“যারা বড় জায়গা নিয়ে ভালো জায়গায় বসেছে। তারা এ মওসুমে লাখ টাকাও কামাইতে পারবে।”
Published : 16 Jun 2024, 10:11 PM
রাজধানীর বিজয় সরণি এলাকায় গো খাদ্য বিক্রি করছেন আলমগীর হোসেন ও তার সঙ্গীরা। ঈদের আগের দিনের জন্য প্রস্তুতি একটু বেশিই তাদের। মিরপুরের বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে পিকআপে করে খড় এনেছেন। আশায় আছেন সবই বিক্রি হয়ে যাবে।
এর আগে শনিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত দেড়শত পিসের মত খড়ের আঁটি বেচেছেন। প্রতিটির দাম ২০ টাকা। ভুসি বিক্রি করছেন ৭০ টাকা কেজি দরে। চটের দাম ২৫০ টাকা।
কোরবানির পশু কিনে ফেরার পথের ক্রেতাদের বাইরে আরও কিছু ক্রেতা জুটেছে তাদের। যারা রাস্তায় হেঁটে হেঁটে বিক্রি করছেন এমন কিছু মওসুমি বিক্রেতা একসঙ্গে অনেকগুলো করে কিনছেন। তাদের কাছ থেকে দাম কিছু কম রাখছেন আলমগীর।
মওসুমি এ বিক্রেতা আশা করছেন ঈদের আগের দিন রোববার কোরবানি পশুর হাট ফেরত ক্রেতা পাবেন বেশি; সবচেয়ে বেশি বিক্রিও হবে এদিন। এদিন সবার গরু কেনা শেষ হয়ে যাবে। তখন গো খাদ্যের খোঁজ শুরু হলে তাদের বিক্রি বাড়তে থাকবে। এজন্যই বিশেষ প্রস্তুতি নিয়েছেন আলমগীর ও তার চার অংশীদার।
আলমগীর বলেন, “আমরা বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে পিকআপ দিয়ে চারজন মিলে খড় কিনেছি। চারজন একসঙ্গে এই ব্যবসা করতেছি। এখানে দুই-তিনদিনে প্রায় অর্ধ লাখ টাকা আয় হবে বলে আশা করছি।
”বেচাবিক্রি ভালই। তাই শর্ট পড়ে যেতে পারে। শর্ট পড়লে আবার যাওয়া লাগবে খড় আনতে।”
তার ভাষ্য, কোরবানির হাটকে কেন্দ্র করে যেমন অনেকে মওসুমি এ ব্যবসা নিয়ে বসেছে। অনেকে আবার এলাকার মধ্যে বড় জায়গা নিয়ে ভালো জায়গায় বসেছে। তারা এ মওসুমে লাখ টাকাও কামাইতে পারবে। একসঙ্গে অনেকগুলো কিনে আনলে সস্তায় পাওয়া যায়।
কোরবানি ঈদের শেষ দিনে রাজধানীর গরুর হাটগুলো যেমন জমে উঠেছে, তেমিন বেচাকেনার ধুম পড়েছে খো-খাদ্যেরও। বেচা-বিক্রির ব্যস্ততা বেড়েছে আলমগীরের মত মওসুমি বিক্রেতাদের; আয়ও হচ্ছে ভালো।
যারা পশু কিনেছেন, তারা কোরবানির আগে পর্যন্ত সেগুলোর জন্য কিনছেন গো-খাদ্যও। এতে হাটের পাশাপাশি জমে উঠছে গো-খাদ্যের বাজারও।
রাজধানীর বিভিন্ন গরু হাটের আশপাশে তো এমন বাজার বসেছে, বিভিন্ন অলি-গলিজুড়ে গো খাদ্য বিক্রেতাদেরও ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। খড়, ভুসি ছাড়াও কাঁচা ঘাস, কাঁঠাল পাতা বিক্রি করতে দেখা গেছে তাদের।
তেজগাঁও এলাকায় ব্রিজের নিচে ভুসি ও বাঁশের চট নিয়ে বসেছেন নূর আলম। তিনি ভুসি ৭০ টাকা ও বাশের চট বিক্রি করছেন ২০০ টাকায়। বললেন, “বৃহস্পতিবার বসছি এখানে। চার দিন বিক্রির সুযোগ আছে। সবসময় লেবারের কাজ করি। এখন ঈদের জন্য কাজ বন্ধ। তাই বইসা না থাইকা এই চার দিনের জন্য এই ব্যবসা ধরছি। বেচা কেনা খুব বেশি একটা হচ্ছে তাও না।“
একই এলাকার এতিমখানা রোডে ইয়াসিন আহমেদ বসেছেন খড়, ঘাস ও বাঁশের চাটাই নিয়ে৷ অন্য সময়ে চা বিক্রি করেন। এখন চাহিদা বিবেচনায় স্বল্প সময়ের এ ব্যবসায় নেমেছেন বলে জানালেন।
এক আঁটি ঘাস ৩০ টাকা ও খড় ২৫ টাকা করে বিক্রি করছেন তিনি। শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ৪৫টি ঘাসের আঁটি ও ৫২টি খড়ের আঁটি বিক্রি করেছেন তিনি।
কোরবানির ঈদকে ঘিরে বিক্রির পাশাপাশি গো-খাদ্যের দামও বেড়েছে। বুটের ভুসি প্রতিকেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, গমের ভুসি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, গমের ছাঁটাই ৭০ টাকা, খুদ ৬০ টাকা ও কুঁড়া বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়।
এছাড়া ডাবলি ৮০ টাকা, ভুট্টা ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, কালাই ৭০ টাকা ও খড় ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে হাটে ও শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে।
ক্রেতারা বলছেন, গতবারের তুলনায় এবার গো-খাদ্যের দাম বেড়েছে অনেক।
আজাহার উদ্দিন নামের একজন বললেন, যতদূর মনে পড়ে গতবার খড়ের কেজি ছিল ৫০ টাকা। এবার এক মুঠির দামই ৩০ টাকা। এত পাতলা যে ৩টার বেশি লাগবে এক কেজি বানাতে। দাম বেড়েছে ভুসি, ভুট্টা কিংবা ডাল সবকিছুরই।
এসব গো-খাদ্যের বাইরে কাঁচা ঘাস ও পাতা বিক্রি হচ্ছে নগরীজুড়ে। গাবতলী হাটে ১০ টাকা করে পাতা ও ঘাসের আঁটি বিক্রি করছেন ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সী আরিফ, কবির ও সালমান।
তারা শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মোট ৯২০ টাকা আয় করেছেন। আশপাশের গাছ থেকে সংগ্রহ করেছেন পাতা। হাটে বিক্রেতা ও ক্রেতা উভয়েই তাদের কাছ থেকে কিনছেন।