“তাদের সঙ্গে আমাদের বহুমুখী সম্পর্ক রয়েছে। তাই আমরা চাইব ভারতের সঙ্গে সম্পর্কটা আরও ভালো জায়গায় যাক”, বলেন তিনি।
Published : 08 Dec 2024, 09:20 PM
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রির ঢাকা সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক ‘ভালো হবে’ বলে আশা করছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
সফরের আগের দিন রোববার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে হওয়া বৈঠকে অগ্রাধিকার কী হবে- এই প্রশ্নে প্রেস সচিব বলেন, “ভারত আমাদের প্রতিবেশী। তার সঙ্গে আমাদের ভাষাগত, ইতিহাস ও সংস্কৃতিগত যোগাযোগ রয়েছে। অভিন্ন অনেক নদী রয়েছে। ভারতের সঙ্গে আমাদের যে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্টতার বিষয় রয়েছে, সেই প্রত্যেকটা বিষয়ে আলোচনা হবে। প্রত্যেকটা বিষয়ই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।”
এই সফরের মাধ্যমে চলমান ‘অস্থিরতা’ নিরসন হওয়ার আশা করেন কি না— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘আমরা আশা করছি ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা ভালো হবে।
“তাদের সঙ্গে আমাদের বহুমুখী সম্পর্ক রয়েছে। তাই আমরা চাইব ভারতের সঙ্গে সম্পর্কটা আরও ভালো জায়গায় যাক। যাতে দুই দেশের মানুষই এটার সুফল ভোগ করে। একই সঙ্গে চাচ্ছি ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা ন্যায্যতা, সমতা ও মর্যাদাপূর্ণ হবে। সেটা আমাদের ফোকাস।’’
ভারতের সঙ্গে করা ‘অসম’ চুক্তির বিষয়ে দেশটির পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে আলোচনা হবে কি না- এমন প্রশ্নে উপপ্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, “ভারতের সঙ্গে আগামীতে কি ধরনের সম্পর্ক হবে তা ভবিষ্যৎ বলতে পারে। তবে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো ছাড়া ‘অসম’ চুক্তিগুলো রয়েছে তা নিয়ে ভবিষ্যতে অবশ্যই আলোচনা হবে। এটা সামনে বোঝা যাবে।”
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে সোচ্চার ভারতের বেশি কিছু সংবাদ মাধ্যম। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগকে ‘অপপ্রচার’ আখ্যা দেওয়া হচ্ছে।
এর মধ্যে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর গ্রেপ্তার উত্তেজনা বাড়িয়েছে। এ নিয়ে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বিবৃতিতের মধ্যে আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা হয়েছে।
ভারতীয় সাংবাদিকদের বাংলাদেশে ‘আমন্ত্রণ’
ভারতীয় সাংবাদিকদের বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়ে এক প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, “আমরা তাদের বলতে পারি আপনারা আসেন। এসে মাঠে থেকে রিপোর্ট করে যান। ঘটনাস্থলে না এসে কারও মুখের কথা কোনো প্রতিবেদনে কতটুকু সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায় না। সেজন্য আমরা তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। কারণ, আমরা স্বচ্ছতায় বিশ্বাসী। বিশ্বাস করি যে তারা এখানে আসলে ভারতের টিভি ও গণমাধ্যমে যে ‘অপতথ্য’ ছড়ানো হচ্ছে তা অনেকাংশে দূরীভূত হবে।”
আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘প্রতিনিধি পাঠাবেন কি পাঠাবেন না, সেটা তাদের সিদ্ধান্ত। কিন্তু অনেক গণমাধ্যম তো সত্য প্রচার ‘বিশ্বাসী’ না। সে দেখছে ‘মিথ্যা চলে ভালো’। সত্যতাটা মানুষের অত বেশি ‘নজর কাড়ে না’। এ জন্য হয়ত তারা আসতেছে না। কিন্তু আমাদের আমন্ত্রণ সবার প্রতি।’’
শেখ হাসিনাকে ফেরাতে কেন বলছে না বাংলাদেশ
এই প্রশ্নে শফিকুল আলম বলেন, “সরকার শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে আইনে সমর্পণ করতে চায়। তার আমলে ‘গণহত্যা’ হল, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হত্যার ‘মূল নির্দেশদাতা’ শেখ হাসিনা। তার আমলে ‘গুম’ হয়েছে। জনগণের ট্যাক্সের টাকা ‘পাচার হয়েছে’। পুরো বিষয়ে জবাবদিহিতার জন্য শেখ হাসিনাকে আইনের আওতায় আনা সরকারের কমিটমেন্ট, এটা করব।”
ভারতের সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তির বিষয়টি উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেন, “এ চুক্তির কিছু আইনি দিক আছে। সেগুলো পূরণ করে একজন ফেরত চাইতে পারেন। সে আনুষ্ঠানিকতাগুলো সরকার পূরণ করছে। তারপর আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কাছে ফেরত চাইব।”
শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারে আদালতের নির্দেশনার বিষয়ে তিনি বলেন, “আইসিটি (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল) আদালতের নির্দেশনা আমরা দেখেছি। তার ‘বিদ্বেষমূলক’ বক্তব্যের বিষয়ে যারা কাভার করেন তারা লক্ষ্য রাখবেন। সেগুলো যাতে কেউ প্রচার না করেন।”
‘অপতথ্য’
বাংলাদেশকে ঘিরে কী ‘অপতথ্য’ প্রচার হচ্ছে সেটা দেখছে বলেও মন্তব্য করেন প্রেস সচিব। তিনি বলেন, মেটার হয়ে এখানে তৃতীয় পক্ষ কাজ করেন, ‘ফেইক নিউজ’, ‘অপতথ্য’, ‘ভুল তথ্য’ যারা ডিটেক্ট করেন, তারা মেটাকে অ্যালার্ট করবেন। অবশ্যই মেটা তা দেখবে। কারণ, এখানে তাদের ব্যবসা আছে। আমরা চাচ্ছি যেগুলো ‘মিথ্যা, অপতথ্য’, সেগুলো যেন রিমুভ করা হয়।”
“আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ফেইসবুক পেইজে ‘গুজব’ ছড়ানো হচ্ছে, সেগুলোর বিষয়ে সরকার শক্ত অবস্থানে যাবে কি না”- একজন সংবাদকর্মীর এমন প্রশ্নে শফিকুল আলম বলেন, “এখানে মেটার হয়ে তৃতীয় পক্ষ তদন্ত করে। তারা দেখছে কোথা থেকে ‘অপতথ্য’ ছড়ানো হচ্ছে।
“অনেক সময় রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাদের নজরে আনা হলে, তারা রাষ্ট্রকে সংশয়ের চোখে দেখে। আগের সরকার ভালো ইউটিউবার, ফেইসবুকে ভালো মন্তব্যকারী, যাদের ফলোয়ার রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেও অ্যাকশনে যেত, পেজ রিমুভের চেষ্টা করত। মেটার কাছে ট্রাস্টের বিষয় আছে। তাই আমরা চাইব ফেইক নিউজ তারা রিমুভ করবে।”
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “যদি কোনো পেজের ‘অপতথ্যের’ কারণে দেশের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়ে, তাহলে মেটার নজরে আনব অবশ্যই। কোনো ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা সংবাদ’ ছড়ানো হয় অবশ্যই নজরে আনব। দেশের সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত আসলে অবশ্যই নজরে আনব। “কিন্তু আমরা চাচ্ছি নিয়মতান্ত্রিকভাবে যেগুলো সিরিয়াসভাবে আমাদের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে তা নজরে আনব।”
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মেটার প্রতিনিধি দলের আলোচনায় ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের ‘অপতথ্য’ প্রচার নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে উপপ্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, “সব অপতথ্যের বিষয়ে মেটার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে, যাতে এটাকে কীভাবে ট্যাকেল করা যায়।”
ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন করেছে। এজন্য প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করতে আসতেছে।”
ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রিও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন বলে জানান অপূর্ব জাহাঙ্গীর।
‘যথেষ্ট সয়াবিন তেল আছে’
খোলা বাজারে সয়াবিন তেল না পাওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে প্রেস সচিব বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে, তারা পুরোপুরি জানাবে। কিন্তু আমরা মনে করছি না বাজারে কোনো সংকট আছে সয়াবিন তেলের।
“যথেষ্ট সয়াবিন তেল আছে। সামনের রমজানের সরবরাহের সংকট না হয় সে জন্য সরকার এলসি সহজ করেছে, আন্তর্জাতিক বাজারদর মনিটরিং করছি। আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা আছে রোজার সময় মানুষ সয়াবিন ও পাম অয়েল সাশ্রয়ী মূল্যে পান।”
উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদারও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
‘নির্বাচিত সরকার’ নিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টার মন্তব্য ‘ব্যক্তিগত’: প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর