ফুলকোর্ট সভা ডাকার বিষয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, “যেভাবে ডেকেছেন, এটা মনে করা হচ্ছে যে, একটা স্বৈরাচারি পরাজিত শক্তি ছিল, তাদের একটা মুভ।”
Published : 10 Aug 2024, 01:20 PM
গণআন্দোলন থেকে পদত্যাগের দাবি উঠলে কী করা উচিত সেটা প্রধান বিচারপতি বুঝতে পারবেন বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বতীকালীন সরকারের আইন ও বিচার উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ফুলকোর্ট সভা আহ্বান অনভিপ্রেত বলেও মনে করেন আইন উপদেষ্টা।
শনিবার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের ফুলকোর্ট সভা আহ্বান এবং পরে তার পত্যাগের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হাই কোর্ট ঘেরাওয়ের প্রেক্ষাপটে আইন উপদেষ্টার এই বক্তব্য এলো।
সকালে সচিবালয়ে নিজের কক্ষে আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পরে সাংবাদিকরা প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের দাবির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আসিফ নজরুল বলেন, “শিক্ষার্থীরা.. গণআন্দোলন থেকে পদত্যাগের দাবি উঠলে সেটাকে কতটুকু সন্মান প্রদর্শন করতে হয় সেটা আমাদের প্রধান বিচারপতি বুঝতে পারবেন বলে আমার প্রত্যাশা থাকবে।”
সকালে প্রধান বিচারপতি হাই কোর্টের বিচারপতিদের নিয়ে ফুলকোর্ট সভা আহ্বান করার করলেও আন্দোলনকারীরা ঘেরাওয়ের ডাক দেওয়ার পর তা স্থগিত করা হয়।
ঘেরাওয়ের ডাক দেওয়ার পর বেলা ১১টার দিকে আন্দোলনকারীরা হাই কোর্টের এ্যানেক্স ভবনের সামনে অবস্থান নেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “দুপুর ১টার মধ্যে ফ্যাসিবাদের মদদপুষ্ট প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের সব বিচারপতিদের পদত্যাগ করতে হবে। অন্যথায় আমরা প্রধান বিচারপতির বাসভবন ঘেরাও করব।”
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, “এটা ছাত্রদের আল্টিমেটাম। আপনাদের মনে রাখতে হবে, এটা ছাত্র-জনতার বিপ্লব। এই আন্দোলনে অসংখ্য শিক্ষার্থীর প্রাণ ঝরেছে। এই আন্দোলনে আমাদের মুখে যখন আবু সাঈদের কথা, মুগ্ধের কথা বা ফাইয়াজের কথা দেখি, আমরা যখন দেখি একটা শিশু, ছয় বছরের মারা গেছে… তাদের কথা যখন পড়ি …খুবই আবেগাপ্লুত হয়ে যাই।
“এই আবেগের প্রতিনিধিত্ব করে আমাদের সমন্বয়করা। এতো বড় একটা গণআন্দোলন, যেখানে ১৬/১৭ বছর যাবত জেগে থাকা একটা এতো শক্তিশালী নির্মম একটা সরকার, সেই সরকারের প্রধান, উনাকে পালিয়ে যেতে হয়েছে …. ওই একটা জায়গা থেকে আহ্বান আসার পর প্রধান বিচারপতির কি করা উচিত এটা উনার বিবেচনার ওপর ছেড়ে দিলাম।”
‘ফুলকোর্ট আহ্বান স্বৈরাচারি শক্তির পক্ষে মুভ’
ফুলকোর্ট সভা ডাকার সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে আইন উপদেষ্টা বলেন, “আমি এই ব্যাপারটা যতটুকু জানি, আমাদের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি একজন আছেন, উনি একটা ফুলকোর্ট মিটিং ডেকেছিলেন। এটা ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে আমি একটা স্ট্যাটাস দেখিছি যে, আসিফ মাহমুদ বলেছে যে, উনি (প্রধান বিচারপতি) কারো সাথে উনি কনসাল করেননি। যেভাবে ডেকেছেন, এটা মনে করা হচ্ছে যে, একটা স্বৈরাচারি পরাজিত শক্তি ছিল, তাদের একটা মুভ।”
আইন উপদেষ্টা বলেন, “এই ব্যাপারে কমেন্ট করার আগে আমি কয়েকটা কথা বলতে চাই, প্রধান বিচারপতি অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় উনি। উনার কিছু ব্যাপারে তো প্রশ্ন ছিল…. বিশেষ করে যখন আন্দোলনটা হচ্ছে উনি প্রশ্ন করেছিলেন যে, আন্দোলন করে রায় পরিবর্তন করা যায় কিনা। এই বিষয়টা মানুষ ভালোভাবে নেয়নি।
“এছাড়া একটা ব্যাপার ছিল খুব দূঃখজনক, সেটা ছিলো যে, উনি ছাত্রলীগের কাছ থেকে চিফ জাস্টিস হওয়ার পরে ফুলের শুভেচ্ছা নিয়েছেন। আমার ব্যক্তিগত অভিমত হচ্ছে, এটা কোড অব কনডাক্ট ছিল এবং এটা ভালো একটা ইম্প্রেশন দেয় না এবং উনি …. ডিবি পুলিশের প্রধান ছিল হারুন, যার সম্পর্কে নানা প্রশ্ন রয়েছে, উনি আমাদের এই ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদেরকে ধরে নিয়ে নির্যাতন, আটকে রাখা… এটার মূল ব্যক্তি ছিলেন। উনি একজন ডিবি পুলিশের প্রধানের কাছ থেকে সোনার তৈরি তরবারি উপহার নিয়েছিলেন। আমার তখন খুব অবাক লেগেছিল। উনি বিদেশে গেলে ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ আছেন তাদের বাসায় থেকেছেন। এসব কারণে উনাকে নিয়ে কনট্রোভার্সি ছিল।”
আসিফ নজরুল বলেন, “তারপর উনি (প্রধান বিচারপতি) কোটা বৈষম্য বিষয়ক মামলাটি নিয়ে যখন কমেন্ট করেছিলেন, কিসের আন্দোলন, এটা রিঅ্যাক্ট করেছে। আমি যতটুকু জানি, ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে উনার পদত্যাগের ব্যাপারে দাবি উঠেছিল, আজকে আবারও দাবি উঠেছে। এই প্রেক্ষিতে উনি ফুল কোর্টের মিটিং ডেকেছিলেন, এটা অনভিপ্রেত ঘটনা। এ ধরনের ঘটনা না ঘটলেই ভালো।”
আইন উপদেষ্টা বলেন, “আমরা তো মনে করি সুপ্রিম কোর্ট হচ্ছে আমাদের সংবিধান রক্ষা ও মানবাধিকার রক্ষার সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান। এমন কিছু কারোরই করা উচিত না যেখানে ছাত্র-জনতার যে গণআন্দোলন বা গণঅভ্যুত্থান, এটার বিপক্ষে সুপ্রিম কোর্টকে কারো দাঁড় করানো উচিত না।
“আপনারা ইতিমধ্যে দেখেছেন, দেশের পুলিশ বাহিনীকে এই গণআন্দোলনের বিপক্ষে দাঁড় করানোর কি পরিণতি হয়েছে। আমরা এমন কিছু হোক কখনই চাইব না। আমরা আশা করব যে, সবার শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং ছাত্র জনতার যে আকাঙ্ক্ষা রয়েছে, এটার প্রতি আমরা যেন সবাই সম্মান দেখাই।”
শনিবার সচিবালয় বন্ধ থাকলেও আইন উপদেষ্টা এদিন অফিস করেন। এদিন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানও আইন উপদেষ্টার অফিসে এসে দেখা করেছেন। এছাড়া অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামানও আইন উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছেন।