ডিএমপি জানিয়েছে, শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ঢাকার ২৮ থানায় স্বল্প পরিসরে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে।
Published : 09 Aug 2024, 03:19 PM
গণআন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকার পতনের সঙ্গে সঙ্গে যে পুলিশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল তা পুনর্গঠনে কাজ শুরু হয়েছে।
শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। থানার নিরাপত্তায় পুলিশের পাশাপাশি সেনা সদস্যরা কাজ করছে, সঙ্গে দেখা গেছে আনসার সদস্যদের।
থানার কার্যক্রম শুরুর আগে তেজগাঁও থানা পুলিশের সহায়তায় স্থানীয়দের সঙ্গে বৈঠক করেছে সেনাবাহিনী। সাধারণ মানুষ থানার কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর ২৫ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট কোম্পানি অধিনায়ক শাখাওয়াত খন্দকার।
তিনি বলেন, "আমরা স্থানীয়দের চিনি না। পুলিশের সহায়তায় সমাজের গ্রহণযোগ্য ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমাদের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। তেজগাঁও থানা এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি।"
তেজগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, "প্রথমে আমি স্মরণ করি, বিগত দিনে আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি, এরকম অনেক সদস্য এখন নেই। এখন আমার হৃদয় ভারাক্রান্ত। পুলিশে আমি আজ ২৩ বছর। একসঙ্গে কাজ করেছি, কিছুদিন আগেও আমার থানায় ছিল এখন সে নেই।
"আসলে আমার পুরো পুলিশ সদস্য পরিবার, সত্যিকারভাবে আমরা ট্রমাটাইজড। তার মধ্যেই আমরা জনগণের প্রয়োজনেই কাজ করি। আমাদের ব্যর্থতা আমরা অনেক সময় জনগণকে বোঝাতে পারি না। আজকেও ফিরে আসা জনগণের জন্যই। জনগণ প্রয়োজন বোধ করেছে, পুলিশ না থাকলে কী হচ্ছে, সেই প্রয়োজনেই ফিরে আসা।"
ওসি মহসীন বলেন, "জনগণকে বলব, আমাদেরকে আস্থায় নেওয়ার জন্য। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। এটা অস্বীকার করব না যে, আমাদের ভুল বা ব্যর্থতার জন্য আজকের এই অবস্থা। এগুলো ওভারকাম করে আগামী দিনে সত্যিকারে মানুষের প্রয়োজনে যাতে এই বাহিনী থাকতে পারে, আমি আমার সহকর্মীদের নিয়ে এই সেবাগুলো অব্যাহত রাখার চেষ্টা করব।"
ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) আজিমুল হক বলেন, "সামরিক বাহিনীর সদস্যরা আমাদের পুলিশ সদস্যদের বাঁচাতে এগিয়ে এসেছেন। মানুষের জানমাল রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।
"আজ আমরা সামরিক বাহিনীর সহায়তায় পুলিশের সকল কার্যক্রম শুরু করেছি। সকল নাগরিকদের কাছে অনুরোধ আপনারা থানায় আসুন। আপনাদের সেবা দিতে আমরা প্রস্তুত।"
কার্যক্রম শুরু হলেও তেজগাঁও থানায় থানায় উপস্থিত হয়েছেন অল্প কয়েকজন সদস্য, বাকিরা এখনও আসেননি। যারা এসেছেন তারাও আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে ভীত। কর্মস্থলে এসেছেন পরিচয় গোপন করেই।
উপ-কমিশনার আজিমুল বলেন, "তেজগাঁও বিভাগে ৬টি থানার মধ্যে ৩টি থানার কার্যক্রম পুরোপুরি চালু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত থানার স্বল্প পরিসরে কাজ চলছে। এরই মধ্যে থানাগুলোতে অনেক পুলিশ সদস্য কাজে যোগ দিয়েছে। বাকিরাও আসতে শুরু করেছে।”
ডিএমপি জানিয়েছে, শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ঢাকার ২৮ থানায় স্বল্প পরিসরে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী রমনা, শাহবাগ, নিউমার্কেট, কলাবাগান, ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, কোতোয়ালী, চকবাজার, সূত্রাপুর, ডেমরা, গেন্ডারিয়া, মতিঝিল, সবুজবাগ, শাহজাহানপুর, তেজগাঁও, শেরে-বাংলানগর, হাতিরঝিল, শাহ আলী, কাফরুল, ভাষানটেক, দারুসসালাম, রূপনগর, গুলশান, ক্যান্টনমেন্ট, বনানী, উত্তরা পশ্চিম, উত্তরখান ও বিমানবন্দর থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে ডিএমপি সদর দপ্তরের সামনে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান ফটক বন্ধ করে ভেতরে অবস্থান করছেন সাধারণ পোশাকে দুই পুলিশ সদস্য। তাদের একজন বলেন, “কমিশনার স্যার আসছেন, স্যারের সঙ্গে কয়েকজন ছাড়া আর তেমন কেউ অফিসে আসেননি।”
এদিকে ডিএমপি সদর দপ্তরের সামনে পুলিশকে কাজে ফেরার আহ্বান সম্বলিত প্লেকার্ড নিয়ে একাই অবস্থান করছিলেন নরসিংদী সরকারি কলেজের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী মো. তৌহিদুল ইসলাম রনি।
তিনি বলেন, “সন্ধ্যার পর দেখা গেছে, মিরপুর-মোহাম্মদপুরের দিকে ঢোকা যাচ্ছে না। বিভিন্ন জায়গায় চলাচল করা যাচ্ছে না। এখন পুলিশ যদি কর্মস্থলে ফেরে, আমরা অন্তত নিরাপদে একটু চলাফেরা করতে পারব। কয়েকজনের জন্যতো আর পুরো পুলিশ ডিপার্টমেন্টকে দোষারোপ করতে পারি না। আমরা চাই তারা দ্রুত দায়িত্বে ফিরুক।
“আন্দোলনের মধ্যে পুলিশ গুলি যেমন চালিয়েছে, তেমন দেখেছি অনেক পুলিশ সদস্য হেল্পও করেছে আমাদের। আমি নিজেও আন্দোলন করতে গিয়ে ভুক্তভোগী। আমি নিজেও মার খেয়েছি। কিন্তু দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে এখন সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তারা যোগদান না করা পর্যন্ত দেশে শান্তি ফিরবে না। আমরাও নিরাপদে থাকতে পারব না।”
ছাত্র জনতার বিপুল গণ আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার পর থেকেই দেশজুড়ে থানাসহ পুলিশের স্থাপনাগুলোতে একের পর এক হামলা হতে থাকে। নির্বিচারে আক্রমণ হতে থাকে থানায়, ভাঙচুর ও লুটপাটও করা হয় অনেক থানায়।
এসব হামলায় বহুসংখ্যক পুলিশ হতাহত হলে অন্যরা নিরাপদে সরে যেতে থাকেন। এতে করে নজিরবিহীন পুলিশবিহীন অবস্থা তৈরি হয় বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।