মিয়ানমারে শান্তি, নিরাপত্তা ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা রাখতে আসিয়ান ও অন্যান্য আঞ্চলিক অংশীদার রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
Published : 19 Dec 2024, 07:17 PM
বাংলাদেশের স্বার্থেই মিয়ানমারে স্থায়ী শান্তি, স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্র দেখতে চাওয়ার কথা বলেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে বৃহস্পতিবার থাইল্যান্ডে ছয় প্রতিবেশী দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময়ে তিনি বলেন, “মিয়ানমারে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি, স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্র দেখা এবং নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে রাখাইন রাজ্যে ফেরার ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের আস্থা অর্জনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা বাংলাদেশের স্বার্থের মধ্যে পড়ে।”
থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিস সানগিয়ামপঙ্গসার সভাপতিত্বে ছয় জাতির ওই আলোচনায় তৌহিদ হোসেন ছাড়াও মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উ থান সোয়ে, লাওসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থংসাভান ফনভিহানে, চীনের সহ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুন ওয়েইদং এবং ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি অংশ নেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ওই আলোচনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের প্রলম্বিত মানবিক পরিস্থিতির নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেছেন, গত কয়েক মাসে মিয়ানমার থেকে আরও ৬০ হাজার মানুষের আগমন আগের জটিলতা বাড়িয়ে তুলেছে।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতন ও গণহত্যার মুখে ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট রাখাইন (আরাকান) রাজ্য থেকে বাংলাদেশে স্রোতের মত ঢুকতে শুরু করে রোহিঙ্গারা। কয়েক মাসের মধ্যে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেয়। যেখানে আগে থেকেই ক্যাম্পে বসবাস করছিল আরও চার লাখ।
আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ওই বছরের শেষ দিকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয় মিয়ানমারের অং সান সু চি সরকার। ওই বছর সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতে সইও করে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে ২০১৯ সালে দুই দফায় প্রত্যাবাসনের উদ্যোগও নেওয়া হয়। কিন্তু মিয়ানমার সরকারের ওপর আস্থা রাখতে পারেনি রোহিঙ্গারা, ভেস্তে যায় আলোচনা।
এরপর আসে কোভিড মহামারী, রোহিঙ্গাদের ওপর থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগেও ঢিল পড়ে। বিশ্বজুড়ে সেই সংকটের মধ্যেই ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সু চির সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেন সামরিক জান্তা জেনারেল মিন অং হ্লাইং। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় আসে নতুন ‘বাধা’।
এখন মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধের কারণে প্রত্যাবাসনের আলোচনা আপাতত বন্ধ, উল্টো রাখাইনে যুদ্ধের কারণে নতুন করে অনুপ্রবেশের কারণে বাংলাদেশের উদ্বেগ আরো বাড়ছে।
সীমান্ত সংলগ্ন চলমান সশস্ত্র সংঘাতের পাশাপাশি মানবপাচার, মাদক ও অস্ত্র চোরাকারবারিসহ আন্তঃরাষ্ট্রীয় অপরাধ কার্যক্রমের বিষয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগের কথা বৈঠকে তুলে ধরেন তৌহিদ হোসেন।
রাখাইন রাজ্যের স্থিতিশীলতায় অগ্রাধিকার দেওয়ার তাগিদ দিয়ে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে ‘সমন্বিত রোডম্যাপ’ দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
মিয়ানমারে শান্তি, নিরাপত্তা ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আসিয়ান ও অন্যান্য আঞ্চলিক অংশীদার রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সময়মত প্রয়োজনীয় সব সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব দেন তিনি।
তৌহিদ হোসেন আন্তঃরাষ্ট্রীয় অপরাধ দমনে গোয়েন্দা তথ্য আদানপ্রদান এবং আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সহযোগিতা বাড়ানোরও পরামর্শ দেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মিয়ানমারের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সশস্ত্র নৃ-গোষ্ঠী সংগঠনগুলোর (ইএও) সঙ্গে সংলাপ, ২০২৫ সালে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি, আন্তঃরাষ্ট্রীয় অপরাধ দমন এবং রাখাইনসহ অন্যান্য জায়গায় বাস্তচ্যুতদের ফেরানোর ক্ষেত্রে তার সরকারের পদক্ষেপের কথা বৈঠকে তুলে ধরেন।
চীন ও ভারতের প্রতিনিধিরা টেকসই আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে মিয়ানমারের নিজস্ব শান্তি প্রক্রিয়ায় সমর্থন দেওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। মিয়ানমারে বিবাদমান পক্ষগুলোর মধ্যে আলোচনার উদ্যোগের কথাও তারা তুলে ধরেন।
সীমান্ত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নের পাশাপাশি শান্তি ও অন্তর্ভূক্তিমূলক ভবিষ্যতের আকাঙ্ক্ষার ক্ষেত্রে মিয়ানমারকে সমর্থনের বিষয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময়ের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, বৃহস্পতিবারের ছয় জাতির বৈঠকের ধারাবাহিকতায় শুক্রবার আসিয়ান পর্যায়ে বিস্তৃত পরিসরে অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময় হওয়ার কথা রয়েছে।