এনবিআর এর প্রথম সচিব (কর) কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালকে বগুড়ায় বদলির আদেশ জারির পরদিন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বিবৃতি দিয়েছে টিআইবি।
Published : 01 Jul 2024, 11:49 PM
দুর্নীতির অভিযোগে সরকারি কর্মচারীদের বদলি, বরখাস্ত, বাধ্যতামূলক অবসরসহ এ ধরনের বিভাগীয় শাস্তি যথেষ্ট তো নয়ই, ক্ষেত্র বিশেষে তা দুর্নীতিকেই উৎসাহিত করে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি।
এসব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আইনি প্রক্রিয়ায় দুর্নীতিবাজ কর্মচারীদের বিচারের কাঠগড়ায় তুলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
দুর্নীতির করে বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর এর প্রথম সচিব (কর) কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালকে রোববার বগুড়ায় বদলির আদেশ জারির পরদিন সোমবার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে এমন বিবৃতি দিয়েছে টিআইবি।
এনবিআরের আদেশে কাজী ফয়সালের বদলির কারণও বলা হয়নি বলে বিজ্ঞপ্তিতে লেখা হয়েছে।
টিআইবি বলেছে, “দুর্নীতির অভিযোগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও পুলিশের কোনো কোনো কর্মকর্তাকে বদলি বা বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে, যা বিভাগীয় পদক্ষেপ হিসেবে আশাব্যঞ্জক প্রথম পদক্ষেপ।
“তবে প্রজাতন্ত্রের কোনো কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেই তাকে বদলি করা, বরখাস্ত বা বাধ্যতামূলক অবসর প্রদানের মত বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখাকেই স্বাভাবিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। দুর্নীতির জন্য কার্যকর জবাবদিহি ও প্রতিরোধের সম্ভাবনার মানদণ্ডে যা একেবারেই যথেষ্ট নয়।”
দুর্নীতির মত অপরাধে শুধু বদলির ব্যবস্থা করা হলে এর মাধ্যমে তা আরও প্রসারিত ও অন্যান্য কর্মচারীদের মধ্যে সেটি সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি করে বলে মনে করছে টিআইবি।
প্রতিষ্ঠানটির ভাষ্য, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী দুর্নীতি করলে দেশের প্রচলিত আইনে শাস্তির মুখোমুখি হতে হয় না, এমন ধারণার প্রসার দুর্নীতিকে আরও উৎসাহ দেয়।
বিভিন্ন সময়ে সংশোধনের মাধ্যমে বিদ্যমান সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা শিথিল করে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের প্রকারন্তরে এক ধরনের সুরক্ষা কবচ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।
তিনি বলেন, “দুর্নীতির দায়ে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শুধু বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দায় শেষ করা সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘনও বটে।
“সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৭ অনুযায়ী, সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান। কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের শাস্তি শুধু বদলি, বরখাস্ত ও অবসর প্রদানে সীমাবদ্ধ রাখা অন্য সকল শ্রেণি-পেশার জনগণের প্রতি আচরণ।”
তার মতে, এসব বিভাগীয় ব্যবস্থা সরকারি খাতের পাশাপাশি অন্যান্য খাতেও যোগসাজশের মাধ্যমে দুর্নীতি বিকাশের অনুঘটকের ভূমিকা পালন করছে।
“দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেলায়ও অন্য সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য দেশের প্রচলিত আইনি প্রক্রিয়ায় তদন্ত ও বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।”
সাম্প্রতিক সময়ে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের দুর্নীতির বেশ গুরুতর ঘটনার দায় রাজনৈতিকভাবে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই মন্তব্য করে ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, “দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিকতার বিষয়টি ক্ষমতাসীন দলের নেতৃবৃন্দের একাংশ স্বীকার করলেও তাদের অনেকেই এর দায় ঢালাওভাবে শুধু সরকারি কর্মচারীদের ওপর চাপানোর চেষ্টা করছেন।
“কিন্তু উচ্চ পর্যায়ের এ দুর্নীতি অনেক ক্ষেত্রেই যে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ও যোগসাজশ ছাড়া সম্ভব নয়, তাও অস্বীকার করার উপায় নেই। অন্যদিকে, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে ঘাটতির অন্যতম কারণ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে দলীয় রাজনৈতিক প্রভাব, তার দায়ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।”
বারবার সরকারের শীর্ষ অবস্থান থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহনশীলতা’ নীতির কথা বলা হলেও তা যে শুধু ‘ফাঁকা বুলি’, জনমনে গেঁথে যাওয়া এমন ধারণা থেকে উত্তরণের দায় রাজনৈতিক নেতৃত্বকেই নিতে হবে বলে মত দিয়েছেন তিনি।