“ফিলিস্তিনের দুর্ভোগ সমগ্র মানবজাতির জন্যই উদ্বেগের। ফিলিস্তিনিদের জীবন মূল্যহীন নয়।”
Published : 22 Apr 2025, 07:35 PM
রোহিঙ্গা ও ফিলিস্তিন সংকট ‘ভুলে না যেতে’ বিশ্বনেতাদের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
মঙ্গলবার কাতারের রাজধানী দোহায় আর্থনা সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান বলে বাসসের এক খবরে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, “ফিলিস্তিনি থেকে শুরু করে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা— যে মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে, তা উপেক্ষা করা বিশ্বের উচিত হবে না।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিচারহীনতা এবং মানবাধিকারের প্রতি অবহেলা বিশ্বের যেকোনো স্থানের উন্নয়নের জন্য হুমকি।
“ফিলিস্তিনের চলমান দুর্ভোগ শুধু একটি অঞ্চলের জন্যই নয়, তা সমগ্র মানবজাতির জন্যই উদ্বেগের। ফিলিস্তিনিদের জীবন মূল্যহীন নয়।”
২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ইউনূস বলেন, মিয়ানমারের দীর্ঘস্থায়ী সংকট আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
“বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশ ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে, যার ফলে সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত দিক থেকে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে।”
সংহতি জানাতে জাতিসংঘের মহাসচিব সম্প্রতি রোহিঙ্গাশিবির পরিদর্শন করেছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, “বৈশ্বিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলেও রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনে বিশ্ব নেতাদের একত্রিত হতে হবে।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “যদিও এ বিশ্ব সবার জন্য স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ ও টেকসই একটা ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে, তবুও এমন অনেক হুমকি রয়েছে, যা ভবিষ্যতের উন্নয়নকে ব্যাহত করতে পারে।
"আমরা অনিশ্চয়তায় ভরা একটা সময়ে বাস করছি, যেখানে বহুত্ববাদ গুরুতর হুমকির মুখে; জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব বাড়ছে; ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা ঊর্ধ্বমুখী এবং মানবিক সংকট আরও গভীর হচ্ছে।"
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “নতুন নতুন নিয়ম, প্রযুক্তি ও শাসন পদ্ধতি দ্রুত গতিতে বিশ্বকে বদলে দিচ্ছে; অতীতের অনেক ধারণাকে সেকেলে করে তুলছে। নতুন করে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতা গড়ে তোলা এর আগে কখনও এত জরুরি ছিল না।"
২০০৬ সালের এ নোবেল বিজয়ী মনে করেন, আজকের সংকটপ্রবণ বিশ্ব, যুদ্ধ ও সংঘাত মানুষের অধিকার ক্ষুণ্ন করার পাশাপাশি অর্থনীতিকে ব্যাহত করছে।
“যেকোনো অর্থবহ এবং টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে শান্তি ও স্থিতিশীলতা হল মৌলিক শর্ত।”
তিনি বলেন, জলবায়ু সংকটের তীব্রতা দিন দিন বাড়ছে এবং ভবিষ্যতে এ খাতের বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় তহবিলের আকার ভবিষ্যতে ছোট হয়ে আসতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তনকে সবার ‘অস্তিত্বের জন্য হুমকি’ হিসেবে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, "তারপরও আমরা নিজেদের ধ্বংস করার মূল্যবোধ ধারণ করে চলেছি। আমরা এমন একটি জীবনধারা বেছে নিয়েছি, যা প্রকৃতিবিরোধী এবং সীমাহীন ভোগের উপর নির্ভরশীল।”
তিনি বলেন, “সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জনকে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির মতো বিবেচনা করা হয়, যা সবকিছুকে একটি ক্ষণস্থায়ী ফলাফলের দিকে ঠেলে দেয়।
“পরিবেশ সুরক্ষার জন্য নতুন একটি জীবনযাত্রার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে, যা গড়ে উঠবে শূন্য কার্বন নির্গমন, সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ এবং শূন্য বেকারত্বের ভিত্তিতে।”
তিনি বলেন, “এভাবেই আমরা একটি নতুন সভ্যতা তৈরি করব, যা সবার জন্য সর্বত্র টেকসই উন্নয়নকে উৎসাহিত করবে।”