মসজিদের বর্তমান পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক দেড় যুগের বেশি সময় ধরে একই পদে আছেন। এ নিয়ে আরেক পক্ষের ক্ষোভ আছে।
Published : 05 May 2023, 09:23 PM
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে একটি মসজিদে পরিচালনা কমিটির নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধের জের ধরে পুলিশ প্রহরায় জুমার নামাজ হয়েছে।
মোহাম্মদপুর হাউজিং লিমিটেডের 'কুবা মসজিদে'র বাইরে শুক্রবার জুমার নামাজের অনেক আগেই পুলিশ মোতায়েন করা হয়। নামাজের পরেও পুলিশের অবস্থান দেখা যায়।
মোহাম্মদপুর থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দুটি পক্ষ রয়েছে মসজিদে। গত ২৮ এপ্রিল জুমার দিন তাদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে স্থানীয় কাউন্সিলর এবং পুলিশের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
ওই ঘটনায় থানায় একটি জিডি করা হয়েছে জানিয়ে ওসি বলেন, "গত জুমার গণ্ডগোলের জের ধরে আর যেন কোনো ঝামেলা না হয়, সে কারণে আজকের জুমার দিনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।"
এ নিয়ে উত্তেজনা থাকলেও শুক্রবার জুমার নামাজের সময় বা পরে কোনো ‘অপ্রীতিকর ঘটনা’ ঘটেনি বলে জানান ওসি।
নামজের আগে স্থানীয় কাউন্সিলর আসিফ আহমেদ আগামী মসজিদ পরিচালনা কমিটির নির্বাচনে সকলের সহযোগিতা চেয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন।
ওই মসজিদে নিয়মিত নামাজ পড়েন- এমন কয়েকজন জানালেন, মসজিদের বর্তমান পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনীর সাঈদ দেড় যুগের বেশি সময় ধরে একই পদে আছেন। এ নিয়ে আরেক পক্ষের ক্ষোভ আছে।
স্থানীয় বাসিন্দা সালাম মোল্লা সম্প্রতি থানায় এক লিখিত অভিযোগে বলেন, মসজিদ কমিটির সভাপতি কাজী মোজাম্মেল হক এবং সাধারণ সম্পাদক মুনীর সাঈদ ‘এককভাবে’ মসজিদ চালিয়ে আসছেন। ২১ সদস্য কমিটি থাকলেও কোনো মিটিং হয় না এবং ‘যাকে যখন ইচ্ছা’ খাদেম নিয়োগ দেন তারা।
“নানা ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে এই দুইজনের বিরুদ্ধে, কিন্তু প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম বলে তারা পার পাওয়ার চেষ্টা করেন। এসব কারণে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা ক্ষোভ গত জুমায় প্রকাশ পেয়েছে।"
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মুনীর সাঈদ বলেন, তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হলে যে কোনো শাস্তি তারা ‘মাথা পেতে নেবেন’।
তার দাবি, একটি মহল মসজিদ এবং আশপাশের জায়গা থেকে ‘সুবিধা নিতে’ তাদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ এনেছে।
তবে কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম অনুসরণ না হওয়ার কথা তিনি পরোক্ষভাবে স্বীকার করেন।
মুনীর সাঈদ বলেন, তাদের কোনো গঠনতন্ত্র নেই। নিজেরাই একটি কমিটি করে একজন মন্ত্রীকে দেখিয়ে তার সুপারিশে স্থানীয় সংসদ সদস্যের অনুমোদন নিয়ে থাকেন। এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে মসজিদ পরিচালনা কমিটি গঠন চলে আসছে।
স্থানীয় কাউন্সিলর আসিফ আহমেদ জানান, গত ২৮ এপ্রিল জুমার দিন চরম উত্তেজনার মধ্যে নামাজে বেশ বিলম্ব হয়। নামাজের জন্য তিনি তখন তৃতীয় তলায়। পরে হট্টগোল শুনে নিচে নেমে এসে পরিস্থিতি সামাল দেন।
"পরে তারা দুই পক্ষ স্থানীয় পুলিশের উপ কমিশনার আজিমুল হকের কাছে যান। তিনি নতুন ভোটার তালিকা করে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার পরামর্শ দেন।"
মসজিদ পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি খশরুল আলম চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মসজিদের ২১ সদস্যের কমিটির দুই-তিন জন বাদে অন্য সদস্যরা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে ‘অনাস্থা’ এনেছেন। কিন্তু তারা নানাভাবে ‘প্রভাব খাটাচ্ছেন’।
“বিষয়টি নিয়ে আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যর কাছে অভিযোগ করেছি। এছাড়া সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে প্রায় তিনশ মুসল্লির গণস্বাক্ষর লিপি সংসদ সদস্য, কাউন্সিলরসহ সকলকে দেওয়া হয়েছে।”
স্থানীয় সংসদ সদস্য সাদেক খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার কাছে একটি কমিটি আসে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সুপারিশের ভিত্তিতে তিনি ওই কমিটি অনুমোদন করেন।
সম্প্রতি নতুন করে ওই কমিটিকে অনুমোদন দেওয়ার পরেই মূলত গত ২৮ এপ্রিল জুমার নামাজে হাঙ্গামা হয় বলে পুলিশের ধারণা।
সংসদ সদস্য মনে করেন, দুই পক্ষের আলোচনায় এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।
এক প্রশ্নের জবাবে মুনীর সাঈদ জানান, কবে নির্বাচন হবে সে বিষয়ে এখনো তারিখ ঘোষণা হয়নি। তবে ভোটার তালিকা তৈরির কাজ শেষ হলে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হবে।