“আমাদের প্রতিবেশী প্রথম নীতি রয়েছে; এই প্রতিবেশী প্রথমের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আসে সর্বাগ্রে,” বলেন তিনি।
Published : 14 Dec 2023, 08:39 PM
মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালির পাশে দাঁড়ানোর ধারাবাহিকতা ভবিষ্যতেও বজায় রাখার কথা বলেছেন ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনার প্রণয় ভার্মা।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে এমন আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, “১৯৭১ সালে ভারত বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল এবং একইভাবে ভবিষ্যতেও আমরা স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ ও প্রগতিশীল জাতি গঠনের লক্ষ্যকে সমর্থন দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়াব।”
‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’ আয়োজিত ‘সুদৃঢ় হোক বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্ব’ শীর্ষক মিট দ্য সোসাইটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন হাই কমিশনার।
অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেন, আমাদের অভিন্ন যাত্রার দিকে দৃষ্টি দিই, তাহলে দেখতে পাব ভারত ও বাংলাদেশ এবং আমাদের সম্পর্ক অনেক পথ এগিয়েছে। দুদেশে এখন বিশ্বের সবচেয়ে বিকাশমান অর্থনীতি।
“আমাদের অবিচল অগ্রগতি এবং আরও উন্নত ভবিষ্যতের জন্য আমাদের লক্ষ্য আর প্রত্যাশার ফলে আমাদের সহযোগিতার ক্ষেত্রে নতুন সুযোগ ও নতুন প্রেরণা তৈরি করেছে।”
সম্পর্ককে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে দুদেশের নেতাদের অঙ্গীকার কথা তুলে ধরে প্রণয় ভার্মা বলেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে ভারত বেশ অগ্রাধিকার দেয়। যেভাবে আমরা সবসময় বলি, আমাদের প্রতিবেশী প্রথম নীতি রয়েছে; এই প্রতিবেশী প্রথমের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আসে সর্বাগ্রে।
“আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বহুমুখী এবং সেটা দুদেশের উন্নয়নকে পূর্ণতা দেয়। ভারত বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতিশীল উন্নয়ন সহযোগী। আর সেটা আমাদের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি যে পরস্পর সংযুক্ত এমন বিশ্বাসের ভিত্তিতে।”
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে দুদেশের যোদ্ধারা একসঙ্গে রক্ত দেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ৫২ বছর আগের যুদ্ধ কেবল দক্ষিণ এশিয়ার মানচিত্র বদলে দেয়নি, এটা আমাদের মনজগতের মানচিত্রও পাল্টে দিয়েছে।
“বাংলাদেশের স্বাধীনতা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করেছে যে, আমাদের অভিন্ন সাংস্কৃতিক বন্ধন ও সভ্যতা আমাদেরকে একসঙ্গে বেঁধেছে।”
প্রণয় ভার্মা বলেন, বাংলাদেশ-ভারত যখন আরও বিস্তৃত পরিসরের সহযোগিতার দিকে যাচ্ছে, তখন এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, ‘আমরা এবং আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম যেন অভিন্ন ইতিহাসকে ভুলে না যায়।’
“যাতে আমরা একাত্তরের উত্তরাধিকারকে সংরক্ষণ ও প্রচার করি। যেটা আমাদের সম্পর্কের ভিত্তি আর আমাদের অংশীদারত্বকে অবিচল করেছে।”
অনুষ্ঠানে লেখক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল পরামর্শ দেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা ও প্রকাশনা বাড়ানোর।
তিনি বলেন, “ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে সুন্দর হতেই হবে। যখন ইন্টারনেটে মুক্তিযুদ্ধকে খুঁজি, সেখানে শর্মিলা বসুর বই চলে আসে। এটা কি হয়?
“বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে অনেক বই প্রকাশ করতে হবে, যাতে কেউ যদি মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে জানতে চায়, শর্মিলা বসুর বই না এসে আমাদের লেখকদের বই চলে আসে।”
১৯৭১ সালের মে মাসে পাকিস্তানিদের হাতে বাবাকে হারানো এবং তার লাশ খোঁজার মর্মান্তিক ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত এই অধ্যাপক বলেন, “সেই রাজাকার-আল বদররা মন্ত্রী হয়, এটা কি সহ্য করা যায়!”
সম্প্রতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক অভিনেতা পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন আল মাহতাব।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীরপ্রতীক, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলী শিকদার বক্তব্য দেন।