফাতের সঙ্গে মতিউর রহমান এবং পরিবারের অন্যদের ছবিও প্রকাশিত হয়।
এক পর্যায়ে সামনে আসেন ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী। একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে তিনি দাবি করেন, ইফাত তার মামাতো বোনের সন্তান। আর মতিউর রহমানই ইফাতের বাবা।
এ সংসদ সদস্য বলেন, ইফাত এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমানের দ্বিতীয় পক্ষের (স্ত্রীর) ছেলে। মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকি ছিলেন শিক্ষা ক্যাডারের সাবেক কর্মকর্তা। সরকারি চাকরি ছেড়ে তিনি নাম লেখান রাজনীতিতে।
মতিউর রহমান এর আগে ব্রাসেলসে বাংলাদেশের কমার্শিয়াল কাউন্সিলের, চট্টগ্রাম কাস্টমসের কমিশনার, ভ্যাট কমিশনার সহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন।
পুরনো খবর-