“আসামি একজন ব্যারিস্টার বিধায় কৌশলে জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন। তিনি অত্র মামলার ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন বলে সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যায়,” আদালতকে বলেছে পুলিশ।
Published : 27 Oct 2024, 06:43 PM
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে এক ‘হত্যাচেষ্টার’ মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
ঢাকার মহানগর হাকিম মো. সেফাতুল্লাহ রোববার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এদিন সুমনকে আদালতে হাজির করে তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর মডেল থানার এসআই আব্দুল হালিম। অন্যদিকে ব্যারিস্টার সুমনের পক্ষে আইনজীবীরা জামিন চেয়ে আবেদন করেন।
কারাগারে আটক রাখার আবেদনে বলা হয়, আসামি ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনকে পাঁচ দিনের পুলিশ রিমান্ডে পেয়ে মামলার ঘটনায় সম্পৃক্ততা ও ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটনের জন্য ‘দফায় দফায় ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ’ করা হয়েছে।
“দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদে উক্ত আসামি মামলার ঘটনার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেছেন। আসামি একজন ব্যারিস্টার বিধায় কৌশলে জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন। তিনি অত্র মামলার ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন বলে সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যায়।”
আবেদনে বলা হয়, “জিজ্ঞাসাবাদে আসামির দেওয়া তথ্য যাচাই বাচাই করে দেখা হচ্ছে। তথ্য যাচাই বাছাই শেষে প্রয়োজন হলে পরবর্তীতে পুনরায় তাকে পুলিশ রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হতে পারে। মামলার তদন্ত সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত আসামিকে জেল হাজতে আটক রাখা একান্ত প্রয়োজন। আসামি জামিনে মুক্তি পেলে পলাতক হওয়ার সম্ভাবনা আছে।”
গত ২১ অক্টোবর মধ্যরাতে ঢাকার মিরপুর-৬ এলাকা থেকে সুমনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন তাকে আদালতে হাজির করে হৃদয় মিয়া ‘হত্যাচেষ্টা’ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পুলিশের আবেদনের শুনানি করে সুমনকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত।
এ মামলার বাদী হৃদয় মিয়া মিরপুরের বাঙালিয়ানা ভোজ হোটেলের সহকারী বাবুর্চি। তিনি হবিগঞ্জের মাধবপুর ১০ নম্বর হাতিয়াইন ইউনিয়ন যুবদলের সিনিয়র সহ সভাপতি।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে গত ১৯ জুলাই গুলিতে আহন হন হৃদয়। সরকার পতনের পর গত ২৩ সেপ্টেম্বর মিরপুর মডেল থানায় তিনি এই হত্যাচেষ্টা মামলা করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ঘটনার দিন মিরপুর-১০ নম্বর গোলচক্করে কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের ‘ক্যাডাররা’ লোহার রড, হাসুয়া, পিস্তল, আগ্নেয়াস্ত্র, রামদা নিয়ে শিক্ষার্থীদের শাস্তিপূর্ণ সমাবেশে বেপরোয়া আক্রমণ শুরু করে।
“আসামিরা অস্ত্র দ্বারা বাদীকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করে। বাদীর ডান পায়ের হাঁটুর উপরের বাটি গুলি লেগে দুই ভাগ হয়ে যায়। পরে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী কয়েকজন বাদীকে জাতীয় অর্থপেডিক্স হাসপাতালে নিয়ে যায়। বাদীর ডান পায়ের হাঁটুর ভেতরে গুলি থাকা অবস্থায় ১৩টি সেলাই করে পা বেঁধে দিয়ে তাকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
“বাড়িতে গিয়ে বাদীর অবস্থা খারাপ হওয়ায় এলাকার লোকজনের সহায়তায় তাকে ৩ অগাস্ট আবার পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং তখন তার বুলেটটি বের করা হয়।”
মামলার ৩ নম্বর আসামি ব্যারিস্টার সুমন সবশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জ-৪ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন।
ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন তিনি, তবে পাননি। পরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।