অধ্যাপক মোহাম্মদ শোয়েব বলেন, এই ধরনের চাষকে কখনও উৎসাহিত করা যায় না। কেউ যদি এসব বর্জ্যের ভাগাড়ে চাষ করে নিজেরা খায়, সেটাও ক্ষতিকর, আবার বিক্রি করলে তা জনস্বাস্থ্যর জন্যও ক্ষতিকর।
Published : 15 Nov 2024, 01:28 AM
ঢিবির মত উঁচু বিশাল জায়গার কোথাও হয়ত মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে লাশ শাক, কোথাও পুঁইয়ের ডাঁটা লকলক করছে; আবার কোথাও লাউয়ের ডগা লতিয়ে উঠেছে।
এটি গ্রামের কোনো সবজি ক্ষেত নয়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মাতুয়াইল স্যানিটারি ল্যান্ডফিল বা ময়লার ভাগাড়ে গেলে চোখে পড়বে এই দৃশ্য।
এখানে কয়েক একর জায়গাজুড়ে চাষ হওয়া লাল শাক, পুঁই শাক, পাট শাক, কলমি শাক, লাউ, কুমড়ো, সরিষাসহ বিভিন্ন শাক-সবজি বাজার হয়ে চলে যাচ্ছে রাজধানীবাসীর রান্নাঘরে।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে এখন যে বর্জ্য তৈরি হচ্ছে, সেগুলো বাছবিচার না করে প্রাথমিকভাবে ভ্যানে করে সংগ্রহ করা হচ্ছে। এরপর সেগুলো শহরের বিভিন্ন স্থানে থাকা ময়লা রাখার ঘর (সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন) বা এলাকাভিত্তিক ময়লার কনটেইনারে নিয়ে রাখা হয়। পরে সেখান থেকে ল্যান্ডফিল্ডে নিয়ে ফেলে দেওয়া হয়।
প্রশ্ন উঠছে, যেখানে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বর্জ্য থাকাটা প্রায় নিশ্চিত, সেখানে চাষ করা সবজি কতটা নিরাপদ?
ঢাকায় এর আগেও এরকম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মাছ চাষের ঘটনা ঘটেছিল। ২০১৯ সালে রাজধানীর শ্যামপুরে ওয়াসার ‘পাগলা পয়ঃশোধনাগারের’ ১৬টি লেগুনে মাছ চাষের খবরে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম হয়েছিল।
এবার পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলা মাতুয়াইল ল্যান্ডফিল্ডে হচ্ছে শাক-সবজির চাষ।
অভিযোগ উঠেছে, সিটি করপোরেশনকে অর্থ দিয়েই এখানে চাষাবাদ করা হচ্ছে। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে সিটি করপোরেশন।
কারা চাষ করছে?
মাতুয়াইলের ময়লার ভাগাড়ে যারা শাক-সবজির চাষ করছেন, তারা স্বভাবিকভাবে তথ্য দিতে না চাওয়ায় সাংবাদিক পরিচয় গোপন রেখে কথা বলতে হয়।
সেখানকার একজন চাষি দেলোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানালেন, প্রায় দেড় একর জমিতে লাল শাক, মূলা শাক আর পুঁই শাক লাগিয়েছেন। লাল শাক আর মূলা শাক তুলে এক দফা বিক্রি করেছেন, কিছুদিন পর লাউ আর সরিষাও পাবেন।
শাক-সবজি কোথায় বিক্রি হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি যাত্রাবাড়ী নিয়ে বিক্রি করি, পাইকারি। (শাক) ১০ থেকে ২০ টাকা আঁটি। এরপর কই যায়, তা জানি না। অনেকে আমার থেকে খুচরাও কিনে।”
কার সঙ্গে কথা বলে এখানে সবজি চাষ করছেন বা কাউকে টাকা দিতে হয় কি না- এমন প্রশ্নে দেলোয়ার প্রথমে চুপ থাকলেও কিছুক্ষণ পর তার ছোট উত্তর- “সিটি করপোরেশন।”
তার সঙ্গে কথা হয় সবজি ক্রেতা হিসেবে। কথাবার্তার এক পর্যায়ে পরিচয় নিয়ে সন্দিহান হলে কত টাকা দিতে হয়, বা কতদিন ধরে চাষ হয়, তার প্রায় কিছুই আর বলতে চাননি।
মাতুয়াইল ল্যান্ডফিল সংলগ্ন ওই এলাকারই বাসিন্দা মোয়াল্লেম সর্দার। একটি কারখানার কর্মী মোয়াল্লেম সর্দারকে ল্যান্ডফিলে পাওয়া গেল।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখানে সবজি চাষ করছেন আশপাশের কিছু লোকজন। জায়গাটা দিয়েছে সিটি করপোরেশন। ওরা টাকা নেয়। তার বিনিময়ে এখানে লোকজন চাষ করে।
এই সবজি কোথায় যায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এই সবজি প্রধানত যাত্রাবাড়ীর সবজির আড়তে যায়, কারওয়ান বাজারেও যায় অল্পবিস্তর।”
এই ল্যান্ডফিলে পরচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করেন জাহানারা বেগম। তিনিও প্রায় একইরকম তথ্য দিলেন।
“যারা চাষ করে, তারা সকালে এসে সবজি কাইটা নিয়া যায়। বিকালে যাত্রাবাড়ী আর এলাকার বাজারে নিয়া বিক্রি করে। কয়েক দিন পরপর এসব সবজি তোলা হয়। অনেক বছর ধইরাই এইখানে চাষ হইতাছে,” বলেন তিনি।
গবেষণা কী বলছে?
মাতুয়াইলে শাক-সবজির নমুনা নিয়ে এখনও কোনো গবেষণা হয়নি। তবে, শাক-সবজি ও ফলে ক্ষতিকর উপাদানের উপস্থিতি জানতে সম্প্রতি একটি গবেষণা চালিয়েছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। এসব গবেষণায় সবজিতে ভারী ধাতু ও ফলে কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ খুঁজে পাওয়া গেছে।
গেল ২৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের প্রশিক্ষণ কক্ষে গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করা হয়।
গবেষক দল ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের ছয়টি জেলা থেকে মোট নয় ধরনের সবজি সংগ্রহ করেছিলেন; এর মধ্যে ছিল আলু, বেগুন, ঢেঁড়স, টমেটো, লাল শাক, পটল, বাঁধাকপি, শসা ও মটরশুটি।
এর মধ্যে সবজিতে ভারী ধাতুর উপস্থিতি এবং এর মাত্রা নিয়ে গবেষণা করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম ও সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া।
গবেষণায় দেখা গেছে, এসব সবজিতে লেড, ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়ামসহ বেশ কয়েকটি ভারী ধাতুর উচ্চমাত্রার উপস্থিতি রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর মাত্রায় হেভি মেটাল বা ভারী ধাতুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে লাল শাকে।
গবেষকরা জানান, যেসব সবজিতে হেভি মেটাল বা ভারী ধাতু রয়েছে, সেগুলো দীর্ঘদিন খেলে ক্যান্সারের মত প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
গবেষণায় উঠে এসেছে, লালশাকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ক্যাডমিয়ামের মত ভারী ধাতু পাওয়া গেছে। ক্যাডমিয়ামের সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রা যেখানে প্রতি কেজিতে ১৯০ মাইক্রোগ্রাম, সেখানে লালশাকে পাওয়া গেছে প্রতি কেজিতে ৭০৪.৩২ মাইক্রোগ্রাম।
বেগুনে পাওয়া গেছে প্রতি কেজিতে ২৭৫.৬৬ মাইক্রোগ্রাম, ঢেঁড়সে ৩৪৯ মাইক্রোগ্রাম ও টমেটোতে প্রতি কেজিতে ১৯৫ মাইক্রোগ্রাম।
তাদের গবেষণা অনুযায়ী, ক্রোমিয়ামের মতো ভারী ধাতুর মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি পাওয়া গেছে শিম, শসা, ঢেঁড়স, পটল ও লালশাকে। লেডের মতো ভারী ধাতুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে বেগুন, বাঁধাকপি, শিম, শসা, ঢেঁড়স, পটল, টমেটো ও লালশাকসহ নয় ধরনের সবজিতেই। সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি ক্যাডমিয়াম পাওয়া গেছের বেগুন, ঢেঁড়শ, টমেটো ও লালশাকে।
ভারী ধাতু নিয়ে শঙ্কা
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ যে গবেষণা করেছে, সেখানে শাক-সবজি নিয়ে কাজ করা দুজনের একজন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গোলাম কিবরিয়া।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ল্যান্ডফিলে যদি লেড বা ব্যাটারি ডিসপোজ করা হয়, কারখানার বর্জ্য বা বাসার যে কোনো বর্জ্য এনে ফেলা হয়, এগুলো অবশ্যই পরিবেশবান্ধব না এবং এটা মাটিতে যুক্ত হচ্ছে। আমরা যখনই একটা শস্য মাটিতে পুঁততে বলি, তার আগে আমরা বলি মাটিটা যাতে স্বাস্থ্যকর হয়। বাংলাদেশের সব জায়গার মাটিতেই ভারী ধাতু আছে। কিন্তু, যখনই এটা একটা এক্সট্রিম লেভেল পার হয়ে যায়, তখন সেটাকে আমরা বিষাক্ত বলি।
“ল্যান্ডফিল এরিয়ায় শাক-সবজি চাষ করা হলে তখন এ গাছগুলো মাটি থেকে যখন খাদ্য নেয় বা প্রয়োজনীয় পদার্থ শোষণ করে, তখন সে মাটিতে যে (ক্ষতিকর) জিনিসগুলো থাকে সেগুলোও গ্রহণ করে। তখন ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যায়। আমরা যখন আলু খাই, শসা খাই, আমরা কিন্তু চামড়াটা ফেলে খাই, সেক্ষেত্রে আমাদের দেহে ক্ষতিকর উপাদানের পরিমাণ কিছুটা কমে যায়। কিন্তু, শাক-সবজির ক্ষেত্রে চামড়া ফেলি না। কেটে রান্না করে খাই।”
সে কারণে ওই রকম জায়গায় শাক-সবজি চাষ করাটা ঝুঁকিপূর্ণ জানিয়ে তিনি বলেন, “এই মাটি থেকে আমাদের ফুড সিস্টেমে কী ঢুকছে, সেটা আমরা বলতে পারব না। খাওয়ার পরেও এটা মানবদেহের জন্য কতখানি ক্ষতিকর সেটা নিয়েও গবেষণা হওয়া দরকার। এটা বিস্তর গবেষণার বিষয়।
“তবে, আমার পরামর্শ হচ্ছে, এসব জায়গায় শাক-সবজির চাষ না করাটাই ভালো। আমরা সেখানে ফুল চাষ করতে পারি। অথবা যেসব জিনিস আমরা খাই না সেরকম জিনিসের চাষ হতে পারে। এটা লাভজনকও হতে পারে। এই ধরনের গাছ মাটি থেকে ভারী ধাতু গ্রহণ করে ফেলে, এতে ওই মাটিটাও ফ্রেশ হয়ে গেল।”
রয়েছে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি
এসব শাক-সবজি দীর্ঘ দিন ধরে খেলে কী ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে সে বিষয়ে ধারণা পাওয়া গেল জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরীর কথায়।
তিনি বলেন, “মাতুয়াইল ল্যান্ডফিলে যেসব বর্জ্য জমা করা হয়, সেখানে যেমন মেডিক্যাল বর্জ্য রয়েছে, অন্যদিকে গার্হস্থ্য বর্জ্যও রয়েছে। আবার রাস্তা থেকে কুড়িয়ে আনা বর্জ্যও রয়েছে। অর্থাৎ বর্জ্যের নির্দিষ্ট কোনো ধরণ নেই। ফলে, এটি উদ্বেগজনক।”
কারণ হিসবে তিনি বলেন, “কতগুলো বর্জ্য রয়েছে, যেগুলো মাটিতে গেলে সারের কাজ করে। যেমন, শাকসবজি বা ফলমূলের বর্জ্য। অন্যদিকে, মেডিকেল বর্জ্যের একটি অংশ, যেমন, রেডিও অ্যাকটিভ আয়োডিন বা ক্যান্সারের ওষুধ এগুলো কিন্তু এমন রাসায়নিক, যেগুলো পরবর্তীতে শোষিত হয়ে শাক-সবজি ফলমূলে আসতে পারে। আবার, বিকিরণ ছড়াতে পারে, এমন বর্জ্যও আসতে পারে। এর বাইরে লেড, ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম এই জাতীয় ভারী ধাতুগুলো ব্যাটারিজনিত বর্জ্য বা মেডিকেল বর্জ্য থেকে আসতে পারে।”
সেরকম হলে এখানে উৎপাদিত শাকসবজি মানব শরীরের ক্ষতি করতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, “বিশেষ করে ক্যান্সার উৎপাদন করতে পারে এবং আমাদের দেহের কোষের স্বাভাবিক কর্ম বিন্যাসকে নষ্ট করে দিতে পারে। এছাড়া
থাইরয়েডসহ আমাদের শরীরে যে হরমোনগুলো রয়েছে, এগুলোকে প্রভাবিত করতে পারে।
“অন্যদিকে ভারী ধাতুগুলো আমাদের লিভার, কিডনি, পাকস্থলী এবং স্নায়ুতন্ত্রকে ক্ষতি করতে পারে। সবমিলিয়ে নানা জাতীয় রোগ, তার মধ্যে অসংক্রামক রোগ ক্যান্সার, হৃদরোগ, স্নায়ুতন্ত্রের বিকলতা ইত্যাদি হতে পারে। এ ধরনের শাক-সবজি সঠিক পরীক্ষা ছাড়া খাওয়া উচিত নয়।”
পরীক্ষা করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের
মাতুয়াইল ল্যান্ডফিল্ডের শাক-সবজিতে ক্ষতিকর কোনো ভারী ধাতুর উপস্থিতি আছে কি না তা নমুনা পরীক্ষা করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জাকারিয়া।
তিনি বলেন, “এটা আমাদের নজরে আছে। আমরা এই বিষয়গুলো যাচাই করছি। আমরা একটা চিঠি ইস্যু করেছি এই তথ্য দেওয়ার জন্য। এটা এখনও পর্যালোচনা পর্যায়ে আছে। এসব শাক-সবজিতে ক্ষতিকারক কোনো পদার্থ আছে কি না, সেটা আমরা এখনও নির্ণয় করতে পারিনি। এটা নিয়ে কাজ শুরু হবে; প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।”
ক্ষতিকর কিছু পাওয়া গেলে কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিবে কি না জানতে চাইলে জাকারিয়া বলেন, “হ্যাঁ, অবশ্যই। আমরা ব্যবস্থা নিই, যখন এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়। প্রথমে আমরা নমুনা নিই, এরপর প্রাপ্ত ফলাফলের উপর ভিত্তি করে ব্যবস্থা নিই।”
তবে, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, এমন জায়গায় শাক-সবজির চাষ করা উচিত নয়, যেখানে স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে।
সংস্থার সদস্য (খাদ্য শিল্প ও উৎপাদন) অধ্যাপক মোহাম্মদ শোয়েব বলেন, “এখানে সবজি চাষ অবশ্যই ক্ষতিকর। ইভেন এখানে যারা কাজ করে, ওদের শরীরেও বিভিন্ন কেমিকেল প্রবেশ করে। এটা নিয়ে আমার গবেষণা রয়েছে।
“২০০৮ সালে আমরা গবেষণা করেছিলাম, আমিনবাজার এবং মাতুয়াইল ল্যান্ডফিলে যেসব শিশুরা কাজ করে, তাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের হেভি মেটাল (লেড, ক্যাডমিয়াম) অনেক বেশি মাত্রায় পেয়েছিলাম, যা খুবই ক্ষতিকর।”
যেখানে এই শাক-সবজি চাষ হচ্ছে, সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে দেখা যাতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সয়েল স্যাম্পলও কালেক্ট করা যেতে পারে। কী ধরনের হেভি মেটাল অ্যাকোমেডশন হচ্ছে, দেখা যেতে পারে। তবে, এই ধরণের চাষকে কখনও উৎসাহিত করা যায় না। কেউ যদি এসব বর্জ্যের ভাগাড়ে চাষ করে নিজেরা খায়, সেটাও ক্ষতিকর, আবার বিক্রি করলে জনস্বাস্থ্যর জন্যও ক্ষতিকর।”
সিটি করপোরেশনের ভাষ্য
ডিএসসিসির আওতাধীন এই এলাকায় তাদের অজ্ঞাতসারে চাষ হওয়ার কথা না। ঘটনার দায় স্বীকারও করেছে ডিএসসিসি।
ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এবং মাতুয়াইল স্যানেটারি ল্যান্ডফিল সম্প্রসারণ প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ সফিউল্লাহ সিদ্দিক ভূঁইয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শাক-সবজি চাষের বিষয়টি সত্য। আগে এটা আরও বিস্তর এলাকা জুড়ে হত, এখন কমেছে। তবে, আমি কখনই বলব না যে এটা পুরোপুরি আমরা কমাতে পেরেছি। কিন্তু, আমি ২০২১ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর আগের তুলনায় এটা কমেছে।
“আমরা এখন সেখানে বাউন্ডারি করে জায়গাটা রেস্ট্রিকটেড করার চেষ্টা করছি। অনেক বছর ধরেই এই ময়লাকে কেন্দ্র করে ‘নিম্নশ্রেণির মানুষের’ একটা জীবন-জীবিকা গড়ে উঠেছে। ‘টোকাই শ্রেণির’ লোক এটার সাথে যুক্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা অনেকাংশে ‘টোকাই’ বা ‘আউটসাইডারদের’ নিবৃত্ত করার চেষ্টা করছি। আমরা চেষ্টা করছি, এই গ্রুপটাকে সরানোর জন্য। কিছু লিকেজ হচ্ছে, এটা আমি অস্বীকার করব না। সেটার সুযোগে কিছু-কিছু জায়গায় এই কাজগুলো হচ্ছে।”
চাষ বন্ধ করার উদ্যোগ নিলে এর সঙ্গে জড়িতরা ‘ঝামেলা’ করে বলেও জানান তিনি।
“সিটি করপোরেশনের লোক দিয়ে তাড়ানোর ব্যবস্থা করেছিলাম। পরে, এই শ্রেণির লোকজন সংঘবদ্ধভাবে এসে অফিসে ঝামেলা তৈরির চেষ্টা করে। এটা যদি ফুড চেইনে চলে যায়, তখন শুধু তো আশপাশের লোকজন শুধু না, যে যে জায়গায় এগুলো বিক্রি করে, সেসব জায়গার লোকদেরও সমস্যা তৈরি হবে।”
তবে, টাকার বিনিময়ে সবজি চাষ করতে দেওয়ার অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন সফিউল্লাহ।
“এটা পুরোপুরি অ্যাবসার্ড কথা। ওরা বাঁচার জন্য এরকম বলেছে। এখন দেখা গেছে নামসর্বস্ব যেসব লোক এ কাজ করতেছে, দুই-একজন হয়ত তাদের বলছে ‘ভাই, আমাদের কিছু টাকা দেন, আমরা ব্যবস্থা করে দিচ্ছি’, এরকম বিচ্ছিন্ন ঘটনা হয়ত ঘটতে পারে। কিন্তু, এটা অ্যালাউ করার কোনো সুযোগ নেই। আমি এটা শনাক্ত করার চেষ্টা করে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করব।”